দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

অবসর বা লিজার নিয়ে তো অনেকেই ছোটতে প্যারাগ্রাফ মুখস্ত লিখেছেন। কিন্তু কোভিড কালে এমন পঠন পাঠন যখন বন্ধ তখন নিজের জীবন দিয়ে ক’জনই বা পেরেছে মানুষের দুঃসময়ে পাশে থেকে জীবন্ত প্যারাগ্রাফ লিখতে! যাদের কথা বলছি, তাঁদের অধিকাংশ পড়ুয়া। কারও সদ্য পেরিয়েছে আঠারো বছর বয়স। কেউ আরেকটু বড়। বয়সের দুঃসহ স্পর্ধা তাদের আছে! তারাই নিতে পেরেছে মাথা তোলবার ঝুঁকি। ইমতিয়াজ আলম এবং সামিনুর আলমদের না দেখলে বোঝা যেত না এই বয়সের স্পর্ধা কত! এরাই মুরারই থানার কুতুবপুরের যুবক! এরা কেউ কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন। আবার কেউ ছাত্র। এদের মধ্যে ইমতিয়াজ আলম এবং সামিনুর আলম আই পি জি এম ই আরের এবং এস এস কে এম হাসপাতালের ছাত্র। মহঃ ওয়াসিম রেজা ডব্লিউ বি এস ই ডি সি এলের অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনীয়ার। সামিম ইকবাল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মহঃ নয়িম রেজা আশুতোষ কলেজের ছাত্র। জামাল আহমেদ নার্সিংয়ের ছাত্র। এখন কলেক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাই তাঁদের অবসরটা মহৎ কাজের মধ্যে কাটাতে চাইছেন তাঁরা। হাতে গোনা এই কয়েকজন সংগঠক অন্যান্যদের সাথে নিয়ে ধনুক ভাঙা পণ করেছে গ্রামের সমস্ত মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েই ছাড়বে। অর্থাৎ রাজী করাবে। তাই হাতে ১-৪৪ এবং ৪৪ উর্ধ্ব ফর্ম নিয়ে বাড়ি বাড়ি নাম সংগ্রহ করার কাজে লেগে পড়েছে তাঁরা। তাছাড়াও, এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য। কোভিডের সময়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র তীব্র রক্ত সঙ্কটে ভোগে। ডোনার পাওয়া যায় না। তাই দুদিন আগে এই যুবকরা মিলে জনা পঁচিশেকের একটু বেশি রক্তদাতা নিয়ে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে মুরারইয়ে। শুধু তাই নয়, বিগত লক ডাউন বা আমফানের সময় নিজেদের সাধ্যমত মানুষের পাশে থেকেছেন তাঁরা।    

উল্লেখ্য, কোভিড সংক্রমণের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক জরুরী। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতার অভাবে এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তারা গ্রামে ফিরে উপলব্ধি করে, গ্রামের মানুষ অজানা আশঙ্কার কারণে কোভিড ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী নন। এখানেই প্রমাদ গোনে কুতুবপুর যুবকবৃন্দ। তারা পর্যায়ক্রমে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে গিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছে। এক একজন যুবক পাঁচটি করে বাড়ির দায়িত্ব নিয়েছে। আর এই কাজে তারা পেয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। মুরারই -২ ব্লক আধিকারিক নাজির হোসেন বলেন, “ভ্যাকসিন মজুত থাকা সত্বেও, মুরারই, পাইকর এলাকায় মানুষ ভ্যকসিন নিতে চাইছেন না। এটা নিয়ে আমরা একটু সমস্যায় আছি। তারমধ্যে এই শিক্ষিত স্থানীয় যুবকরা, যাঁদের মধ্যে কয়েকজন ডাক্তারি পড়ছেন এবং গ্রামের মধ্যে তাঁদের গ্রহণ যোগ্যতা ভালো আছে। তাঁরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসায় আমরা খুব আপ্লুত। আমরা দেখেছি মাইকিং করে এত সাড়া পাওয়া যেত না। আমরা বলেছি, প্রশাসনিকভাবে তাঁদের পাশে আছি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ব্যবস্থা করার কথা ভাবছি। যেহেতু তাঁদের মধ্যে মেডিক্যাল স্টুডেন্ট আছেন, তাঁরা টেকনিক্যাল ব্যাপারটা ভালো বুঝতে পারবেন। একদম পাড়ায় পাড়ায় ভ্যাকসিনের বুথ ক্যাম্প করে টিকাকরণ করা হবে। করা হবে মডেল ক্যাম্প। আমরা নিজেরা থাকবো তাদের পাশে। তাদের আবেদন মত আমরা অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে মানুষ আরও ভালো পরিষেবা পান। আমরা ইতিমধ্যে স্থানীয় ইমাম, ক্লাব, সেলফ হেল্প গ্রুপ ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথেও বৈঠক করেছি, যাতে পিছিয়ে পড়া এই এলাকাতে কিভাবে সর্বাত্মক টিকাকরণ করা যায়”। ইমতিয়াজ আলম ও সামিনুর আলমরা বলেন,  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে গ্রামের মানুষজনের মধ্যে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আর সেই কারণে গ্রামে দশ শতাংশ লোকও ভ্যাকসিন নিতে রাজি হয়নি। এখন সবাইকে রাজি করানোয় আমাদের প্রধান লক্ষ্য বা চ্যালেঞ্জ”।

(www.theoffnews.com - vaccine corona Birbhum)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours