সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

মুকুল মুকুল আর মুকুল।

গতকাল থেকে রাজ্য রাজনীতির এখন একটাই হাই প্রোফাইল নাম মুকুল রায়। একইসঙ্গে আজকেই কিন্তু সবার অলক্ষ্যে বঙ্গ রাজনীতির একটাই করুণ বাস্তব নিয়তি লিখন রচিত হয়ে গেল, কফিনের পেরেকের নাম মুকুল।

সাম্প্রতিককালে মুকুল গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে গেলে এটাই স্পষ্টত সত্য যে, বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই অর্থাৎ আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে শুভেন্দুর বিজেপি প্রবেশের পরেই মুকুল পর্ব নতুন খাতে ফের রচিত হতে শুরু করে বাংলার রাজনীতিতে। সদ্য হয়ে যাওয়া রাজ্য ভোটে যেভাবে অধিকারীবাবু রাজ্য বিজেপি আন্দোলনের অলিখিত মুখ হয়ে উঠে আসছিল ঠিক একই গতিতে মুকুল তখন থেকেই পদ্ম ও ঘাসফুলের দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে শুরু করে। সেই খবর কিন্তু তখনই দিল্লি বিজেপির কাছে অজানা ছিল না। তাই ভোটের মুখে কৈলাশকে দিয়ে দলের সঙ্গে রায়বাবুর তালমিলটা ঠিক রাখলেও মুকুলকে কার্যত সাইডলাইনে বসিয়ে রাখে দিল্লি লবি। কারণ মুকুলের দোলাচল তাঁরা মানতে পারেনি।

তাই বিজেপিতে থেকেই মুকুল নিজের রাজনৈতিক কফিনটা নিজেই তৈরি করে ফেলে ভোট ভিড়ের লুকোচুরিতে। মুকুল প্রথমে অনুমানই করতে পারেনি যে শাহ মোদি তার থেকে অনেক বেশি চতুর ও ইনফোরমেটিভ। যখন বুঝলো ততক্ষণে সে কৃষ্ণনগর উত্তরের সাইডলাইনে পোস্টিং।

মুকুলও পাল্টা গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বিধানসভায় প্রথমদিন প্রবেশের পথে বিশেষ গেট ব্যবহার করলেন ঠিকই। কিন্তু এই লোকাল মার্কা চাণক্য-গুরুত্বকে মোটেই তোয়াক্কা করেনি নাড্ডা গ্রুপ। 

আচমকা শুভেন্দুকে আহ্বান করে ও পরশি অর্জুনকে ডেকে, দিল্লিতে তাদের ভিভিআইপি রাজনৈতিক তোয়াজ করে পরোক্ষে মুকুলকেই বুঝিয়ে দেয় গুজরাট জুটি, তোমার জন্য দরজা খোলা, তুমি যেতেই পারো তৃণমূলে। আর জেনে রাখ তুমি এই মূহুর্তে রাজ্য বিজেপির স্টেপনি চাকা ছাড়া আর কিছু নয়। তাই শুভেন্দুর দিল্লি সফর প্রকারন্তে মুকুলকে কালিঘাট যেতে বাধ্য করার একটা নিখুঁত খেলা হলো মাত্র।

এটাই সত্য, ভোটের আগে থেকে শুভেন্দু নামের ইগোর কারণে মুকুলের আগ বাড়িয়ে দুমুখো নীতিই মুকুলকে স্রেফ ডুবিয়ে দিল পদ্মপুকুরে। সুতরাং গতকালের মুকুলের তৃণমূলে যোগদানটা অনেকটাই আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা ছাড়া আর কিছু নয়।

মজার হল তৃণমূলে গিয়েও মুকুল কিন্তু নতুন করে এবার আর সুবিধা করতে পারবে না বলেই অনুমান। কয়েকটা হাতে গোনা পুরোনো চেনা লেজুর মুখোদের ফের দল ত্যাগ করানো ছাড়া। রাজনৈতিক পাশা খেলায় আজ মমতার মুকুলকে প্রকৃতই দরকার নেই। এটাই একতরফা বাস্তব। স্রেফ বিজেপি ভাঙানোটা উনার দরকার ছিল। সেটা এমনিই হতে থাকবে ক্ষমতার ভান্ড দেখিয়ে দেখিয়ে। মমতার নিজস্ব ক্যারিশমায়। আর অন্যদিকে মুকুলের টিকে থাকার প্রশ্নটাই এখন বড় প্রশ্ন তার নিজের কাছে। ফের দলবদলও আর এখনই কার্যত অসম্ভব তার পক্ষে। আর মমতা যখন বুঝে যায়, এই গরুর আর দুধ দেবার ক্ষমতা নেই তখন তাকে যে কি করে তৃণমূল সুপ্রিমো তা কিন্তু রাজ্যবাসী বারবার দেখেছে। এটাই যে মমতার নিজস্ব ঘরানা। সুতরাং বিজেপিতে থেকে নিজের কফিন প্রস্তুতকারক মুকুল তৃণমূলের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এবার নিজের বুকের পেরেকটা নিজেই মেরে দিলেন। বাংলার রাজনৈতিক ল্যাবরেটরিতে একটা নতুন রাজনৈতিক ফসিলের সেল গঠন এখন তাই শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

(www.theoffnews.com - Bengal politics Mukul Roy)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours