দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
সঞ্চয়ের ভাঁড় ভেঙে অসুস্থ অসহায়ের সহায় আলিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তনীরা। শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে মানবতার নতুন পাঠ শেখালো আজকের ক্ষুদেরা। সেদিক থেকে আজকের দিনে তাঁরাই শিক্ষক যাঁরা দেন মানবতার পাঠ।
নানুর দক্ষিণ চক্রের আলিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের নিয়ে গঠন করে একটি প্রাক্তনী সংসদ যার নামকরণ করা হয় 'স্মৃতির পরশ।'
'উৎসাহ' নাম দিয়ে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। তার আওতায় কৃতীদের দেওয়া হয় 'রৌপ্য মুকুট' যা নজর কেড়েছে রাজ্যবাসীর।
তবে আজকের কথা ছাপিয়ে গেছে সেসব কাহিনী। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বদেশ চ্যাটার্জির অভিনব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি বছর বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা এক বছর ধরে সঞ্চয় করে থাকে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী। প্রত্যেকে খরচ বাঁচিয়ে তাদের নির্দিষ্ট ভাঁড়ে জমা করে। বছর শেষে শিক্ষক মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে ভাঁড় ভেঙে হিসাব করে দেখে তাদের সঞ্চয় কতো। সেরা ছাত্র-ছাত্রীদের পুরষ্কৃতও করা হয়। আর এই অভিনব প্রচেষ্টার নামকরণ করা হয়েছে 'আমার সঞ্চয় আমার সমৃদ্ধি'। এবার সঞ্চিত অর্থ সম্পূর্ণটাই তারা কীর্ণাহার শিবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র লোকনাথ দাসের হাতে তুলে দেয়। কারণ লোকনাথ দাস বিগত পাঁচ-ছয় মাস ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত।
চিকিৎসকদের মতে লোকনাথের একটি কিডনি সম্পূর্ণরূপে ও অন্যটি আংশিক বিকল হয়ে গেছে। গর্বিত প্রধান শিক্ষক জানান, 'ছাত্র-ছাত্রীদের এই সিদ্ধান্তে আমি আপ্লুত, আমাদের পরিশ্রম সার্থক হচ্ছে, বোধহয় সমাজ ঠিক পথেই এগোচ্ছে।' এরপর ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা করতে তিনি নিজেই গত শুক্রবার ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের পূর্ব মূহুর্তে 'স্মৃতির পরশের' সদস্যদের সাথে দাঁড়িয়ে থেকে লোকনাথকে চাক্ষুষ করেন। লোকনাথের মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় ছাত্রছাত্রীদের জমানো অর্থ। আলিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রী রাজকুমার মেটে, সৌমেন মেটে, আদিত্য মণ্ডল, রিয়া দাস, শুভম পাল, বর্ষা দাসরা লোকনাথের সুস্থতা কামনা করে এবং লোকনাথকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখে যে, সুস্থতার পর সে যেন তাদের সঙ্গে খেলতে যায়। সেদিন এই ঘটনায় চোখের জল বাধ মানেনি অনেকের। লোকনাথের মা দেবশ্রী দাস চোখের কোনা মুছতে মুছতে বলেন, 'ওরা অনেক বড়ো হোক।' নানুর দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভেন্দু চৌধুরী বললেন 'প্রায় ২৫ জন ছাত্র ছাত্রী তাঁদের জমানো অর্থ শিশুটির হাতে তুলে দিয়ে যে মহৎ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই সমাজে বিরল। এভাবেই শিশুদের মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়াবার মানসিকতা তৈরি হলে একদিন সত্যিই প্রকৃত সুস্থ সমাজ দেখতে পাব'। চণ্ডীদাসের স্মৃতিবিজড়িত নানুরের এই বিদ্যালয় আরও একবার জানান দিল, এখনও "সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই"।
(www.theoffnews.com - Krinahar Shibchandra High school)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours