দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। এটুকু বললে বোধ হয় সবটুকু বোঝা যায় না। যে হাতে এস্রাজে ছড়ির টানে সুরের মূর্ছনা, ঝঙ্কারে সপ্তসুরে মন সিক্ত হয়ে ওঠে, সেই হাতেই শাওয়ার ক্যাপ যখন কোভিড আক্রান্ত মানুষের বাড়ি স্যানিটাইজ করে, তখন সেই প্রচেষ্টা আমাদের মনকেও খানিকটা স্যানিটাইজ করে বৈকি! তখনও বোধ হয় সে এক আনন্দ লহরী বেজে ওঠে হৃদয়তন্ত্রীতে।

যাঁকে নিয়ে এত কথা, তিনি একজন প্রথিতযশা এস্রাজ শিল্পী। নাম সন্দীপ সেনগুপ্ত। বাড়ি বোলপুরের স্কুল বাগান পাড়ায়। মানবিকতার ছড়ির টানে শিল্পী বেরিয়ে পড়েন গায়ে পিপিই কিট, মুখে ফেস শিল্ড, শাওয়ার ক্যাপ, ডবল মাস্ক, ডবল গ্লাভস এবং যন্ত্র কিটে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট (লিক্যুইড ব্লিচিং) নিয়ে। উদ্দেশ্য এলাকার কোভিড আক্রান্ত পরিবারের বাড়ি স্যানিটাইজ করা। এতে অনেক রিক্স ফ্যাক্টর আছে। তবুও স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক কর্মীদের নিরলস সেবাকর্ম ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বয়স্ক ও কচিকাচাদের কথা ভেবেই  তাঁর এই বোধ জাগে কিছু করার। পাশাপাশি পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছেন।

সন্দীপবাবুর দাদা সৌমেন সেনগুপ্ত বিশ্বভারতীর শিক্ষক। বাবা প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সন্তোষ সেনগুপ্ত বছর পনেরো আগেই প্রয়াত। বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের প্রাক্তনী সন্দীপবাবু দেশ বিদেশে বহু প্রখ্যাত শিল্পীর সাথে সঙ্গত করা ছাড়াও অনেক সোলো অনুষ্ঠান করেছেন। শিল্পী সন্দীপবাবু জানান, কোভিড সংক্রমণ কালে স্টেজ অনুষ্ঠান বন্ধ। শুধু অনলাইন ক্লাস আছে। সেটা সকালের দিকেই করেন তিনি। আর বাড়ি স্যানিটাইজের কাজ করেন বিকেলের দিকে। প্রতিদিন ৫-৬টি বাড়ি স্যানিটাইজ করেন তিনি। সেই বাড়িতেই যান, যে কোভিড আক্রান্ত বাড়িতে সদ্য কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে এবং যে বাড়ি থেকে তাঁর হোয়াটস অ্যাপে কেউ অনুরোধ করেন। পুরোটাই নিখরচায় এই কাজ করে থাকেন তিনি। চলতি মাসের ১৮ তারিখ প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েছেন বোলপুর পৌরসভা থেকে। নিজেই কিনেছেন ব্যাটারি চালিত স্প্রে মেশিন ছাড়াও কিটস সরঞ্জাম। লিক্যুইড ব্লিচিং কেনেন সারও কিটনাশকের দোকান থেকে। গাইড নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী বন্ধুদের কাছ থেকে। ওয়ান টাইম ইউজ করেন এই কিটস। তারপর তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন সন্দীপ। সন্দীপবাবু বলেন, “একা কোন প্রশাসনের পক্ষে সব কিছুই করা সম্ভব নয়। নিজেকে বাঁচিয়ে, মানুষ যদি এরকম এগিয়ে আসে, তাহলে জনজাগরণের কাছে একদিন অতিমারি হার মানতে বাধ্য”। একজন করোনা যোদ্ধা হিসেবে তাঁর এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বোলপুর পৌর প্রশাসক পর্ণা ঘোষ। তিনি মনে করেন, সকলের সীমিত ক্ষমতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লে, অতিমারি জব্দ হতে বাধ্য, আর তখনই বোধ হয় রবির কথায় বলা যায়-- ‘কবে আমি বাহির হলেম তোমারি গান গেয়ে / সে তো আজকে নয় সে আজকে নয়…।'

(www.theoffnews.com - Bolpur Sandip Sengupta corona)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours