সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র আজ ত্রিখন্ডিত। কারণের উপলক্ষ্য, মাত্র দু'টি ধর্ম। হিন্দু ও মুসলিম। স্রেফ এইটুকু ধর্মাভিমান অনুভূতি এঁকে দিল তিনটে ভূখন্ডের পৃথক মানচিত্র। শুধু ওইটুকুর জন্য আজ তিনটি দেশ- ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। একদা আমরা সবাই ছিলাম প্রাণের পরিজন। ছিলাম হরিহর আত্মার প্রতিবেশী। অথচ আজ আমাদের পরিচয় হল, আমরা ভিনদেশী নাগরিক। আমি হিন্দু, তুমি মুসলিম। আমি মুসলিম, তুমি হিন্দু। বিশ্ববাসীর তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখতে পাচ্ছো, আজ কেমন কেমন আমরা আলাদা সীমান্তের পৃথক পৃথক বাসিন্দা।
অথচ এই হিন্দু ও মুসলিম, অর্থাৎ এই আমরাই হাজার হাজার বছর একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থেকে গিয়েছিলাম পরিপূর্ণ ভারত আত্মার একটা মাত্র হৃদপিন্ড হয়ে। পূর্ব পরাধীন ভারত ও পরাধীন ভারতে আমরা তো তখন একমাত্র হিন্দু ছিলাম না। ছিলাম না আমরা একমাত্র মুসলিম। আমরা তো সবাই তখন অন্তঃকরণে ছিলাম ভারতমাতার সম্প্রীতির বহুত্বের মধ্যে ঐক্যের পিঠোপিঠি একেকজন সন্তান।
শতাব্দী প্রাচীন দীর্ঘ সহযাত্রার আন্দোলনের পর আমরা ১৯৪৫ সালে প্রথম স্বাদ পেলাম স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয়ের। বিনিময়ে এই সহযাত্রাকেই সূর্যাস্তের অন্ধকার কফিনে চিরতরে শুইয়ে দিতে হল। আমাদেরকেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও। বাধ্য হয়েই। দ্বিজাতিতত্ত্বের পরিচয়ে আমরা কেউ হয়েই গেলাম হিন্দু। কারও পরিচয়ে শীলমোহর দিয়ে দেওয়া হল মুসলিম।
১৯৪৭ সালের ভিক্ষের স্বাধীনতা আমাদের টুকরো সার্বভৌমত্বে মুক্তির স্বাদ এনে দিল ঠিকই। কিন্তু আজীবনের জন্য কেড়ে নিল একজাতিতত্ত্বের সামাজিক সহাবস্থানের প্রাণ খোলা সুখ। তাই তো আজ আমরা কেউ ভারতীয়, কেউ বাংলাদেশী, কেউ বা পাকিস্তানীই ঠিকই। কিন্তু নিজেদের দেশেই, সরকারি তথ্যে তবু আজও আমরা থেকে গেলাম শতকরা হিসেবের সংখ্যালঘু হয়ে। সংখ্যাগুরু হয়ে। স্বাধীনতা প্রাপ্তির এতগুলো বছর পরেও।
পরাধীন ভারতের সমাজ সেদিন যে একাত্মতা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল স্বাচ্ছন্দেই, স্বাধীন ভারত কেন যে ভিন্ন ধর্মতত্ত্বের বীজকে নিজের মাটিতেই পুঁতে দিল একতরফাভাবে? কি লাভ হলো এতে? আদতে কি অমৃতভান্ড পেলাম এতে আমরা? জানি হে ভারতবিধাতা, এই দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রাপ্তির কথা মনে করে একান্ত নিভৃতে টানা ৭৪ বছর ধরে তুমি শুধু চোখের জল ফেলে গেলে। সারা গা তোমার তাজা রক্তে ভিজে চপচপ করছে এখনও। বিদ্বেষের কচকচানি বিষে তোমার কন্ঠ আজও নীলে গাঢ় নীল বর্ণ। সুরাহা তবু তো করতে পারলে না কিছুই। হায় রে হায়, অসহায়ত্ববোধ বোধ হয় একেই বলে।
তবে, দ্বিজাতিতত্ত্বের পুজারী ও ইমামের সংখ্যা কিন্তু দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে এই উপমহাদেশে। রীতিমতো ডঙ্কা পিটিয়ে। বুকের শিনা ফুলিয়ে। ভারতমাতা গো, তোমার আক্ষেপ কিন্তু ওরা খুব সহজেই ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে আজকাল। একই ফুৎকারের দামামা বাজছে বাংলাদেশে ও পাকিস্তানেও। তুমি কি শুনতে পাচ্ছো ওদের উল্লাস? ওদের কিন্তু একটাই স্লোগান, "জোর সে বাজাও শঙ্খধ্বনি দ্বিজাতিতত্ত্বের সমর্থনে। জিও জিও আজ যে আমরাই মুসলিম। কেয়া বাত কেয়া বাত আজ আমরাই তো হিন্দু।"
(www.theoffnews.com - Hinduism Muslimism India Bangladesh Pakistan)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours