দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
একজনের সাদা ধবধবে গোঁফ। আরেকজনের কলপ কালো। কিন্তু দুজনেরই মোটা গোঁফ। উপাচার্য বা অনুব্রত কেউ কম যান না। তাই বিতর্ক দুজনের পিছু ছাড়ে না। বোলপুরবাসী তা বিভিন্ন সময়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে অস্বস্তিতেও পড়েন।
এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের চোর আখ্যা দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আগেই অনুব্রতকে বাহুবলী বলেছেন। পাল্টা অনুব্রত 'অপদার্থ উপাচার্য' বলেছেন। তারও আগে 'পাগল' উপাচার্য বলেছেন।
তবে বিতর্কিত মন্তব্যে এখন সব থেকে বেশি ফর্মে আছেন উপাচার্য স্বয়ং। শুক্রবার রাত থেকে বেশ কয়েক কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যেখানে উপাচার্যের বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য সামনে উঠে এসেছে। যদিও এই সমস্ত ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি প্রতিবেদক।
বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো, উপাচার্যের আপ্ত সহায়ক তন্ময় নাগ সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা।
সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের প্রকাশ্যেই চোর আখ্যা দিয়েছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সঙ্গীত ভবনের থেকে প্রশ্নপত্র চুরি যাওয়ার ঘটনাকে সামনে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তাঁদেরকে চোর আখ্যা দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি উপাচার্য।
অধ্যাপকদের শুধু চোর আখ্যা দেওয়া নয়, এবার থেকে নিজেদের ডিপার্টমেন্ট বা ভবনের চুরি রুখতেও সক্রিয় হতে হবে অধ্যাপকদের বলেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এই বিষয়ে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা চেয়েছেন উপাচার্য।
এই ভিডিও ক্লিপে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম না করে তাকে "বাহুবলী" বলে কটাক্ষ করেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, "বাহুবলী"র জন্যই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ থানায় বিভিন্ন চুরির বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারছেন না। উপাচার্যকে আরও অভিযোগ করতে শোনা যায় যে, "বাহুবলীর" জন্য বিঘ্নিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সেই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন যে বিশ্বভারতীর বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা "বাহুবলীর" ভয়ে ভীত তাই তারা কোনও চুরির ঘটনা ঘটলে বা কোথাও নির্যাতিত হলে তারা থানাতে অভিযোগ জানাতে ভয় পায়। উপাচার্য অভিযোগ করেছেন যে নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে জানিয়েছেন যে তাদের নামে অভিযোগ দায়ের করলে তারা বাহুবলীর জন্য আর বাড়ি ঢুকতে পারবে না।
যদিও উপাচার্যের এই কটাক্ষের তীব্রভাবে জবাব দিয়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, "ওনার সাহস থাকলে আমার নাম উল্লেখ করে বাহুবলী বলুন। আমার সাহস আছে বলেই ওনাকে আমি বদ্ধ পাগল বলি। কলেজ খুলতে দিন ছাত্র-ছাত্রীরাই ওকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবে।"
এদিন ভার্চুয়াল বৈঠকের আরও একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেখানে উপাচার্যকে স্পষ্ট বলতে শোনা যায়, "সঙ্গীত ভবনে বিখ্যাত কীর্তনিয়া সুমন ভট্টাচার্যের চাকরি হয়েছে আমার জন্য। তাঁকে সঙ্গীত ভবনের অন্যান্য অধ্যাপক, অধ্যাপিকারা পছন্দ করতেন না।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে কি ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় থাকা দুই সিনিয়ার অধ্যাপকের আপত্তি সত্ত্বেও উপাচার্য জোর করে তাকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ করেছিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক আরও জোরালো ভাবে দানা বেঁধেছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে।
(www.theoffnews.com - Visva Bharati University Bidyut Chakraborty Anubrata Mondal)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours