তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:

এই বঙ্গের এক অসাধারণ মাতৃ উপাসকের কথা বলবো আজ। কালী সাধক কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য।

অন্য ভাষায় শক্তি সাধনায় এই বাংলার নবদ্বীপ এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। মাতৃ উপাসক কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য। ইনি ছিলেন সাধক রামপ্রসাদ সেনের তন্ত্র গুরু। এনার কথা বলার আগে আসুন জেনে নিই মাতৃ সাধনার  ইতিহাস বা কি ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে। শুধু এই বাংলায় নয় সারা ভারত জুড়ে বেশি পুজিত হয়েছে দেবী, দেবতা নয়। কিন্তু কেন?

বেদ-পূর্ব সিন্ধু-ধর্ম মাতৃপ্রধান এবং বৈদিক ধর্ম যে পুরুষ-প্রধান, এ বিষয়ে বিদ্বান-পণ্ডিতদের মধ্যে কোন দ্বিমত বা সন্দেহ নাই। কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতির আলোচনায় অত্যন্ত আশ্চর্য্য বিষয় হলো, পরবর্তীকালের ভারতবর্ষীয় ধর্মে অন্তত সাধারণ জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে ঋগ্বেদের প্রাচীন পুরুষ-দেবতাদের বিশেষ কোন পরিচয়ই পাওয়া যায় না। অন্যদিকে উত্তরকালের এই ধর্মবিশ্বাসের প্রধানতম উপাদান হলো মাতৃ-পূজা– তা কি ওই বেদ-পূর্ব সিন্ধু-ধর্মেরই রেশ? এ ক্ষেত্রে সিন্ধু-যুগে এই ধর্মবিশ্বাস প্রচলিত ছিল বলে এর ব্যাখ্যা-সন্ধানে যেমন সিন্ধু-প্রত্নতত্ত্ব-লব্ধ স্মারকগুলির উপর নির্ভর করতে হবে, তেমনি পরবর্তীকালেও এই ধর্মবিশ্বাস বহুলাংশে অক্ষুণ্ন থেকেছে এই অনুমান-জন্য পরবর্তীকালের লিখিত সাহিত্য হয়তো ওই স্মারকগুলির উপর গুরুত্বপূর্ণ আলোকপাত করতে পারে। অর্থাৎ ওই শাক্ত-ধর্ম বা মাতৃ-উপাসনার ব্যাখ্যা সন্ধানে একাধারে প্রত্নতত্ত্বমূলক ও সাহিত্যমূলক দ্বিবিধ তথ্যের উপর নির্ভর করা যেতে পারে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মানব সভ্যতায় দেবীপূজার ইতিহাসও অতি প্রাচীন। পৃথিবীর প্রাচীনতম জাতিগুলির মধ্যেও প্রাচীন কালে দেবীপূজার প্রচলন ছিলো। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন, ভূমধ্যসাগরের তীরে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে মাতৃদেবীর পূজার সর্বব্যাপক প্রচলন ঘটে ছিল। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে যে সব প্রত্ন-উপাদান পাওয়া গেছে, তা থেকে পণ্ডিতেরা অনুমান করেন যে, প্রাক্-আর্যযুগে ভারতবর্ষে মাতৃদেবীর পূজার ব্যাপক প্রসার ছিল। মূর্তিতে মাতৃপূজা কেবল মাত্র সিন্ধু যুগেই প্রচলিত ছিল না, কৃষ্ণসাগরের তীরে এবং দানিয়ুব উপত্যকাতেও একইভাবে মুর্তির মাধ্যমে মাতৃদেবীর পূজা হতো।

অধ্যাপক হংসনারায়ণ ভট্টাচার্যের মতে, ‘পণ্ডিতদের মতে হিন্দুদের শক্তি উপাসনা এসেছে অনার্যদের কাছ থেকে। কোন কোন পণ্ডিতের মতে শক্তি বা মাতৃকা উপাসনা প্রস্তর যুগ থেকেই প্রচলিত ছিল। ইউরোপে সুপ্রাচীন যুগে (Palaeolithic and Neolithic ages) ভেনাসের মুর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। দুইটি সন্তান ও স্বামী সহ মাতৃকা মুর্তির আবিষ্কারও ওই যুগে শক্তি পূজার প্রমাণ দেয়। অর্থাৎ কালী মুর্তি ঐতিহাসিক ভাবে বিবর্তিত হচ্ছে। সিরিয়া, এশিয়া মাইনর, প্যালেষ্টাইন, সাইপ্রাস, ক্রীট্ ও মিশরে মাতৃকা মুর্তি পাওয়া গেছে। মার্শাল সাহেবের মতে নীলনদ থেকে সিন্ধুনদ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূভাগ মাতৃকা পূজার ক্ষেত্র ছিল।’ (হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ- তৃতীয় পর্ব, পৃষ্ঠা-১৬০)

এইবার আসি কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্যের কথায়।

কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ (জন্ম ১৬০০-১৬১০ খ্রী:)  ছিলেন সপ্তদশ শতকের এক উচ্চস্তরের তন্ত্রসাধক, যিনি নদিয়া জেলার নবদ্বীপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তন্ত্রশাস্ত্রে সুপন্ডিত এই তন্ত্রসাধক ১৭০টি গ্রন্থ থেকে নির্যাস গ্রহণ করে বিখ্যাত "তন্ত্রসার" গ্রন্থটি রচনা করেন এবং সমগ্র দেশে এই গ্রন্থটি সমাদৃত হয়। কৃষ্ণানন্দ ছিলেন উদারচেতা, ধর্ম বিষয়ে তাঁর কোনও গোঁড়ামি ছিল না। তাই তন্ত্রসার গ্রন্থে শৈব, গণপত্য, শাক্ত, বৈষ্ণব ও সৌর সম্প্রদায়ের তন্ত্রগ্রন্থগুলির সার গ্রহণ করে সন্নিবেশন হয়েছে। তিনি তন্ত্র বিষয়ে তত্ত্ববোধিনী নামে আরও একটি গ্রন্থ লেখেন।

তাঁর প্রকৃত নাম কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য। তন্ত্র সাধনার আগম পদ্ধতিতে সিদ্ধি লাভ করে তিনি 'আগমবাগীশ' উপাধি পান। তিনি বাংলায় কালী সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ ১৬৩০ থেকে ১৬৪০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বিখ্যাত তন্ত্রসার গ্রন্থটি রচনা করেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, রাঢ়দেশে তন্ত্রশাস্ত্র রচনাকারদের মধ্যে আগমবাগীশের রচনা সবচেয়ে মার্জিত।

সুপ্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্র সাধনক্ষেত্র হিসাবে নবদ্বীপের বিশেষ খ্যাতি ছিল। শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই নবদ্বীপের তন্ত্র সাধনা সাধারণ মানুষের কাছে বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থা চলেছিল কৃষ্ণানন্দের সময়কাল পর্যন্ত। এই সব দেখে সাধকশ্রেষ্ঠ ও পণ্ডিতপ্রবর কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ শুদ্ধাচারে তন্ত্র সাধনা প্রতিষ্ঠিত করলেন। এবং ঘরে ঘরে শক্তি আরাধনা প্রবর্তন করার জন্যই উনি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হলেন এবং সংকল্প করলেন বাংলার ঘরে ঘরে এই পুজোকে ছড়িয়ে দিতে হবে। কৃষ্ণানন্দ তাঁর সাধনলব্ধ ঐশী শক্তির দ্বারা দৈবাদেশ পান ও সেই মতো তিনি মা কালীর শান্ত রূপ কল্পনা করেন। সেই রূপ দক্ষিণাকালী নামে খ্যাত। এইখানে বলে রাখা দরকার, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র এই ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। তখন শাক্ত ও বৈষ্ণবদের বিরোধ চলছিল। ভক্তিনম্র হৃদয়ে প্রাণের আকুতি নিয়ে সহজ সরল পদ্ধতিতে মায়ের সেই মঙ্গলময়ীরূপী বিগ্রহ তৈরি করে তিনিই বাংলার ঘরে ঘরে মা কালীর পূজার প্রচলন করেন, এবং তাঁর বৃহৎ তন্ত্র সার গ্রন্থটি শুধু বিরোধমেটালো তাই নয়, তিনি শক্তি সাধনার এক তাত্বিক ভিত্তি করলেন। আবার কৃষ্ণানন্দের জীবনে ফিরি। প্রচলিত মত ও ইতিহাসবিদদের সমর্থন অনুযায়ী, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে প্রথম দক্ষিণাকালীর রূপ কল্পনা করেন। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মা কালীর রূপেই সম্পূর্ণ বাংলা ও তার বাইরে কালী পূজা হয়। এই বিষয়ে কিন্তু কিংবদন্তি প্রচারিত আছে তা উল্লেখযোগ্য।

কৃষ্ণানন্দ মা কালীর রূপ কিভাবে পেলেন, এই নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে এক প্রচলিত শ্রুতি পাওয়া যায়। ক’দিন ধরেই পুজোয় বসে কালীসাধক কৃষ্ণানন্দ বায়না করেন,

“এবার সাকার রূপে দেখা দাও মা, মুর্তি গড়ে তোমার অর্চনা করি!”

সন্তানের আকুতি মা ফেলতে পারলেন না। বিধান দিলেন, মহানিশার অবসানে প্রাতঃমুহূর্তে কৃষ্ণানন্দ প্রথম যে নারী মুর্তি দর্শন করবেন, সেই মুর্তিই হবে ইচ্ছাময়ীর যথার্থ সাকার মুর্তি। পরের দিন ভোরে গঙ্গাস্নানে বেরিয়ে কৃষ্ণানন্দ দেখলেন, এক দরিদ্র বধূ গাছের গুঁড়ির উপর নিবিষ্ট মনে ঘুঁটে দিচ্ছেন। বাঁ হাতে গোবরের মস্ত তাল, ডান হাত উঁচুতে তুলে ঘুঁটে দিচ্ছে। নিম্নবর্গীয় কন্যা, গাত্রবর্ণ কালো, বসন আলুথালু, পিঠে আলুলায়িত কুন্তল, কনুই দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে গিয়ে সিঁদুর লেপ্টে গেছে। এ হেন অবস্থায় পরপুরুষ কৃষ্ণানন্দকে দেখে লজ্জায় জিভ কাটলেন সেই বধু।— এই ছবিটিই মানসপটে এঁকে গঙ্গামাটি নিয়ে মুর্তি গড়তে বসলেন কৃষ্ণানন্দ। কৃষ্ণানন্দের এই মুর্তিই পরবর্তীতে দুই বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠল। তবে প্রান্তিক উত্তর কলকাতায় বৃহত্তম পাইকপাড়ার বরানগরে যে দক্ষিণাকালী মন্দির দেখি, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

কৃপাময়ী কালীমন্দিরটি তৈরি করেন জমিদার জয়মিত্র। তাই জয়মিত্র কালীবাড়ি নামেই সমধিক পরিচিত। প্রসিদ্ধ জমিদার জয়রাম মিত্র ১৮৪৮ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী দক্ষিণাকালী। মূল মন্দিরের পাশে দ্বাদশ শিবমন্দিরও রয়েছে। এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য হল, মন্দিরটি সুবিশাল হলেও মন্দিরের পূজারীতি বাহুল্যবর্জিত ও নিষ্ঠাযুক্ত। রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরে একাধিকবার এসেছিলেন। কথিত আছে এই মন্দির দেখেই নাকি রাসমণি দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির স্থাপনের কথা ভাবেন।

দক্ষিণাকালীর ডান পা শিবের বুকে। তিনি কালীর অন্যান্য রূপ থেকে ভিন্ন এবং তাকে ঘর এবং মন্দিরে পূজা করা হয়। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা এবং মুণ্ডমালা বিভূষিতা। তার বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়গ। এই মহামায়া আদ্যা কালীর সাথে সৃষ্টির রহস্য যুক্ত।

তবে একটি ধর্মের সঙ্গে এ সৃষ্টি তত্ত্বটির মিল ছিল এবং সেটি হচ্ছে সনাতন ধর্ম। মহামূল্য ঋগবেদের নিসা পর্বে ১৬টি শ্লোকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি শুরু হয়েছিল একটি বিন্দু থেকে। তবে মহানির্বাণ তত্ব বেদের এক ধাপ এগিয়ে বললো। যা নিয়ে পরে আসছি।

বেদের মতে সৃষ্টির শুরুতে ঔঁম উচ্চারিত হয় এবং এর প্রভাবেই হয় বিস্ফোরণ। বেদান্ত মতে ‘অনাবৃতিঃশব্দহম’ অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমেই সৃষ্টির সূত্রপাত হয় যা মাত্র দুবছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এবং নাম দিয়েছেন শব্দ তরঙ্গ (Cosmic sound wave)। বেদের সৃষ্টিতত্ত্ব পড়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কেভিন হারলে বলেছিলেন, ‘How could Aryan Sages have known all these stories 6000 years ago when modern scientists have only recently discovered this using advanced equipment which didn’t exit that time”. Nobel Laureate Count Maurice Maeterlinck বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বলেন ‘A Cosmology which no European conception has ever surpassed.’

আমরা সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞান ও বেদের কথা জানলাম কিন্তু আজকে আমি আর একটি অজানা বিষয়ের উপর আলোকপাত করব যা আমরা অনেকেই জানার বা বোঝার চেষ্ঠা করিনি। যা মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনে কোনও অংশেই বিজ্ঞান বা বেদ অপেক্ষা খাটো নয়। মহানির্বাণ তন্ত্রের তৃতীয় অধ্যায় দেবাদিদেব মহাদেব মা দুর্গাকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি নিয়ে বলছেন যে,

“সৃষ্টিশ্চতুব্বির্ধা দেবী প্রকৃত্যামনুবর্তে।

অদৃষ্টিজায়তে সৃষ্টিঃ প্রথমে তু বরাননে।

বিবর্তভাবে সম্প্রাপ্তে মানসীসৃষ্টিরুচ্য়তে।

তৃতীয় বিকৃতং প্রাপ্তে পরিনামান্তকে তথা।

আরম্ভসৃষ্টিশ্চ ততশ্চতুর্থেযৌগিকী প্রিয়ে।

ইদানিং শৃণু দেবেশী তত্ততত্বঞ্চ বিশেষতঃ।

সৃষ্টিশ্চতুব্বির্ধা দেবী যথাপ্বং সমাসতঃ।

অর্থ: মহাদেব দেবীকে বলছেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চার পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত: অদৃশ্য বশত: প্রকৃতিতে ভোগকাল উপস্থিত হলে যে সৃষ্টি হয় তাকে অদৃষ্ট সৃষ্টি বলে এবং এতে মূল প্রকৃতি (অনাদিশক্তি) হতে শক্তির আবির্ভাব ঘটে। এই শক্তি আদ্যাশক্তি নামে কথিত হয়ে থাকে। এক প্রদীপ হতে প্রজ্বালিত অন্য প্রদীপের ন্যায় এই আদ্যাশক্তি অনাদিশাক্তির রূপান্তর মাত্র। এই আদ্যাশক্তি তমোগুণ সম্পন্ন (black Energy) যা প্রাথমিক পর্যায়ে অবিকৃত থাকে। কিন্তু অঘটন-ঘটন-পটীয়সী মায়া দ্বারা পরিকল্পিত এই জগৎ ব্রাহ্মণের বিবর্ত্ত স্বরূপ এবং এটি দ্বিতীয় সৃষ্টি যা মানসী সৃষ্টি নামে পরিচিত।

এতমোগুনা আদ্যাশক্তিতে বিকৃতি প্রাপ্ত হতে শুরু করে এবং এক বস্ত হতে অন্য বস্ত উৎপন্ন হতে থাকে অর্থাৎ রূপান্তর ঘটতে থাকে এবং এটাকে পরিণামসৃষ্টি বা তৃতীয় সৃষ্টি বলে। মহত্ব হতে অহংকার তত্ত্ব এবং অহংকার তত্ত্ব হতে একাদশ ইন্দ্রিয় ও পঞ্চতন্মাত্র এবং পঞ্চতন্মাত্র হতে পঞ্চভুতের উৎপত্তিই এই তৃতীয় সৃষ্টির অন্তর্গত। বিজ্ঞানীরা এটিকে অনু সৃষ্টির নামে অভিহিত করেছেন। যখন এই পঞ্চীকৃত পরমাণু সমুদায়ের পরস্পর যোগদ্বারা ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর উৎপত্তি হতে থাকে তখন তাকে আরম্ভসৃষ্টি বা যৌগিক সৃষ্টি বলে। এটিই চতুর্থ সৃষ্টি নাম অভিহিত।

সুতরাং মহানির্বাণ তন্ত্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনে বেদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে। বেদের মতে সৃষ্টি তিন ধাপে হয়েছে, যথা: বিবর্ত্তসৃষ্টি, পরিনামসৃষ্টি এবং যৌগিকসৃষ্টি। কিন্তু তন্ত্র বলেছে চার ধাপে এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে, যথা: অদৃষ্টসৃষ্টি, বিবর্ত্তসৃষ্টি, পরিনামসৃষ্টি এবং যৌগিকসৃষ্টিবা আরম্ভসৃষ্টি। বিগ ব্যাং থিওরি ও (Big Bang theory) ঠিক এই কথাটিই বলছে।

বিজ্ঞানের মতে এ বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু আছে তা দৃশ্যমানই হোক আর অদৃশ্যমানই হোক তা সবই ওই Black Energy এর (অদ্যাশাক্তির) অংশ ছাড়া কিছুই নয়। 

কাল মানে সময় আর কালী হলো, যে সময় ধারণ করে। কালের স্ত্রী লিঙ্গ হলো কালী। এই ব্রহ্মাণ্ড সমন্ধে যতটুকু জানা গেছে তা মাত্র দশভাগ। বেশীর ভাগ জায়গায় আছে শুন্যতা বা অন্ধকার। অর্থাৎ এই জড় জগৎ বা প্রকৃতি যাই বলেন, তার সংক্ষিপ্ত সার হলো মানুষ। কারণ মানুষ যুক্ত এই প্রকৃতির সাথে। তাই আজও বাউলরা বলে,

যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে

সবই আছে দেহ ভ্যান্ডে।

নিরাকার কালী বা অন্ধকার হলো সৃষ্টির আদি।

উপাসকরা তার সাকার রূপ দিয়েছেন মাত্র।

বিজ্ঞানীরা অনেকেই আজ বলছেন Universe

created from nothing. And it is created by an accident. There is no external creator, no god. ওই একই কথা বলছে মহানির্বাণ তত্ব। আবার উপনিষদে অনেক জায়গায় মানুষকে ঈশ্বর রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আসুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক সনাতন মতটি। আপনি কি করে জানলেন ঈশ্বর ওপরে আছে? আপনি কি জানেন? এই মহাবিশ্বের কোনটা ওপর? কোনটা নিচ? উপরওয়ালা নেই। নিচওয়ালাই সত্যি। ঈশ্বর মাটিতেই আছে। মনের মধ্যে আছে।

We are connected with the whole cosmos।

আমাদের শাস্ত্র কি বলছে ঈশ্বর সম্মন্ধে?  ঈশ্বর এবং ভগবানের মধ্যে পার্থক্যটা আসলে কী?

যার রূপ থাকে, তাকে যেমন বলে রূপবান; তেমনি- যশ, বীর্য, ঐশ্বর্য, শ্রী, জ্ঞান, বৈরাগ্য- এই ছয়টি গুনকে বলে ‘ভগ’ আর এগুলো যার মধ্যে থাকে, তাকে বলে ভগবান; আর সকল গুন যার মধ্যে থাকে তাকে বলে ঈশ্বর। অন্য ভাষায় ঋষি অরুবিন্দ বলেছেন,

Divine alone is god.

অর্থাৎ ঈশ্বর হলো পার্থিব ব্যাপার। অপার্থিব কিছু নয়।

তাই মহা কালীর যে তাৎপর্য বা বোধ তা হলো পার্থিব।

(www.theoffnews.com - Universe God Goddess Kali)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours