মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

একটা কালো বছর পার হয়ে গেল রুক্ষ সময়ে রক্তের দাগ রেখে। আজ পয়লা বৈশাখ। বাঙালির নববর্ষ। নতুন বছরের খুশিতে সকলেই সামিল হতে চায় কিন্তু পেছনে তাকালেই সব খুশি ম্লান। অসুখের করাল গ্ৰাসে আমরা হারিয়েছি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষদের। অসুখ রুখতে মুখোশে মুখ ঢেকেছি। বারবার ধুয়ে ফেলেছি হাত ঠিক যেমন করে ভোটের সময় নেতারা জনদরদী মুখোশ এঁটে ভিক্ষা চায় আর ভোট পেরলেই হাত ধুয়ে ফেলে। রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছে সাধারণ মানুষ।

অনলাইনে ক্লাস করা শৈশব-কৈশোর অনায়াসেই কুৎসিত থেকে কুৎসিততম ভাষা আর অসৌজন্যমূলক ব্যবহার রপ্ত করছে টিভির মাধ্যমে নেতা নেত্রীদের কাছ থেকে। খেলা এখন মাঠে হয় না। গানের মাধ্যমে ভোটবাক্সে হয়। এইসব রঙ্গ তামাশার মাঝেই কখন যে ভোলা মহেশ্বর তার ঝোলাটি নিয়ে চৈত্রের গাজন সেরে উদাসীন ভিখারি বেশে পাড়ি দেন এক সময় থেকে অন‍্য সময়ে তা কেবল প্রকৃতিই বুঝতে পারে। তাই উদাসী চৈত্রকে বিদায় দিয়ে বৈশাখ রুদ্রের আলাভোলা রূপের বদলে তেজদীপ্ত রূপ নিয়ে আমাদের কাছে এসে বলে 'শুভ নববর্ষ'। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আপামর বাঙালি নতুন জামায় সেজে ওঠে, মন্দিরে পুজার্চনার  মধ্য দিয়ে বৈশাখকে বরন করে নেয়। দেশ কাল ভুলে সব বাঙালি বলে ওঠে, 'শুভ নববর্ষ'। 

পয়লা বৈশাখ মানেই কেমন যেন উৎসবের ভাব চারিদিকে। সারা বছরের দেনাপাওনা চুকিয়ে নিশ্চিন্ত গৃহস্থ আর পুরনো হিসাব চুকিয়ে নতুন বছরের নতুন হিসেবপত্র নিয়ে হালখাতার পুজো করা ব্যবসায়ী সকলেই আনন্দে মেতে ওঠে। আগে পাড়ায় পাড়ায় নববর্ষে প্রভাতফেরী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জোয়ার ছিল। আমাদের ছোটবেলা পয়লা বৈশাখের এই সব অনুষ্ঠানের মহড়ায় কেটেছে। পয়লা বৈশাখের আগে থেকেই এই সব নিয়ে কি উত্তেজনা। এখন তা অনেকটাই স্তিমিত। এই প্রজন্মের প্রায় আশি শতাংশই পয়লা বৈশাখকে কেবল একটা  ছুটির দিন এবং বন্ধুদের নিয়ে হ‍্যাং আউটে যাওয়ার দিন  হিসেবেই ভাবে। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। অতি আধুনিকতার মোড়কে নিজের ঐতিহ্য ও পরম্পরা ভুলে যাওয়ার শিক্ষা তারা আমাদের তৈরি করা সমাজ থেকেই পেয়েছে। যে সমাজে আমরা একটি শিশুর ভবিষ্যত পরীক্ষার  নম্বরে মাপি সে সমাজের শিশুরা প্রকৃত শিক্ষিত হয় কি? হয় না। তারা কেবল প্রতিযোগী হিসেবে বড় হয়ে ওঠে। আমরাও তা দেখে মুর্খের স্বর্গে বাস করি।

অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস, শপিং মল আর ইংলিশ মিডিয়মে পড়ার অহংকার ধীরে ধীরে পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে।

এখন টিভিতে বর্ষবরণের নানান অনুষ্ঠান দেখেই বাঙালি মন ভরায়। এবছর আনন্দ ফিরে আসবে নাকি হিংসা, বিষাদের কালো ছায়া ঢেকে রাখবে মানুষের হৃদয় তা ভবিষ্যত বলবে। আমরা শুধু এক হয়ে প্রার্থনা করি যেন সব অশুভ নাশ করে প্রকৃতই শুভ হয় এই নববর্ষ। 

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। শুভ হোক সকলের।

(www.theoffnews.com - Bengali nababarsha)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours