সুকন্যা পাল, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতা:

প্রায় এক যুগেরও আগের কথা। রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একদা বলেছিলেন, "দুর্গাপুর বাস্তবে একটা সম্ভবনাময় এডুকেশনাল হাব হয়ে উঠেছে।" দুর্গাপুর সফরে এসে বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বছর খানেক পূর্বে মন্তব্য করেন, "দুর্গাপুর এমন একটা শহর যেখানে শিল্পের সঙ্গে শিক্ষার অগ্রগতি সমগ্র দেশের কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ।"

দুর্গাপুর আক্ষরিক অর্থে ভারতের রূঢ় শিল্পাঞ্চল হিসেবে সুপরিচিত। রাজ্যে উক্ত দুই মুখ্যমন্ত্রী এই শিল্পাঞ্চলে শিক্ষার পরিবেশ সম্পর্কে যে এতো গর্ব অনুভব করেছেন তার পরিকাঠামোগত বুনিয়াদ কিন্তু রচিত হয়েছিল প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট বছর আগেই।

এমনই এক সমসাময়িক কালে শিক্ষাসাথী জয়যাত্রার অন্যতম পুরোধা রূপে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, দুর্গাপুর'এর আত্মপ্রকাশ ঘটে এক স্থায়ী মাইলফলক হিসেবে। এ যেন শিল্পের অন্দরমহলে শিক্ষার বাহারি ঝাড়বাতির মতো হরগৌরী সহবাস। 

শুভ দিনটা ছিল ১৯৬৩ সালের ১ মে। তদানীন্তন এমএএমসি কারখানা কর্তৃপক্ষের একান্ত সহায়তায় অপথালমিক গ্লাস প্রোজেক্টের একটি শেডে এই স্কুলটির সূচনা হয় ক্ষণস্থায়ী পর্যায়ে। একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে স্কুলটি স্থানান্তরিত হয় এমএএমসি কারখানার টাউনশীপের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন ফাদার ডুবোয়ে।

অবশেষে স্থানের অস্থিরতার ঘোর কাটিয়ে ১৯৬৪ সালে এভিবি লিমিটেড কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দশ একর জমি পাওয়া সম্ভব হয়েছিল নিজস্ব নতুন স্কুল ভবণ নির্মাণকল্পে। কর্মসূচীর প্রারম্ভিক শিলান্যাস সূচিত হয় ১৯৬৬ সালে। পরের বছরেই এমএএমসি টাউনশীপ থেকে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, দুর্গাপুর স্থায়ীভাবে চলে আসে নবনির্মিত ভবণে।

অন্যদিকে, এই স্কুলের একটি প্রাথমিক শাখা ১৯৬৪ সালে চালু হয় ডিএসপি টাউনশীপের টেগোর হাউসে। এই শাখাটিও পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরিত হয় একই টাউনশীপের লালা লাজপত রাই রোড থেকে মীরাবাই রোগের আরও দুটি এলাকায়। অবশেষে ২০০৬ সালে এই প্রাথমিক স্কুল শাখাটিকেও সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, দুর্গাপুরের মূল পরিধির মধ্যে সংযুক্ত করা হয়।

১৯৮৮ ও ২০১৩ সালে যথাক্রমে স্কুলের সিলভার জুবিলি ও গোল্ডেন জুবিলি উৎসব পালন করা হয় মহা সমারোহে। স্কুলের তরফে ফাদার জেনিথ উইলিয়াম জানান, "আমাদের স্কুল অজস্র গরিমায় উজ্জ্বল। এরজন্য আমরা গর্বিত। ২০২৩ সালে আমাদের ডায়মন্ড জুবিলি বর্ষ। আমরা আশাবাদী, আগামীদিনেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরও বৃহৎ সাফল্যের সাক্ষ্য বহণ করবে।"

স্কুলটিতে মূলতঃ ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করানো হয়। শুধুমাত্র ছাত্রদের জন্য এই স্কুলে প্রাথমিক স্তর থেকে হায়ার সেকেন্ডারির নানা বিভাগের অধ্যায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এই স্কুলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাৎসরিক ক্রীড়া উৎসব পালিত হয় সারম্ভরে। এছাড়াও, ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় এই স্কুলের ছাত্ররা নানা সময়ে যথেষ্ট মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছে সমাজের নানা স্তরে।

হয়তো তাই, নানা পরিস্থিতির পরিক্রমায় ও রকমারি সময়ের অগ্নিপরীক্ষায় দুর্গাপুর শিক্ষা হাবের আঙ্গিনায় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল আজ কান্ডারীর সিংহাসনে আসীন। কিন্তু কেন? উত্তর একটাই। ধারাবাহিক নিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের হিমালয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল, দুর্গাপুর আজ যে প্রকৃতই শিক্ষার মানস-সরোবরে মানুষ গড়ার নন্দনকানন।

(www.theoffnews.com - St. Xeviars School Durgapur)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours