দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

শুধুমাত্র একটা রাস্তা হলে রেলগেটের যানযট এড়িয়ে প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়া যাবে। কিন্তু কাকস‍্য পরিবেদনা!

মাথায় ছিল জামাই ষষ্ঠী। শুভদিন। জামাইরা শ্বশুর বাড়ি এসে হাতে হাত লাগিয়ে রাস্তা বানালো। ঠিক হয়েছিল পরের দিন হবে ষষ্ঠী। নইসুভা সংস্থা গ্রামের মানুষকে নিয়ে করলো সেই কাজ। তাতে যোগ দিল সেই জামাইরা! এমন কাজ করে থাকেন সংস্থার কর্ণধার সাধন সিংহ। আহ্ এ যেন বাদশাহী আংটি গল্পের ফেলুদা নিজেই আংটি সরালেন। রটলো আংটি চুরি গেছে! পুরোটাই আংটির স্বার্থে। এক্ষেত্রেও ধরে নিন রাস্তার স্বার্থে! আর কিছুটা আমাদের মতো সংবাদকর্মীর হাতযশ!

মূল ঘটনা রাস্তা খারাপ। এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি।

ঘটনাটি বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বরের ১ নং ব্লকের অন্তর্গত মল্লারপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের গোয়ালা গ্রামে। স্থানীয় সুত্রে খবর গোয়ালা গ্রামে রাস্তা বহু বছর ধরে খারাপ। গত দু-তিন বছরে সেটা আরও খারাপ হয়েছে। দীর্ঘদিন রাস্তার কোন সংস্কার না হওয়াতে একটু বৃষ্টি পড়লে আর গ্রামে ঢোকা যায় না। গ্রামের জামাইরা এটা বহু বছর ধরে দেখছেন। এবার জামাইষষ্ঠীতে তারাঁ ধনুক ভাঙা পণ রাস্তা সারাই করবেই করবে। গ্রামের ১৫-২০জন জামাই শ্বশুরবাড়ি যাবার রাস্তা ভালো করতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিজেরাই হাতে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রম দিলেন।

স্বাভাবিক ভাবেই জামাইষষ্ঠীর দিনেই শ্বশুরবাড়ির আসার রাস্তা তৈরিতে জামাইদের হাত লাগানোর ঘটনা জানাজানি হতেই রাজনৈতিক তরজার সন্নিপাত জ্বর এলো।  বিজেপি পরিচালিত মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েত ও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বীরভূম জেলা পরিষদ।

গোয়ালা গ্রামের জামাইদের দাবি, “গ্রামে আসার পথে এই রাস্তাটা খুবই দরকার। রাস্তাটার অবস্থা খুবই খারাপ। তাই গ্রামের সব জামাইরা মিলে এই রাস্তাটা ঠিক করছি। দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও রাস্তার কোনও উন্নতি হয়নি।” 

তারা আরও বলেন, “আমরা জামাই হয়ে যদি রাস্তা সারাইয়ের কাজে লেগে পড়ি তাহলে আরও মানুষ হয়তো বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে আসবেন।”

স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, “রাস্তার অবস্থা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। “অনেকে রাস্তা দেখে গেলেও কোনো লাভ হয়নি। জামাইরা যে কাজে করছে এটা আমাদের লজ্জা। বাইরে থেকে এসে তারা কাজ করছে। আসলে রাস্তার অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে তারা করছে।”

বিজেপি পরিচালিত মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমীর লোহার বলেন, “রাস্তাটি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। দেড় কিলোমিটার লম্বা মাটির রাস্তা পঞ্চায়েত সংস্কার করতে পারে না।”

যদিও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বীরভূম জেলা পরিষদের সদস্য ও কো-মেন্টর ধীরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “এই পঞ্চায়েত বিগত দু বছর উন্নয়নের বরাদ্দ অর্থের কিছুই খরচ করতে পারেনি। এই রাস্তা জেলা পরিষদের নয়, পঞ্চায়েতেরই নিয়ন্ত্রণাধীন। যারা কিছু জানে না তারাই মূর্খের মতো কথা বলে।”

রাজনৈতিক তরজা চলবেই। এই রাস্তা দীর্ঘদিন না হওয়ার দায় যারই হোক, জামাই ষষ্ঠী জানান দিল রাস্তা খারাপ। এনে দিল এক পর্যবেক্ষণের। মনে পড়ে যায়, পারসী লোকগাথার এক ছোট্ট গল্পের কথা। যেটি শুনলে মনে হবে বেঁচে থাক জামাইবাবারা! বেঁচে থাক এমন সুন্দর  পর্যবেক্ষণ। তাহলে শোনা যাক! 

এক রাজার উট হারিয়ে গেছে। রাজা তাঁর অশ্বারোহীদের সেটা খুঁজতে পাঠালেন। অশ্বারোহীরা এক মেষপালককে জিজ্ঞেস করল, উটটা দেখেছে কিনা।

মেষপালক জিজ্ঞেস করল, "উটটা কি ডানচোখে দেখতে পায় না?"

"হ্যাঁ, পায় না।"

"ওর সামনের বাঁ পাটা কি খোঁড়া?"

"ঠিক তাই।"

"আর সামনের দাঁতগুলির মধ্যে একটা কি নেই?"

"একদম ঠিক।"

"না, আমি ওটাকে দেখি নি", মেষপালক বলল।

"তবে রে মিথ্যুক!" রাজার অশ্বারোহীরা মেষপালককে বেঁধে রাজার কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, "মহারাজ, লোকটা বলছে উটটাকে দেখে নি, কিন্তু উটের হুবহু বর্ণনা আমাদের দিয়েছে।"

"কী ব্যাপার!" রাজা অসন্তুষ্ট হয়ে মেষপালকের উদ্দেশ্যে বললেন।

মেষপালক বলল, "মহারাজ, আমি জানি যে উটটার বাঁ চোখটা খারাপ, তার কারণ দুদিকেই চমৎকার ঘাস, কিন্তু উটটা শুধু ডান দিকের ঘাস খেয়েছে। ওর সামনে বাঁ-পাটা খোঁড়া, সেটা আমি মাটিতে ওর পায়ের ছাপ দেখেই বুঝতে পেরেছি। আর ফোকলা দাঁতের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি ওর ঘাস খাওয়ার ধরণ দেখে। দুপাশে ঘাস ঘাস চিবানো হয়েছে, কিন্তু মাঝে একটুখানি জায়গায় কামড় পড়ে নি। আমি মহারাজ, আপনার লোকদের দেখাতে যাচ্ছিলাম কোন দিকে উটটা গিয়েছে, তার আগেই ওরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে।"

(www.theoffnews.com - Birbhum road jamaishasthi)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours