দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

কেষ্টবাবু সাময়িক চাকমা তো দিলেন, কিন্তু সিবিআইয়ের দুসরা সামলাতে পারবেন তো?

এ যেন ধুম থ্রীর রিমেক! আমির খানের পিছনে ধাওয়া করছে সেই ধুম ওয়ান, ট‍্যুর পুলিশ অফিসার অভিষেক বচ্চন। একইভাবে চকমা দিয়ে উধাও হতে সমর্থ অনুব্রত। বৃহস্পতিবার অষ্টম দফা নির্বাচন। তার আগেই বুধবার কমিশনের নজরদারী টিমের সামনে থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বাড়ি থেকে দলীয় কার্যালয়ের মধ‍্যে এই লুকোচুরি খেলার শুরু। বুধবার সকাল ১১টা ৪০মিনিট নাগাদ নিজের বাড়ি থেকে বের হন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াও সেই সময় সেই সময় নির্বাচন কমিশনের নজরদারি টিমও ছিল। বাড়ি থেকে যখন বের হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের গাড়ি তখন তাঁর পিছনে। সেই গাড়ির সামনে থেকেই হঠাৎ উধাও হয়ে যায় অনুব্রত মণ্ডলের গাড়ি। গোটা জেলা জুড়ে খোঁজ খোঁজ রব। জেলার সমস্ত থানাকে বলা হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের গতিবিধি পেলে সঙ্গে সঙ্গে যেন জানানো হয়।  অবশেষে দেখা মেলে তারাপীঠ মন্দিরে। কিছু ক্ষণের জন্য এই লুকোচুরি খেলাটা খুব উপভোগ করেন অনুব্রত। বিগত নির্বাচনে একই ভাবে মাঝপথে উধাও হয়ে রামপুরহাটে এক দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কর্মীদের সাথে দেখা করেন। আর নজরদারি টিম হন‍্যে হয়ে খো খো খেলার মতো তাঁর পিছনে ছুটছে তো ছুটছে! এই হচ্ছে  অনুব্রত। বুধবার বেলা দুটো পনেরো নাগাদ তারাপীঠে পুজো দেন অনুব্রত, বলে জানান  তারামাতা মন্দির সেবায়েত কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ‍্যায়। জানা গেছে প্রতিবারের মত এবারেও তিনি গোটা জেলা ঘুরবেন। আর চকমা দেবেন নজরদারী টিমকে। 

মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নজরবন্দী করে নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার ত্রিশ এপ্রিল সকাল সাতটা পর্যন্ত চলবে এই নজরবন্দী।  কমিশনের ওই নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে এই নজরদারীর সময়ে সবসময় কেন্দ্রীয় বাহিনী, একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ২৪ ঘন্টার জন্য ভিডিও ফটোগ্রাফার থাকবে। ভিডিও তোলার সময় তারিখ ও সময় যেন ছবিতে স্পষ্টভাবে ধরা থাকে তার ব্যবস্থাও করতে হবে।

সেইমতই মঙ্গলবার নজরদারী টিম বোলপুর তৃণমূল পার্টি অফিসে আসেন ও তাঁর মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। যদিও এটা প্রথম নয় এর আগেও ২০১৬ এবং ২০১৯ এ নির্বাচনেও একইভাবে বিরোধীদের অভিযোগের ভিত্তিতে নজরবন্দি করা হয়েছিল জেলার এই দাপুটে নেতাকে।

তবে জেলা তৃণমূল পার্টি সুত্রে জানানো হয়েছে অন্যবারের মত এবারেও তিনি নির্বাচনের আগের দিন জেলার সব বিধানসভা ঘুরবেন।

তবে নির্বাচন কমিশনের নজরদারী টিমের সামনে থেকে উধাও হয়ে অনুব্রত মণ্ডল আবার প্রমাণ করলেন অনুব্রতকে নজরবন্দী করা অত সহজ নয়। নজরবন্দী অবস্থায় তিনি তার কাজ করে যাবেন। তাঁর কথায়  বল ঠিকই পাশ দেবেন, আরও সহজে। এভাবেই সুপার হিরো ইমেজ নিয়ে ভোটের আগের দিন দলীয়  কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে  তাঁর এই অদৃশ্য হওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কর্মীদের বার্তা দিলেন, তাঁকে  আঁটকানোর ক্ষমতা  কারোও নেই! তবে এদিন বিকেলে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক দেবীপ্রসাদ কর্ণম নোটিশ দিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে সতর্ক করে বলেন, কমিশনকে এড়িয়ে এভাবে চলাফেরা করা যাবে না।

খুব সম্প্রতি সিবিআই তলব করেছিল তাকে। তিনি কিন্তু যে যে কারণ দর্শিয়ে সেই তলব আপাতত এড়িয়েছেন, ঠিক সেই সেই কাজগুলিই কিন্তু করে গেছেন এদিন লুকোচুরি খেলে। সুতরাং সিবিআইয়ের কাছে তার বক্তব্যের সত্যতা তিনি যে মিথ্যা প্রমাণ করে ফেললেন অতি শো অফ করতে গিয়ে। আসলে সিবিআইয়ের পাতা ফাঁদে তিনি নিজেই যেচে পা দিয়ে ফেললেন। এবার ভোটপর্ব মিটলে পারবেন তো সিবিআইয়ের শ্রীঘরের দুসরা সামাল দিতে?

(www.theoffnews.com - Anubrata Mondal)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours