দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
তদন্তকারী মহিলার সামনে অভিযুক্ত অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেছিলেন, চার্জশিট দিয়ে না ডাকার অর্থ কি? কি জবাব দেব। আপনার সাথে "খোশ গল্প" করে গেলাম। এটাই যথেষ্ট। আর যাই কোথা অর্থনীতি অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাথে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সাপে নেউলে সম্পর্ক। এই "খোশগল্পের" অর্থ যাইহোক, কথা কানে যেতেই তদন্তকারী মহিলা পাঠভবনের অধ্যক্ষা বোধীরূপা সিনহাকে উপাচার্য নির্দেশ দিলেন অভিযোগ লিখিত আকারে পেশ করতে। সেই অভিযোগ পত্র উপাচার্য পাঠিয়ে দিলেন ইন্টারন্যাল কমপ্লেন্ট কমিটির চেয়ারপার্সন শকুন্তলা মিশ্রর কাছে বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। তিনি কোনো শোকজ না করে অভিযুক্ত অধ্যাপক সুদীপ্তবাবুকে আত্মপক্ষ সমর্থণে তাঁর বক্তব্য রাখার জন্য হাজির হতে বললেন। সুদীপ্তবাবু কলকাতা উচ্চ আদালতের কড়া নাড়লেন। তার ফলশ্রুতিতে আদালত বিশ্বভারতীকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করলো গত আঠাশে জানুয়ারি। সেই অর্থ কলকাতা স্থিত ভারত সেবাশ্রমকে জমা দিতে বলা হয়েছে। পাঁচ সপ্তাহ পর এই মামলার শুনানি হবে এবং তারপর "খোশ গল্প" মামলার রায় দান হবে। এখন প্রশ্ন এই খোশ গল্প যিনিই করুন না কেন, তার অর্থ দণ্ড কে দেবেন? আপাতত দশ হাজার টাকা সাময়িক জরিমানা। সেই অর্থ যদি বিশ্বভারতী নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়, তাহলে ফাইন্যান্সের অডিট বা ক্যাগের কাছে ধরা পড়বে। এই অর্থ যদি উপাচার্য নিজের পকেট থেকে দেন, তাহলে তাঁর মনে হতে পারে অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য গল্প করলেন অভিযোগকারিনী বোধীরূপা সিনহার সাথে, আর তার পেমেন্ট আমি কেন দেব? আদালতের পর্যবেক্ষণ প্রকাশ্যে আসতেই এমন অদ্ভুরে "খোশ গল্প" এখন আশ্রমের অন্দরেই।
"খোশ গল্পের" সমার্থক প্রতিশব্দ যৌন নিগ্রহ অভিধানের কোথাও না থাকলেও, এই শব্দ বন্ধকেই হাতিয়ার করে তদন্তকারী মহিলার সাথে অশালীন যৌন নিগ্রহের দায়ে অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে ফাঁসাতে হয়তো মোক্ষম অস্ত্র ভেবেছিলেন উপাচার্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই হাস্যকর অভিযোগ কতটা অমর্যাদাকর তা সবার কাছেই পরিস্কার। কলকাতা হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে পরিস্কার ভাষায় এই অভিযোগকে আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছে। শুধু তাই নয়, হলফনামা জমা দিতে বার বার ব্যর্থ হওয়ায় আদালতের ভৎর্সনার মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী। তাঁকে আরও পনেরো দিন সময় দেওয়া হয়েছে হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য। তবে এই বিলম্বের কারণে কলকাতা উচ্চ আদালত বিশ্বভারতীকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
উল্লেখ্য, সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বভারতীর পক্ষে অবমাননাকর পোস্ট করার অভিযোগে ২০২০ সালের ৪ অগাস্ট অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে তদন্তকারী আধিকারিক তথা পাঠভবনের অধ্যক্ষা বোধীরূপা সিনহার কাছে হাজির হতে বলা হয়। আর সেখানেই উঠে আসে "খোশ গল্প" প্রসঙ্গ।
২০২০ সালের ৬ অগাস্ট গোটা বিষয়টি উপাচার্যর কাছে তাঁর নির্দেশ ক্রমে লিখিত আকারে জানান বোধীরূপা সিনহা। তার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৪ অগাস্ট হিন্দি বিভাগের অধ্যাপিকা তথা আই সি সি অর্থাৎ ইন্টারন্যাল কমপ্লেন্ট কমিটির চেয়ারপারসন শকুন্তলা মিশ্র "খোশ গল্পকে" শব্দ বন্ধকে যৌন নির্যাতন হিসেবে ধরে নিয়ে ২০২০ সালের ১৪ অগাস্ট অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে তদন্তের জন্য হাজির হতে বলেন। তারপর অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে তদন্ত প্রক্রিয়াকে আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আদালত এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে আদালতে জবাব দিতে বলা হয়। যদিও তা বিভিন্ন সময়ে জবাব দিতে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ এবং ২০২২ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত সময় ভিক্ষা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী। আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে। ২৮ জানুয়ারি আদালতে এই বিলম্বের কারণে বিশ্বভারতীকে জরিমানা করে। অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, বার বার হলফনামা জমা দিতে ব্যর্থ হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আপাতত এই বিলম্বের কারণে বিশ্বভারতীকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। চূড়ান্ত রায় এখন অপেক্ষায়।
(www.theoffnews.com - Kolkata High Court Visva Bharati University fine)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours