তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:

তখন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অন্তিম পর্ব। ১৯৪৫ সাল ২৯ এপ্রিল এডলফ হিটলার বুঝে গিয়েছিলেন তাঁর পরাজয় একদম নিশ্চিত সোভিয়েতদের কাছে। তিনি বিয়ে করলেন তাঁর পার্সোনাল ফটোগ্রাফার ইভা ব্রাউনকে বাংকারের নীচে। যা ছিল মাটি থেকে ৫০ ফুট নীচে। শুধু একদিনের জন্য বিয়ে।

হিটলারের থেকে বয়েসে ইভা ২৩ বছরের ছোটো ছিলো। হিটলারের অনেক প্রেমিকা ছিল বিভিন্ন সময়ে কিন্তু কেউ টেকেনি। অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। শেষ পর্যন্ত টিকে গেল ইভা ব্রাউন। ইতিহাসবিদরা বলেন তিনি গেলি বলে আর এক মহিলার প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু গেলির মৃত্যুর পর একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন হিটলার। সেই সময়ই তাঁর জীবনে প্রবেশ ইভার। ধীরে ধীরে হিটলারের বিভিন্ন পার্টিতে ইভার আনাগোনা শুরু হয়। হিটলারের বাড়িতেও যাতায়াত বাড়ে তাঁর। কিন্তু কেউ এলে লুকিয়ে পড়তে হত তাঁকে। কখনও আবার ইভাকে নিজের সেক্রেটারি বলেও পরিচয় করাতেন হিটলার।

ইভার ডাইরি থেকে জানা যায়, উনি রাজনীতি কিছুই বুঝতেন না। এমন কি হিটলারের পুরো নামও জানতেন না। যাই হোক পরে সব জানতে পারলেন। এবং ইভা এটাও জানলেন হিটলারকে কেউই বাঁচাতে পারবে না। এত কিছু সত্ত্বেও হিটলারকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেননি ইভা। তাই মিত্রপক্ষ যখন জার্মানিতে ঢুকতে শুরু করেছে, নাজি নেতারা জার্মানি ছেড়ে পালাতে শুরু করলেও, হিটলারকে ছেড়ে যেতে রাজি হননি ইভা। ১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল মধ্যরাতে হাতে গোনা কয়েক জনের উপস্থিতিতে হিটলারের সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিয়ে সারেন তিনি। তখন হিটলারের বয়স ৫৬ আর ইভা ব্রাউনের ৩৩।

এর পর ৩০ এপ্রিল দুপুরে ঘনিষ্ঠদের বিদায় জানান হিটলার ও ইভা। সেই দিনই দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ সায়ানাইড খেয়ে প্রথমে আত্মঘাতী হন ইভা। তার পর নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হন হিটলারও। যাতে শত্রুপক্ষের হাতে না পড়েন, তাই হিটলার ঘনিষ্ঠরা দেহ দু’টি জ্বালিয়ে দেন। পরে যদিও তাঁদের দেহাংশ উদ্ধার করে গোপনে সমাধিস্থ করে সোভিয়েতরা।

কিন্তু ইতিহাস এই মৃত্যুর বর্ণনায় কি বলেছে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল বেলা তিনটে অল্প পূর্বে হিটলার মাটির পঞ্চাশ ফুট নিচে তার বাঙ্কারের করিডোরে বের হয়ে এলেন। সঙ্গে তার নব-পরিণীতা বধূ ইভা, প্রায় পনের বছরের পরিচয়ের পর তিনি প্রায় চল্লিশ ঘণ্টা আগে ইভাকে বিয়ে করেছেন। করিডোরে হিটলারের অতি বিশ্বস্ত কিছু মন্ত্রী, সেক্রেটারি, সেনাপতি, স্টেনো দাঁড়িয়েছিলেন। ছিলেন গোয়েবেলস। হিটলার ও ইভা নীরবে একে একে সকলের সঙ্গে করমর্দন করলেন। তারপর নিতান্ত যে কজনের প্রয়োজন তারা করিডোরে রইলেন, বাদ বাকিদের বিদায় দেওয়া হলো। হিটলার ও ইভা খাস কামরায় ঢুকলেন।

অনুচরেরা বাইরে প্রতীক্ষা করতে লাগলেন।কিছুক্ষণ পর একটিমাত্র পিস্তল ছোড়ার শব্দ শোনা গেল। অনুচররা আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন- তারা ভেবেছিলেন দুটো শব্দ হবে। সেটা যখন শোনা গেল না তখন তারা কামরার ভেতরে ঢুকলেন। সেখানে দেখতে পেলেন, তিনি সামনের দিকে ঝুঁকে বসে আছেন, কিংবা পড়ে আছেনও বলা যেতে পারে। তার খুলি, মুখ এবং যে সোফাটিতে তিনি বসেছিলেন সব রক্তাক্ত। কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তার কাধে ইভার মাথা হেলে পড়েছে। ইভার কাছেও মাটিতে একটি ছোট পিস্তল। কিন্তু তিনি সেটা ব্যবহার করেননি। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অথচ কী প্রবল পরাক্রান্তই না ছিলেন তিনি কিছুদিন আগেও। যার প্রবল উচ্চাকাঙ্ক্ষায় পৃথিবীজুড়ে প্রাণ দিয়েছে প্রায় ৫ কোটি মানুষ সেই মানুষটিরই এই করুণ মৃত্যু?

অর্থাৎ একদম শেষে এসে হিটলারও ভালোবাসার কাছে হার মানলেন। তাঁর মতো আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী নেতাও ভালোবাসার ছোঁয়া চাইলেন। গল্পটা এইটাই শিক্ষা দিল। যুদ্ধ শেষ কথা নয় প্রেমই শেষ কথা।

কিন্তু ঠিক আত্মহত্যার আগে হিটলার তাঁর স্ত্রী ইভাকে কি বলেছিলেন? কেউ জানে না কোনো রেকর্ড নেই। আমার অনুমান নিশ্চই ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় আলিঙ্গনের মাধ্যমে বলেছিলেন I love u Please forgive me. তিনি হয়তো উপলব্ধি করেছিলেন তখন তিনি আর সেই যোদ্ধা হিটলার নন শুধু একজন সাধারণ প্রেমিক মৃত্যু পথ যাত্রী। মনে ছিল শুধু ভালোবাসা পাওয়ার আকুতি। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই মৃত্যুর সময়ে তাঁদের স্ত্রী কিংবা প্রেমিকাদের বলে গেছেন একটাই কথা আমি তোমায় ভালোবাসি, আজও বাঁচতে চাই।ভালোবাসার কাছে আত্মসমর্পণই হলো মানুষের শেষ দীর্ঘশ্বাস। এইটা বহু বিশ্ব সমীক্ষায় প্রমাণিত।

যুদ্ধ নয়, অস্ত্র নয়, প্রথম এবং শেষ কথা হলো মানবিকতা, আশ্রয় ও প্রেম।

(www.theoffnews.com - Hitler Iva Brown)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours