দেবিকা ভট্টাচার্য, লেখিকা ও লেকচারার, চন্দননগর, হুগলি:
দুর্গাপুজো মানেই ঢাকের বাদ্যি, ধুনোর গন্ধ, জবা কুসুম। এখন তো মিডিয়ার দৌলতে প্রতিটি দিনের উল্লেখ করে শুভেচ্ছা বিনিময়। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সব দিনের আগেই 'মহা' শব্দ যোগ করে দিনগুলির গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা। এমনকি যেখানে জগদ্ধাত্রী পুজো চারদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনগুলিকেও একই নামে চিহ্নিত করা হয়। এ কিন্তু শাস্ত্র অনুমোদিত নয়, তাই এখানে পণ্ডিতবর্গের আপত্তি।
এ প্রসঙ্গে এও বলি, কোন্ কোন্ শব্দের আগে 'মহা' শব্দ দিলে তার অর্থ অশুভ বিষয় ইঙ্গিত করে। পণ্ডিতবর্গের তাই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে—
"শঙ্খে তৈলে তথা মাংসে বৈদ্যে জ্যোতিষিকে দ্বিজে।
যাত্রায়াং পথি নিদ্রায়াং মহচ্ছব্দো ন দীয়তে।।"—
শঙ্খ, তৈল, মাংস, বৈদ্য, জ্যোতিষী, দ্বিজ, যাত্রা, পথ এবং নিদ্রা শব্দের আগে কখনও 'মহা' শব্দ দেবেন না।
শাস্ত্রে বলে—"মহাবিপত্তারকত্বাদ্ গীয়তেহসৌ মহাষ্টমী।
মহাসম্পদ্দায়কত্বাৎ সা মহানবমী মতা।।" —
মহাশক্তির আবির্ভাবে শ্রীরামচন্দ্র রাবণকে বধ করে সীতাদেবীকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করেন। মহাবিপদ কেটে যাওয়ায় দুর্গাষ্টমীকে মহাষ্টমী এবং মহাসম্পদ লাভ হওয়ার জন্য দুর্গা নবমীকে মহা নবমী বলা হয়। দুর্গা পুজোর অষ্টমী এবং নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে যে পুজো অনুষ্ঠিত হয় তাকে আমরা সন্ধি পুজো বলি। অষ্টমী তিথির শেষ চব্বিশ মিনিট এবং নবমী তিথির প্রথম চব্বিশ মিনিট অর্থাৎ মোট আটচল্লিশ মিনিটের মধ্যেই পুজো সমাপন করার নিয়ম। পুরাণে আছে অষ্টমী - নবমীর সন্ধিক্ষণে রাবণের দশমুণ্ড ছিন্ন করেছিলেন রামচন্দ্র।
বৃহদ্ধর্মপুরাণে সন্ধিপুজোর মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে আরও বলা হয়—"অষ্টমীনবমীসন্ধিকালোয়ং বৎসরাত্মকঃ।তত্রৈব নবমী ভাগঃকালঃকল্পাত্মকো মম।।" — দেবীর বর্ষব্যাপী পুজোয় যে ফল হয় সন্ধিপুজোর অষ্টমীভাগের পুজোতে সেই ফল লাভ হয়। আর কল্পকাল পুজো করলে যে ফল লাভ হয়, সন্ধিপুজোর নবমীভাগের পুজোতে একই ফল লাভ হয়। সন্ধিপুজোয় দেবীর আবির্ভাব চামুণ্ডা রূপে। সন্ধিপুজোর সময় দীপমালা প্রদান এই পুজোর প্রধান অঙ্গ।
আসুন, আমরা শব্দ ব্যবহারে সংযত হই, দেবীকে দীপদানের মাধ্যমে আমাদের চারপাশের সকল আঁধার থেকে মুক্ত করার প্রার্থনা করি মহাষ্টমী এবং মহানবমীর সন্ধিক্ষণে।
(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)
(www.theoffnews.com - durgapuja sandhipuja)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours