দেবস্মিতা ধর, ফিচার রাইটার, কলকাতা:
আমি যেমন তার মা না হয়েও অপার ভালোবাসা বুকে রাখি তার জন্য তেমনি হে পোষ্য না হয়েও স্বাধীন প্রাণরূপে বিরাজ করে আমার মনের খাঁচায়। তো তাকে নিয়েই গল্প।
সেদিন ছিল মায়ের দিন। উদযাপনের আড়ম্ভর চোখে পড়ছিল চারিদিকে। আমি এমনিতেই আমার মায়ের পিওর অপদার্থ সন্তান, তখন লকডাউনের বাজারে সেটা আরও উদযাপিত মনে হচ্ছিল। মানে নিজেকে পিওর অপদার্থসূচক নিষ্কর্মা ছাগল মনে হচ্ছিল। এই অবস্থায় তো আমি এই মায়ের দিন পালনে যোগ দিতে পারব না। আমি অক্ষম। কিন্তু আমি মাতৃস্নেহ নিয়ে কিছু বলতে চাইছিলাম। হয়ত আমার জেন্ডার আমায় প্রভাবিত করছে এই বিষয়।
আমার এখনও অবধি কোনও ছেলেপুলে নেই, হওয়ার কারণ ও ঘটেনি অবশ্য। তাই এই মাতৃস্নেহ নিয়ে কি করে লিখব তা এক সুযোগ্য প্রশ্ন হতে পারে। অবশ্য এটাও বলে - "প্রসব করলেই..." যাক গে যাক, এসব গুরুতর কথায় না ঢুকে বরং শুধু স্নেহ নিয়ে বলি। একদম ঘরের কথা।
আমাদের বাড়িতে সে অর্থে কোনও পোষ্য নেই। পাঁচিলে কিছু বেড়াল আছে, তারা আমাদের বাড়ি ছাড়াও আরও আশপাশের দু-একটা বাড়িতে খেপ খাটে। তো তাদের ছানাপোনা ও হয়। ওই হারাধনের সন্তানের মতোই মেরেকেটে কিছু বাঁচে, কিছু এদিক-ওদিক ছিটকোয়, কিছু অ্যাডপ্টেড হয় চেনা-অচেনা দ্বারা। তো এরকমই এক ছানা আমার মায়ের বিশেষ করে প্রিয় হয়ে পড়ে। মা নাম দিয়েছে ফুটবল তার শারীরিক বর্ণের কারণে। এখনও খুব বড়ো হয়নি, মাঝে অসুস্থ ও হয়েছিল। তো সে মাঝেমাঝে ঢোকার এবং বৃষ্টি পড়লে রাত্রিবাসের অনুমতি পায় আমাদের ঘরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। তাছাড়া তার অতিরিক্ত চঞ্চলতা আমাদের মনোরঞ্জন করে। খেলা তার বড়োই প্রিয় এবং সে প্রায়ই আমাদের পর্দা ধরে ব্যক্তিগত সম্পত্তি জ্ঞানে ঝুলন যাত্রা করে। আমার মা হাস্যমুখে সে দৃশ্য উপভোগ করেন। আমি নিশ্চিত আমি ওমনি করলে আজ আপনাদের সামনে লেখার অবস্থায় থাকতাম না। ফুটবল দেখতে দেখতে আমার ও প্রিয় হয়ে গেছে। মাঝেমাঝে গায়ে, মাথায় হাত বুলোলে পায়ের মধ্যে ঢুকে আসতে চায়।
আজ সকালে মেজাজটা কিঞ্চিৎ উত্তপ্ত ছিল। ব্যাটা তখন দিদার ঘরে তাকাতাকি করছিল। প্রচণ্ড চিৎকার করাতে ছোট্ট প্রাণীটা পালাতে পথ পেল না। একটু পরেই খারাপ লাগা শুরু হল। অবলা জীবটা মানুষ নামক জটিল প্রাণীর মুড নিয়ে কিই বা জানবে। ডেকে আদর করলাম। দেখি জুলজুল করে চেয়ে আছে। তারপর দেখি নুলো দিয়ে আমার হাতে খেলাচ্ছলে মারতে আসছে। এখন ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাইরে থেকে ঘেঁটি ধরে ব্যাটাকে ঘরে আনলাম। আবার জুলজুল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজের হাত-পা চাটতে শুরু করলো। কি মনে হতে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললাম - "ভালো থাক রে ফুটবল"। আবার কিছুক্ষণ তাকিয়ে উত্তর আসলো - "মিয়াঁও"
পরম মমতায় ঝুড়ি থেকে ব্যাটাকে কোলে তুলে নিলাম।
(www theoffnews.com - mother pet cat)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours