সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

অতি সাম্প্রতিক কালের মানবতা বিরোধী দুটি ঘটনা ঘটে গেল। একটি আফগানিস্তানে। অপরটি ইজরায়েলের তালুবন্দি গাজায়। একটি স্থানে গাড়ি বোমার আঘাতের লক্ষ্য বিন্দু হল স্কুলের অজস্র কচিকাঁচা পড়ুয়ারার প্রাণ কেড়ে নেওয়ার আস্ফালন। অন্যটি কালো কুচকুচে ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশ বোম্বিংয়ের অভিষ্টস্থল ফিনিস্তীনি জনবাসের প্রতিশোধী দাম্ভিকতা। সেখানেও তাই কাতারে কাতারে মৃত শিশুর কবর খনন। 

হায় বিধাতা একি করুণ অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকলাম আমরা। ভিডিওতে বিশ্ববাসীর সঙ্গে আমরাও দেখলাম আমাদের আধুনিকতম এক সভ্যতার নিদর্শনকে। যেখানে সদ্য সন্তান হারা একদল মায়েদের কি চরম হাহাকারের পরিণতি। মূহুর্তে আমার পায়ের তলার মাটিটা কেঁপে উঠল। নিজেকে একটাই প্রশ্ন করলাম, "এ আমরা কোন পৃথিবীতে বাস করছি? যেখানে মাতৃ দিবসের সদ্য আগে-পরের আবহে গণ-মাকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় এভাবে চোখের জল ফেলতে হয়।"

আসল কথাটা হল এটাই, একাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের লালিত উগ্রবাদের জমানায় সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তিক দেশের মাটি অনবরত ভিজে চলেছে অগণিত মানুষের রক্তে। ধারাবাহিক পর্যায়ে। যে ক্ষয়িত রক্তে মিলেমিশে একাকার পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের গোবেচারা মানুষের সঙ্গে সাধারণ অজস্র মুসলিম ধর্মাবলম্বীর মিশ্র অসহায়ত্ব। আর ঠিক উল্টো পুরাণের অশ্রু ঝড়ে চলেছে ইজরায়েলের ইচ্ছে-তালুক গাঁজা ভূখণ্ড। সমগ্র পৃথিবী যেখানে মুসলিম টেররিজমের আঘাতে অনবরত দিশেহারা, ঠিক পাল্টা দৃশ্য তখন লাগাগার ঘটে চলেছে ইজরায়েল অধীকৃত ফিলিস্তিনি বসতিতে। দুনিয়ার এই একটি মাত্র জায়গা যেখানে একমাত্র আক্রমনের পিন পয়েন্ট হল ফিলিস্তিনি নামক মুসলিম ধর্মের মানুষ। একচেটিয়া ভাবে। সৌজন্যে বেঞ্জামিন নিতানিয়াহু সরকার। আর ইন্ধনের চাবিকাঠি ইহুদি মৌলবাদের নিরন্তর উস্কানি।

পৃথিবীর নানা প্রান্তে আজ শিখ, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি সহ একাধিক ধর্মীয় মৌলবাদ মাথা চারা দিয়ে উঠেছে। একথা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, মুসলিম মৌলবাদ বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে বড় দুঃচিন্তার কারণে পরিগণিত হয়েছে। দুনিয়ার সর্ববৃহৎ মৌলবাদের আঁতুরঘর হল মুসলিম উগ্রবাদের লালিত নেটওয়ার্ক। অপরদিকে, কি নিদারুন ছবিই না অহরহ আমাদের সামনে ভেসে ওঠে খবরের দুনিয়ায়। কি খবর শুনি? এটাই খবর, মৌলবাদীদের আক্রান্তে পৃথিবী জুড়ে সবচেয়ে বেশি নিশানা হচ্ছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বিরাট অংশের নরনারী। ওপরওয়ালার কি অদ্ভুত হিসেব! এই দুনিয়ায় সবচাইতে বেশি সংখ্যক মৌলবাদী হলেন মুসলিম উগ্রবাদে বিশ্বাসী। অথচ তাঁদের আক্রমণের লালসার শিকারের সিংহভাগই যে বিশ্বের শান্তিকামী মুসলিম সমাজ। সত্যি এ এক অবাক পরিহাস।

আফগানিস্তানের তালিবানিদের কাছে ও বেঞ্জামিন নিতানিয়াহুর কাছে আমার একটিমাত্র সবিনয়ে নিবেদিত প্রশ্ন আছে, "আফগানিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে যে মা সন্তান হারানোর শোকে বিহ্বল আর গাজায় ফিলিস্তিনি কোনও অচেনা মা কপালে হাত দিয়ে নিজের শিশুর মৃত্যুতে মূর্ছা যাচ্ছেন, এই দুই মায়ের বুক ভরা যন্ত্রণার মধ্যে কোনও ফারাক কি আপনারা অনুভব করতে পারছেন? যদি ফারাকের চাবিকাঠি পেয়ে যান, তবে আপন মস্তিতে চালিয়ে যান সন্ত্রাসবাদ দুই বাহু উত্তোলিত করে। আর যদি, প্রভেদ খুঁজতে ব্যর্থ হন, তবে একটিবার নিজেদেরকে জানতে চান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, আপনাদের এই রক্তাক্ত কৃতকর্ম পৃথিবীর কোন সৎকর্মটিকে সার্থক করে তুলল সফলতার সঙ্গে ও মানবতার শর্তে? কেন আপনারা বুঝতে পারছেন না, বোমার সপ্লিন্টারের ভেদ করা কলিজার আর্তনাদ এবং বন্দুকের ছড়রায় ঝাঁঝড়া হওয়া হৃদপিন্ডের ধুকধুকানি একইরকমের মর্মান্তিক পরিণতি বয়ে আনে শান্তি প্রিয় সাধারণ মানুষের শরীরে? যা আপনাদের দ্বারা সংঘটিত ঘটলেও বা উনাদের পক্ষ থেকে পরিচালিত হলেও। রক্তপাতের অভিশপ্ত অভিঘাত আসলে যে একই। পরিজনদের স্বজন হারানো হাহুতাশের ব্যঞ্জনাও যে একমাত্রিক। তা আপনাদের বারান্দায় ঘটুক বা আপনার বিপক্ষের আঙিনায় প্রতিফলিত হোক। বিশ্ববাসীর এই আর্তনাদের ভাষা যে এক, এক, এক। সিরিয়া, কেনিয়া, ইরাক, ইরান, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ঘানা, তুর্কি, ইয়েমেন, গাজা, মায়ানমার, উইঘুর, উগান্ডা আর কত জায়গার নাম বলি বলুন তো? শুধু নাম লিখতেই কিন্তু ক্লান্ত হয়ে পড়বো। কি মনে করেন আপনারা নিজেদের, যাঁরা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এভাবে বিশ্বকে অশান্ত করে চলেছেন আপনাদের স্রেফ মৌলবাদী জিগিরে, ওইসব এলাকার মানুষের আপনাদের প্রতি ঘেন্নার ঘনঘটা কি খুব আলাদা? উত্তর একটাই। না, না, না।

আপনাদের এই আজকের পৈশাচিক উন্মাদনায় পরিপূর্ণ এই মৌলবাদী মহীরুহে আসলে কি জাতীয় ফল ধরবে জানেন অদূর ভবিষ্যতে? সিরিয়ায় আইএসআই ছড়রায় নিকেষ করবে চারজন স্থানীয় বাসিন্দাকে। ইজরায়েলও পাল্টা সপ্লিন্টারে উড়িয়ে দেবে ছয় ফিলিস্তিনি। আবার কাবুলে তালিবান দশ বিদেশি নাগরিকের গলার নলি হয়তো কেটে ফেলবে। অদ্ভুত ভাবে একটু পরেই হয়তো শুনবেন মায়ানমারে সেনার টোটায় ষোলজন রোহিঙ্গা খতম হয়ে গেছে। সারা পৃথিবীকে তো কাঁদাচ্ছেন আপনারাই। হরদম কাঁদিয়ে চলেছেন। আবার ফিরতি মুষলপর্বের হিমশীতল মরণকম্পনে যে আপনারাও কেঁদে চলেছেন অবিরাম।

সবপক্ষকে তাই একটা অনুরোধ করতে পারি কি হাতজোড় করে? অনুরোধটা হল, কালকের বাসি জেহাদি ঠোঁটে আজকের ভোরে সব হিংসা ভুলে একটু প্রাণ খুলে হাসুন না প্রত্যেকে। অচিরেই দেখবেন আপনি সবান্ধবে কি হাসিটাই না হাসছেন। খবরে নিশ্চয়ই শুনতে পাবেন, সারা পৃথিবীটাও আজ হাসছে আপনারই সঙ্গে। 

তাহলে হয়ে যাক একটা জোরসে হাসি, কি বলুন? বিশ্বশান্তির তাগিদে।

(www.theoffnews.com - world terrorism)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours