শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

"রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ইদ" আজ ইদ। রমজানের এই ইদকে, ছোট ইদও বলে। কেবল বাংলাদেশে নয়, পাকিস্তানেও ছোটা ইদ বলে। ছোট বেলায় কোন কোন গ্রামে সেমাই ইদও বলতে শুনেছি। ইরান ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় ইদুল ফিতর বলে থাকে। সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, মালয়শিয়ার মুসলিমরা, হারি বায়া এদিল ফিতর বা হারি বায়া পাওসা বলে থাকে। রাশিয়ায় মুসলিমরা বলে উরাজা বায়রাম। যে দেশে যাই-ই বলুক, প্রকৃতপক্ষে এ ইদকে, ইদ উল ফিতর বলা হয়। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মাদ এই ইদ উল ফিতরের প্রচলন করেন, দশম হিজরি সনে তথা ৬২৪ খৃষ্টাব্দে। জঙ্গে বদরের পর প্রথম ইদ উল ফিতর উৎযাপন করা হয়েছিলো। হযরত মুহাম্মদ যখন মক্কা থেকে "ইয়াত্রিবে" হিজরত করেন। তখন, তিনি ইয়াত্রিবের বাসিন্দাদের প্রতিবছর দুটি উৎসব পালন করতে দেখেন। এক সময়, তিনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন, মুসলমানদের জন্যও যেন দুটো উৎসবের অনুমতি দেওয়া হয়। আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদের দোয়া কবুল করেন। সেই দুই উৎসবের একটি, ইদ উল ফিতর। স্মরণীয় হলো এটাই, "ইয়াত্রীব" এর বর্তমান নাম মদীনা। 

ইদ উল ফিতরের ইদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, ফিতরা (অল্পকিছু টাকা দান করা) তো দিতেই হয়। এছাড়া নামাজের আগেই যাকাত দেওয়া বাধ্যতামূলক। যাকাত হলো, আয়ের নির্দিষ্ট একটি অংশ (শতকরা আড়াই ভাগ) দরিদ্রদের দিয়ে দেওয়া। উল্লেখ্য যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। ইসলামের পরিভাষায় যাকাত নামাযের মতই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মুসলমান সঠিক ভাবে যাকাত-টা দেয় না। দিলেও কম দেয় এবং যাকাত যাদের দিতে বলা হয়েছে, তাদেরকে দেওয়া হয় না। 

রমজানের রোজা  যেমন শেষ হয় তেমনি সাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার প্রথম দিন ইদ উল ফিতর পালিত হয়। সাধারনত সৌদী আরবে ইদ পালিত হওয়ার একদিন পর বাংলাদেশ ইদ পালন করা হয়। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো, এইবার প্রথম সৌদী আরবের একদিন আগেই বাংলাদেশে কোথাও কোথাও ইদ পালন করার কথা শোনা গেল! এর আগে সৌদী আরবের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশে একই দিনে ইদ পালন করতো কোথাও কোথাও। অবশ্য এটা ব্যাতিক্রম। 

আমাদের দেশে ইদের নামাজ শেষে একে অপরের বাড়িতে "দাওয়াত" খেতে যায়। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি আসা যাওয়া হয়ে থাকে। ইদে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় শিশুরা। আরব রাষ্ট্রগুলোতে ইদে কেবল "দাওয়াত" খাওয়া হয় না। উমান, দুবাইয়ে ইদ উপলক্ষে বেলি ড্যান্সের আসরও বসে। তাছাড়া "তানোরা" নামে লোকউৎসবেও অংশ নেয়। তানোরাও এক ধরনের নাচ। যা তুরস্ক মিশরে আরব আমিরাতে জনপ্রিয়। ইদ সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের উৎসব। অবশ্য ইদের নামাজের পদ্ধতি একেক সমাজে ও উপসম্প্রদায়ে কিছুটা ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। প্রথম লাইনটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের " গজল" থেকে নেওয়া। আবার নজরুল তার কৃষকের ইদ নামের কবিতায় বলেছেন, 

"জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ /মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ইদ!" 

আজ ইদ, ইদ উল ফিতর। আজকের এই ইদ সকলের জন্য আনন্দের বার্ত বয়ে আনুক। 

(www.theoffnews.com - Eid-ul-Fitr)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours