মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:
প্রথম তোমার সাথে পরিচয় করিয়েছিল রুদ্র। ঋজুদা, তারপর তোমার বহু অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গী হয়েছিলাম ভটকাই, তিতিরদের সাথে। বইয়ের পাতায় পাতায় তখন বুঁদ হয়ে থাকতাম কখনও ঋজুদা আবার কখনও ঋভুর সাথে। এমনই তোমার লেখার জাদু যে পরিবারের কত ছেলের নাম যে ঋজু আর ঋভু রেখেছি তার ইয়ত্তা নেই। তখন তো ডিজিটাল যুগ ছিল না, তুমি ছিলে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই তোমার সাথে মনে মনে চলত কথপোকথন।
তারপর একটু একটু করে তোমাকে নিয়ে বড় হলাম কিন্তু মন পড়ে রইল গুগুনোগুম্বারের দেশে, টাঁড়বাঘোয়ায়, নিনিকুমারীর বাঘের কাছে। বাবা! কত জঙ্গল ঘুরেছ গো তুমি ঋজুদা! কি স্মার্ট তুমি। তুমিই তখন আমার কাছে আইডল পুরুষ।
তারপর একদিন সব ওলটপালট হয়ে গেল। কলেজে ক্লাসের ফাঁকে ডিউক দিয়েছিল বইটা। 'একটু উষ্ণতার জন্য।' সারারাত ঘোরের মত কেটেছিল। এভাবেও ভালোবাসা হয়! ব্যাস। আমি তোমার প্রেমে পড়লাম। এত অসম্ভব সুন্দর করে কেন ভালোবাসে তোমার সৃষ্ট পুরুষেরা? জানো তো পৃথুদা সেদিন থেকেই ঋজুদাকে শ্রদ্ধা আর তোমায় ভালোবাসলাম। তারপর লবঙ্গীর জঙ্গলের হলুদ বসন্ত পেরিয়ে বাংরিপোসির বাংলোয় দু রাত্তির কাটিয়ে ধীরে ধীরে কেমন যেন মোহগ্ৰস্ত হয়ে পড়ছিলাম। তোমার টান এত অমোঘ ছেলেবেলায় বুঝিনি। কোজাগরী পূর্ণিমায় জঙ্গলের অসভ্য গন্ধের ভেতর বারবার প্রেমে পড়েছি। তুমি না লিখলে জানতেই পারতাম না বনচারী জনজীবন। করৌঞ্জ ফুলের গন্ধ তেলে তোমার নারীরা কেমন অপার্থিব সুন্দর।
কতরকম করে তুমি ভালোবাসা শিখিয়েছ আমার মত অগনিত পাঠক/পাঠিকাকে। আমার মত যারা আজন্ম প্রেমিকা তারা চিরকাল তোমার সৃষ্ট এক বেপরোয়া, উদ্ধত খামখেয়ালি অথচ ভালোবাসার কাঙাল পুরুষের প্রেম চায়।
অথবা তোমাকেই চায়। কে জানে। আসলে তোমার লেখা চরিত্র আর তুমি কখন যেন এক হয়ে গেছ অগনিত পাঠকমনে। তুমি আসলে একটা ব্র্যান্ড। এক আকর্ষণ। এক উজ্বল নক্ষত্র যার ছটায় চোখে ধাঁধা লাগে।
আমার বালিশের পাশে, পড়ার টেবিলে, বুক শেলফে ছড়িয়ে রইলে চিরকাল। মনে মনে কতবার তোমার 'ছুটি' হতে চেয়েছি। সামনা সামনি কখনো দেখা হয়নি। বলা হয়নি ভালোবাসি। তোমার সৃষ্টি গুলো বুকে জড়িয়ে রাখবো চিরকাল। মনে মনে তো তোমার সাথে জঙ্গলে হেঁটেছি বহুবার। এখনো না হয় হাঁটবো কুর্চি বিছানো রাস্তায় কোয়েলের পাড় ধরে। মনে মনে।
অনেক ভালোবাসা দিলাম তোমায়।
অমৃতলোকে ভালো থেকো প্রিয় বুদ্ধদেব গুহ।
(www.theoffnews.com - Buddhadeb Guha)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours