দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

“কোন শহরের সঠিক পরিচয় পেতে হলে খোঁজ নিতে হয় সেখানকার মানুষ কিভাবে কাজ করে ... কেমন করেই বা তারা মরণকে বরণ করে”। অ্যালবেয়ার ক্যামুর প্লেগ উপন্যাসের এই অসাধারণ লাইনের পুরো ছবিটির দেখা মেলে নির্বাচনী জ্বরে ভোগা রামপুরহাট শহরের সভায়ন রাজপথে! হাটে বাজারে তো আছেই! শত শত মানুষ মাস্ক ছাড়া, দূরত্ববিধি ছাড়া বেশ নিশ্চিন্তে। যখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা। সূত্রের খবর, গতকাল  রামপুরহাট-১ ব্লকে ৩১ জন এবং রামপুরহাট -২ ব্লকে ২৯ জন। রামপুরহাট মহকুমায় তিন শতাধিক! রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলায় ১৭৯৫ জন কোভিড পজিটিভ। শুক্রবার মহকুমায় ২৭৪ জন পজিটিভ। গোটা রামপুরহাট শহরে ১৫১ জন পজিটিভ। তবুও কারও হুঁশ নেই!

কুড়ি দিন বাদেই শেষ দফার ভোট। নির্বাচনের ঘোষণা হতেই চলেছে জমজমাট প্রচার। কোন দলকে কে টেক্কা দেবে প্রচারে, কার জনসভায় কত ভিড়, সেই ছবি সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করে চলছে বাজিমাত করার চেষ্টা। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক দলের আইটি সেলের লোকেরা সদা ব্যস্ত সেই কাজে। সাইটে চলছে কমেন্টের পর কমেন্ট। ভিড় বাড়াতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। “খেলা হবে” গানের ব্যাণ্ড কোন কিছুর খামতি নেই। 

বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলকে দেখা গেছে, সেই গানে তাল দিতে। তাঁর কথায় মেয়েরা রান্না ঘরে থাকেন, তাই সভায় এই বিনোদন! বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সেলেবদের দিয়ে করছেন রোড শো। কারও মুখে মাস্ক নেই! এখনও পর্যন্ত রামপুরহাটের চিলের মাঠ, কলেজ মাঠ বা ভাঁড়শালা পাড়ার দিঘীর মাঠ সব জায়গাতেই ভিড় হয়েছে। আর সবাই মাস্ক ছাড়া, বুড়ো আঙুল দূরত্ব বিধিতে। তা নিয়ে কোন দলের মাথা ব্যথা নেই। পাল্লা দিয়ে রামপুরহাট মহকুমায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে, হাটে বাজের কারও মুখে নেই মাস্ক। সেই পুরানো ভিড়, গাদাগাদি। সব ছাড় এখন ভোট উৎসব। কিছু ক্লাস ছাড়া সব বন্ধ। অনেকেই আতঙ্ক প্রকাশ করে বলছে, ভোটের পর কি হবে? রামপুরহাট মহকুমার সন্তোষপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যেখানে ক্লাস অনলাইনে হতে পারে, সেখানে নির্বাচনী প্রচার অনলাইনে নয় কেন? তাহলে তো কোভিড চেক হতে পারতো! আমার স্কুলে তো প্রটোকল মেনেই স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। স্টাফদের টেস্ট হয়েছে।

জানা গেছে, সব স্কুলেই কোভিড প্রটোকল মানা হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক প্রচার ছাড়া। উপস্থিত ভিড়ে নেই কোন মাস্ক ব্যবহার বা দূরত্ব বিধি। এব্যাপারে বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপিকাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই বললেন, সমাবর্তনে আচার্য নরেন্দ্র মোদী শান্তিনিকেতনে আসেননি কেন, জানেন? উত্তরটা নিজেই দিলেন, পড়ুয়ারা ছিল না, ভিড় না হলে আসবেন কেন? তাই ভার্চুয়াল। কিন্তু নির্বাচন বৈতরণীতে আমজনতার সামনা সামনি না হলে বক্তৃতায় জোর আসে না। তালির আওয়াজ শোনা যায় না, ওয়েভ দেখা যাই না!

আশার কথা, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের হার রামপুরহাটে বৃদ্ধি পাওয়ায়, সাধারণ জনতার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে অনেক আগেই। অনেকেই দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন। নলহাটিতে সেফ হোম প্রস্তুত আছে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ৩০টি বেডে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে পরিকাঠামো তৈরি করে তাকেই কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা হবে। জরুরী পরিস্থিতিতে ব্যবস্থা থাকবে, বোলপুর হাসপাতাল ও দুর্গাপুর সনকা হাসপাতালে।

(www.theoffnews.com  - corona West Bengal election Rampurhat)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours