শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

এন্ড্রু কুমো (Andrew Mark Cuomo)  নিউইয়র্কের ৫৬তম গভর্নর। যিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন। বিশেষ করে ট্রাম্পের যৌন কেলেংকারির বিষয়ে তিনি ছিলেন উচ্চ কন্ঠ। অদ্ভুত বিষয় হলো, সেই গভর্নর এন্ডু কুমো এখন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, নারীদের যৌন হয়রানী করার কারনে! আশা করি বুঝতে পেরেছেন কেন বিষয়টি সামনে আনলাম। সুযোগ ও তদন্তের অভাবে অনেকেই  হয়তো সৎ! 

আমাদের বাংলাদেশও পরীমনি ইসুতে এখন খুব ব্যস্ত। পরীমনির বাসায় অনেক বোতল মদ পাওয়া গেলো। তিনি কার সাথে, কখন, কোন বিছানায় শুয়েছেন সে খবরে পত্রিকাগুলো ছয়লাপ।  মিডিয়ার সুবাদে আমাদের কেবল এটা  জানার বাকি আছে, কোন ব্র্যান্ডের কনডম ব্যবহার করেছিলেন পরীমনির বিছানার সঙ্গীরা। 

পরীমনির বাসায় জমজমের পানি ও গঙ্গার জল থাকলেও কি মানুষ তা বিশ্বাস করতো? করতো না। তবে কেন এত মাতামাতি? দেশে কি আর কোন সমস্যা নেই! এ দেশে আজকাল বেকারত্ব, দারিদ্র্য অশিক্ষা কু-শিক্ষা কোন সমস্যা বলে মনে করা হয় না। কয়েকদিন আগে আগে এক ইয়াবা খোরকেও বলতে শুনলাম, "ছি! ছি! পরীমনি তো একটা  "খান^...কি মা^...গি" ও মদ খায়।" এ দেশে যেন কেবল পরীমনিই মদ খায়। আর কেউ খায় না। 

পরীমনি মদ পান করে এবং তার মদের লাইসেন্সও আছে। ইয়াবা খাওয়ারও কি লাইসেন্স পাওয়া যায়? যায় না। এ বিষয়ে আমরা এন্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে মনে হয়। গভর্নর কুমো তাও পদত্যাগ করেছেন। আর আমাদের দেশের ইয়াবা খোর সমালোচকরাও মদ খোরের সমালোচনা চলমান রেখেছে। এমননকি আমার পরিচিত একজন পরীমনিকে "বে^...শ্যা মা^...গী" বললেন। অথচ  তার বিরুদ্ধে যৌনব্যবসা করার অভিযোগ আছে!    মেনে নিলাম পরীমনি মন্দ নারী। কিন্তু যারা তার কাছে যেত তারা সাধু বনে গেলো কেমনে? আর এফডিসির কেউ কেউ এমন বয়ান দিচ্ছেন। মনে হয় তারা এফডিসিতে সিনেমা তৈরি, নাচ, গান করতে আসেননি। তারা যেন দেওবন্দ থেকে সদ্য পাশ করে এসেছেন মসজিদের ইমামতি করতে। আর সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র বিধংসী কাটপিসগুলো বানাতো ইহুদি নাসরারা! 

আমাদের বাংলাদেশে অনেকেই মহা খুশি তালেবানদের বিজয়ে! এরা ১৯৭১ বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাস দেখেও ততটা খুশি হয় না৷ আবার পাকিস্তান ভেঙ্গে ছিল বলে কেউ কেউ তো বেজারই! আমার ধারনা বাংলাদেশে যত অন্ধ তালেবান সমর্থক আছে। সারা দুনিয়াতেও তা নেই। কাবুলের বাইরে থাকা অন্ধ সমর্থকেরা মনে করে আমেরিকা পরাজিত হয়ে কাবুল ছেড়েছে।  আসলেই কি তাই? ভাগ্যিস বাংলাদেশি তালেবান সমর্থকেরা জানে না। আমেরিকা ও  তালেবানদের, এ অসম যুদ্ধে আরও ৩৬টি দেশ যুক্ত ছিলো, ন্যাটোর নামে। তবে দেশীও তালেবান সমর্থকদের জন্য দুঃখের সংবাদ এই যে, সেই ৩৬ দেশের মধ্যে তুরস্কও একটি। এই যে আমাদের দেশে যারা তালেবান সমর্থক তারা আবার ৯৯% এরোদোগানের ভক্ত! সেই এরদোগান কিন্তু ন্যাটোর হয়ে কাবুলেই ছিলো।

চীনের সাথে তালেবানদের সখ্যতা কি হঠাৎ করেই হয়েই গেলো? এ বিষয়টা অন্যদিন আলোচনা করা যাবে।

কেন আমেরিকা চলে গেলো? আমরা অনুমান করতে পারি,  

ক) আমেরিকা কাবুলে পরাজিত, তাই চলে গেছে।

খ) এ যুদ্ধে আমেরিকা অর্থনৈতিক লোকসানে পরেছে।

গ) আমেরিকা যা করার বা নেওয়ার অর্থাৎ তারা যে উদ্দেশ্য এসেছি তা পূর্ন হয়ে গেছে।

ঘ) আমেরিকা চাইছে যাতে চীনাকে আফগানিস্তানের মাঠে প্রকাশ্যে নামানো যায়। (আর পরে তারা বলবে, চায়না তু কাবুল আয়া নেহি তুঝ কো লায়া গ্যয়া।)

ঙ) আমেরিকা চাইছে না সন্ত্রাস একেবারে নির্মূল হোক! আমেরিকা কাবুল খালি করলে অনেক সন্ত্রাসী শক্তির উত্থান ঘটবে।  মহাশক্তিগুলোও প্রবেশ করবে। বিভিন্ন দেশ ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অস্ত্র কেনার ধূম পরবে। আমেরিকা অস্ত্র বিক্রি করবে। উপরে উল্লেখিত কারন গুলোর মধ্যে।

ঙ) এখানে যেটা  উল্লেখ করেছি, আমেরিকা চাইছে না সন্ত্রাস একেবারে নির্মূল হোক। এটাই আমার কাছে যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কেন না, আলকায়েদা নিস্ক্রীয়। তালেবানেরা আফগানিস্তানের গুহায় লুকোয় অথবা পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে। এরা লুকিয়ে থাকলে বা পালালে কি অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা হুমকির মুখে পরে না!

এই তালেবানদেরকে তৈরী করেছিলো কারা?  পাকিস্তান, আমেরিকা ও সৌদি আরব। পাকিস্তান ছিলো প্রকাশ্যে পেছনে ছিলো আমেরিকা ও সৌদী আরব। লক্ষ্য, দক্ষিন এশিয়া থেকে কমিউনিস্ট রুশদের তাড়ানো।  আন্তর্জাতিক রাজনীতির অ আ জানা লোকটিও তা জানে। আমেরিকা কাবুল থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়া মানে যে চলে যাওয়া নয়। মার্কিনীরা মাঝে মাঝে বিমান হামলা করেই তা জানান দিচ্ছে। মার্কিনীদের এই সৈন্য সরিয়ে নেওয়া  এবং বিমান হামলা, দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ যুদ্ধ খেলারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

লিখতে চেয়েছিলাম ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। তা লেখা হয়ে উঠলো না। এসব নিয়ে আজ লেখার কথাও ছিলো না। কিন্তু পরীমনি ইস্যু ও তালেবানদের নিয়ে প্রকাশিত নিউজফিড গুলোতে বাংলাদেশের আমজনতার কমেন্টস্ পড়ছি আর বিস্মিত হচ্ছি। ভাবছি এ কেমন প্রজন্ম পেল বাংলাদেশ। তাদের কমেন্টস পড়ে হাসবো না কাঁদবো তা ভেবে পাচ্ছি না। 

(www.theoffnew.com - Porimoni Bangladesh Taliban United States Afghanistan Andrew Cuomo)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours