তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:

কলকাতায় সিঁথি বলে একটি জায়গা আছে, মানে সীমন্ত। যে রাস্তা সোজা গিয়ে দুই ভাগ হয়েছে, ওই ভাবেই গলি তৈরি হয়েছে, তাই জায়গার নাম সিঁথি, ঠিক যেন চুলের সিঁথির মতো। ডিকশনারী অর্থে সিঁথি, সিঁথা /বিশেষ্য পদ/ কেশবীথি; সীমন্ত; টেড়ি; মাথার চুল দুই ভাগে বিন্যস্ত করলে যে সরু রেখা পড়ে তা। ওই কারণেই সিঁথি মানে সরু গলি বোঝায়। কলকাতার বহু পুরোনো রাস্তার নাম এক সময়ে সিঁথি ছিল। সিঁথি হলো কলকাতার ২ নম্বর ওয়ার্ড।

সিঁথি সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে একটি সমৃদ্ধ নাম। এইখানেই বিদ্যাসাগর আসতেন প্রায় এবং সিঁথি হয়ে পাইকপাড়ায় আসতেন। এই সিঁথিতে থাকতেন যম দত্ত। পরিবারিক কলহ ও ঋণে জর্জরিত হওয়ার পর সিঁথির এই বাড়িতে থাকতেন।

যম দত্ত ছদ্ম নামে লিখতেন। ইনার বিখ্যাত বই যম দত্তের ডাইরি। ভালো নাম যতীন্দ্রমোহন দত্ত (১৮৯৪ – ২৪-৯-১৯৭৫)। কলিকাতা হাটখোলার দত্ত বংশের সন্তান।

এই সুলেখক তের বছর বয়সে পাণিহাটীর প্রাণনাথ এইচই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় দশ টাকা বৃত্তি পান। এমএসসি ও বিএল পাশ করে পরে অর্থনীতিতে। বি-এ পাশ করেন। ১৯২০ সালে স্যার সুরেন্দ্রনাথের সংস্পর্শে এসে রাজনীতিক্ষেত্রে উৎসাহী হন। ১৯৩৭ খ্রী. সম্পাদক হিসাবে হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন। ১৯৪১ খ্রী আদমসুমারীতে বঙ্গদেশে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ না সংখ্যালঘিষ্ঠ এ বিষয়ে বিস্তৃত গবেষণা করে অনেক বই লেখেন। হাইকোর্টের ব্যবহারজীবী। তিনি ইসলাম আইনে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। সংখ্যাবিজ্ঞানে গবেষণার জন্য ১৯৭৫ খ্ৰী. তিনি ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্ৰী’ উপাধি পান। ‘যমদত্ত’ ছদ্মনামে নানা পত্র-পত্রিকায় তিনি বহু গল্প, রঙ্গরচনা, প্ৰবন্ধ প্ৰকাশ করেছেন। বাংলাদেশের অনেক প্রাচীন পরিবারের কাহিনী, প্রাচীন নিয়ম তাঁর লেখায় বিধৃত হয়েছে। যুগান্তর পত্রিকায় ধারাবাহিক ‘সেকালের কথা’ তাঁর শেষ জীবনের উল্লেখযোগ্য রচনা।

এই বাড়িটি সাউথ সিঁথিতে অর্থাৎ দুই নম্বর ওয়ার্ড। দত্ত বাগানের আসল মালিক এই দত্তরা যাদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন নরেশ দত্ত ও হরিশ চন্দ্র দত্ত, এদের আদি বাড়ি পানিহাটিতে। কিন্তু এই যম দত্ত বহু বছর সিঁথির এই বাড়িতে ছিলেন ভাড়াতে।

সম্ভবত হৈমন্তী গোস্বামী ব্যানার্জী এই বাড়িতে উনাকে দেখেছিলেন ৬৯ থেকে ৭১ র মধ্যে। এই ঐতিহাসিক বাড়ি একবছরের মধ্যে ভেঙে ফেলা হবে, এটাই বাড়ির মালিক বললেন। অর্থাৎ যারা এরপর পাইকপাড়ার ইতিহাস লিখবেন এই বাড়ি আর দেখতে পাবেন না। উনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন  সেকালের বিখ্যাত চিত্রগ্রাহক ও সাহিত্যিক পরিমল গোস্বামী। যাঁর পুত্র ছিলেন সকলের জানা সুপরিচিত হিমানিশ গোস্বামী। বাকি উনার পুরো জীবন দর্শন ও পুরোনো কলকাতা সম্বন্ধে বহু লেখা  উনার ডায়েরিতে বর্ণনা করা আছে। এই বাড়ির ঠিকানা হল ৪৫ বিটি রোড, কলকাতা-৫০।

(www.theoffnews.com - Kolkata Sinthi)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours