সুজাতা দাস, লেখিকা ও সমাজকর্মী, কলকাতা:

থ্যাঙ্কস আঙ্কেল-

ওয়েলকাম বেটা-

আপনে থ্যাঙ্কস কিউ বোলা?

আপ হামে ব্লাড যো দিয়া-

ম্যয় তো কভি ব্লাড ডোনেট নাহি কেয়া বেটা!

আগলে বার কর দেনা ঔর কিসিকো মিল জায়েগা--

এটা একটা অ্যাড্ আমরা প্রত্যেকেই এই অ্যাডটা কম বেশি সকলেই দেখেছি-

আপনিও দেখেছেন-

কিন্তু রক্ত দিয়েছেন কখনও?

হ্যা আপনাকেই বলছি; দিন রক্ত কিছু অসহায় শিশুর জীবনের জন্য- যদি আপনি সুস্থ হন তাহলে অবশ্যই দান করুন এই বাচ্চা গুলোর জন্য।

হ্যা-একদম ঠিক ধরেছেন আমি থ্যালাসেমিয়া সম্বন্ধে কিছু বলবো। যদিও এই ব্যপারে কিছু বলার মতো আমি নিজেও জানি না। তবুও-বিবাহ দিতে তৈরি পিতামাতাকে বলছি আপনাদের সন্তানকে বিবাহ দেবার পূর্বে একবার রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। যাতে নতুন কোনও শিশু জন্মের পরে এই রোগে আক্রান্ত না হয়। আপনাদের ভবিষ্যত বংশধর যাতে সুস্থ ভাবে এই পৃথিবীতে আসেন তার জন্য জরুরি (হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস) নামক রক্ত পরীক্ষা। অবশ্যই করিয়ে নিন-যেন আপনাকেও একই কষ্ট ভোগ করতে না হয়।

আসলে কিছু কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির ভয়ে অথবা বিয়ে হবে না, এর পরিপেক্ষিতে সকলে এই রক্ত পরীক্ষাতে পিছিয়ে যান। এটা শুধু গ্রামের অশিক্ষিত পরিবার গুলোতে নয় শহরের অনেক শিক্ষিত পরিবারেও এগুলো দেখা যায়। শুধু বিশদে না জানার কারণে এই অনর্থ ঘটিয়ে ফেলেন আর ঠাকুরকে দোষারোপ করে চলেন প্রতিনিয়ত। আর প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ তো এতটাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন যে এই অসুখের উপসর্গ গুলো ঘটতে থাকা কালিনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাবার কথা ভাবেন না; অজ্ঞতার কারনে ঝাড়ফুঁক- তাবিজ কবচ- মন্দির মসজিদ করে বেরান। শেষের সময় যখন এই রোগের উপসর্গ বৃদ্ধির ফলে বাচ্চার অবস্থা শেষের পর্যায়ে পৌছায় তখন সেই অজ্ঞতার কারনেই স্ত্রী আর সন্তানকে ফেলে পালিয়ে যান। ছোঁয়াচে ভয়ে এঁদের থেকে দুরে সরে যান পরিজনেরা- শুধু অজ্ঞতার কারনেই যখন এই সময় নিজের জনেদেরই বেশি পাশে থাকা দরকার।

এবার আসি কী কী উপসর্গ দেখা দেয়- প্রচন্ড ঠান্ডা লেগে যাওয়া আর সারতে না চাওয়া, অতিরিক্ত আয়রণ, হাড় প্লীহা বড় হওয়া, ত্বক হলদে হওয়া, দুর্বলতা, সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট- মুখের হাড়ের বিকৃতি, হৃদপিন্ডে সমস্যা- গাঢ় রঙের প্রস্রাব ও পেট বেড়িয়ে যাওয়া। এগুলোর কোনও একটা উপসর্গ দেখা গেলে অবশ্যই নিকট স্বাস্থ্য কেন্দ্র গিয়ে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো চলুন। থ্যালাসেমিয়ার প্রধানত দুই ধরন- আলফা ও বেটা; বেটার তীব্রতা আলফার থেকে অনেক বেশি- তাই সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে শিশুর মৃত্যু অবধারিত।

সারা বিশ্বে এক লক্ষেরও বেশি শিশু প্রতিদিন জন্ম নেয় এই অসুখ নিয়ে এবং প্রতিটি শিশু বছরে বারো বার রক্ত নেয়- একজন সুস্থ রক্ত দাতা বছরে চারবার রক্ত দিতে পারেন মাত্র; মাথাপিছু গড়ে একটি থ্যালাসেমিয়া রুগির জন্য চারজন দাতার প্রয়োজন পরে। শুধু মাত্র ঠিক সময়ে রক্ত না পাওয়ার কারনে কত শিশু মারা যায়- পরিসংখ্যানে চমকে উঠতে হয়। আবার বারবার রক্ত নেবার ফলে রক্তে লোহার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া একটা পার্শপ্রতিক্রিয়া হয়; সেই লোহার মুক্তির জন্য আবার আয়রণ চিলেশন থেরাপী অবশ্যই করতে হবে, না হলে এখানেও মৃত্যু অবধারিত। থ্যালাসেমিয়ার একমাত্র চিকিৎসা হলো অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন-আর সব থেকে সহজ উপায় হলো কোনও বাচ্চাকে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাতে না দেওয়া।

এই থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়তে হলে সবার আগে যেটা আপনাকে করতে হবে - ছেলে মেয়ে বিয়ে দেবার আগে সেই ছেলে মেয়ের অবশ্যই- হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস নামক রক্ত পরীক্ষা করান। তাতে একজন সুস্থ বংশধর আপনার উঠোনে খেলা করতে দেখবেন। শুধু ওই পরিবারের আর্থিক অবস্থা দেখবেন না। শুধু দেখুন আপনার সুস্থ বংশধর। এক জন যদি বাহক হন তবে সেই পরিবারে একটি মানে ২৫% জন্ম নেবেই সন্তান বাহক শিশু জন্ম নেবে শতকরা ৫০% আর ২৫% সুস্থ বাচ্চা হবার সম্ভবনা থাকবে। তাই বিবেচনা আগে করুন যাতে আপনি পরে নিশ্চিন্তে দিন কাটাতে পারেন।

আমার একটাই নিবেদন অবশ্যই সবকিছু জানার পরই সম্পর্ক তৈরি করুন। আসুন আজ সকলে মিলে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি নিই হাতে হাত মিলিয়ে। আর আপনি যদি সত্যিই সুস্থ হন অবশ্যই আপনার অমূল্য রক্ত দান করে একটা শিশুকে অন্তত কিছুদিন এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচার সুযোগ করে দিন প্লিজ...

(www.theoffnews.com - thalassemia)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours