তপন সান্যাল, কবি, গীতিকার ও গবেষক, পাইকপাড়া, কলকাতা:

ধীরেন দাস এক প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্ব যাঁর সাথে জড়িয়ে আছে কলকাতা তথা বাংলার কত প্রানের মানুষ। তাই ধীরেন দাস হলো একটি অনন্য যুগ।

ধীরেন দাস শুধু শিল্প ও সংগীতের যুগ নয়, নাটক, সিনেমা কবিতাও। ধীরেন দাস মানে কাজী নজরুল ইসলাম, জমিরউদ্দিন খাঁ সাহেব, আঙ্গুর বালা ও ইঁদুবালা, কৃষ্ণ চন্দ্র দে, শিশির ভাদুরী, আবার ধীরেন দাস মানে গ্রামোফোন কোম্পানী এইরকম অজস্র গুণমুগ্ধ শিল্পী।

এই গ্রামোফোন কোম্পানীর অফিসে আসতেন পাইকপাড়ার অনেক কবি ও সাহিত্যিকরা। ওই গ্রামোফোন কোম্পানীর অফিস ছিল সেকালে শিল্প, সাহিত্যের এবং সংগীতের আড্ডার কেন্দ্র স্থল। এক দিন কথায় কথায় সজনীকান্তর মেয়ে সোমা দেবী বললেন, এই পাইকপাড়ায় আমাদের বাড়িতে উনি বহুবার এসে গান গেয়ে গেছেন। কি করে ভুলবো সেই সব দিনের কথা। সেই গান আমি আর আমার  বাবা শুনতাম না শুধু। শুনতো এই পাড়ার সব কৃতি মানুষ ও সাহিত্যিকরা। ওই সব স্মৃতি আজ ও আমার কাছে একমাত্র সম্বল। আর আমরা হলাম ওই ফেলা আসা যুগের স্মৃতি ভ্রষ্ট এক অন্য উত্তর পুরুষ।

এইবার আসি ইতিহাসে: ধীরেন্দ্রনাথ নাথ দাস, ১২সি নর্দার্ন এভিনিউ,পাইকপাড়া। জন্ম: ০৪-০৮-১৯০৩, পাণ্ডুয়া হুগলি। মৃত্যু: ২৫-১১-১৯৬১ কলকাতার পাইকপাড়া। পিতা কালীচরণ দাস। মাতা প্রভাবতী দাস স্ত্রী বিজয়া দাস।

নজরুল তাঁকে বলতেন শ্রুতিধর। একবার, বড়জোর দুইবার দেখালেই গান কণ্ঠস্থ। রবীন্দ্রনাথের যেমন দিনু ঠাকুর গানের ভান্ডারী তেমনি ধীরেন দাস ছিলেন নজরুলের গানের ভান্ডারী। বিভিন্ন রকম গান গাইতেন, সব চেয়ে বেশি গান গেয়েছেন কাজী নজরুল ইসলামের। এক কথায় বলা যায় নজরুলের গানের সার্থক রূপায়ণ করেছেন ধীরেন দাস। তাঁর শিক্ষায় প্রশিক্ষিত হয়েছেন অগণিত শিল্পী এবং তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য সংগীত ব্যক্তিত্ব হলেন আঙ্গুরবালা ও ইঁদুবালা দেবী। তাঁর নৈপুণ্যের সাক্ষর রয়ে গেছে মঞ্চে, বেতার নাটকে, এমন কি চলচ্চিত্রেও। কিন্তু তিন দশকের এই অবিসংবাদী জনপ্রিয় শিল্পী আজ এক বিস্মৃত প্রায় নাম। এই শিল্পী যুক্ত ছিলেন কৃষ্ণ চন্দ্র দে, জমিরউদ্দিন খাঁ সাহেব ও তুলসী লাহিড়ীর মত শিল্পীর সাথে। ধীরেন দাসের মতো এরা কেউই প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমের আলোয় আলোকিত নন। ১৯০৩ সালে ৪ আগস্ট ধীরেন্দ্রনাথ জন্ম গ্রহন করেন তাঁর মামার বাড়িতে। ধীরেন দাসের পিতার অভিনয় ও সংগীতের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল। কর্ম সূত্রে তাঁর পিতা কালীচরণ দাস রানীগঞ্জে বেঙ্গল কোল কোম্পানীর নায়েব ছিলেন। তাঁরই উৎসাহে ও উদ্যোগ্যে গড়ে উঠে সৌখিন নাট্য সম্প্রদায়। এই খানেই তাঁর অভিনয় ও গানের শিক্ষা। অল্প কিছু দিনের মধ্যে নানারকম বাদ্য যন্ত্রে পারদর্শী হয়ে উঠলেন। কিন্তু পিতা চাইতেন না ছেলে পেশাদারী ভাবে গান বাজনা করুক। যাই হোক তাঁর বাল্য শিক্ষা শুরু হয় শ্রী কৃষ্ণ পাঠশালায়। এইখান থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, তারপর বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন। আর এই কলেজেই অধ্যাপনা করতেন শিশির ভাদুরী। তখনও শিশির ভাদুরী অভিনয় জগতে প্রবেশ করেননি। সেই সময়ে একবার আশুতোষ মুখোপাধায়কে  সংবর্ধনা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে  ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদের রঘুবীর নাটক মঞ্চস্থ করার ব্যবস্থা করা হয়। এই নাটকে নাম ভূমিকায় ছিলেন শিশির ভাদুরী আর এখানেই শ্যামলী চরিত্রে ধীরেন দাসের প্রথম মঞ্চাবতরণ। ইতিমধ্যে পিতার মৃত্যু হয়েছে। আর পিতার উৎসাহে ও নির্দেশে ধীরেন্দ্রনাথ পরিণয় সূত্রে আবধ্য হয়েছেন বিজয়া দেবীর সঙ্গে। পিতার মৃত্যুর পর তিনি কিছুদিন কাজ করলেন লয়েডস ব্যাংকে। যাই হোক শিশির ভাদুরী অধ্যাপনা ছেড়ে পেশাদার মঞ্চে যোগদান করেছেন।

১৯২৪ সালে যোগেশ চন্দ্র চৌধুরীর সীতা নাটকের লব ও কুশ চরিত্র অভিনেতার  প্রয়োজন হয়ে পড়লো। ধীরেন দাসের সাথে তো আগেই পরিচয় ছিল। শিশির ভাদুরী বললেন ধীরেন দাসকে তুমি করতে চাও এই চরিত্র। ধীরেন দাস তো এককথায় রাজি হলেন মার বারণ সত্বেও। সন্তোষ সিংহ মহাশয় যার সাথে ধীরেন দাসের পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা ছিলো। সন্তোষ সিংহের অনুরোধে মা রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু শিশির ভাদুরী বললেন। অন্য কিছু করতে পারবেন না বরং এই মঞ্চে কাজ করতে গেলে পেশাদারি শিল্পী হিসেবে যোগদান করতে হবে।

এই মঞ্চে শিশির ভাদুরীর সাথে তিনি অনেক নাটকে অভিনয় করলেন সাথে নাটকের গান ও গাইলেন। ১৯২৬ থেকে তাঁর যাত্রা শুরু হলো একদম পেশাদারী ভাবে। অভিনয় ও সংগীতে পারদর্শী সমান ভাবে পারদর্শী এইরকম শিল্পী তখন সত্যি খুব কম ছিল। তিনি গান শিখেছেন বিখ্যাত গায়ক রাধিকা প্রসাদ গোঁসায়ের কাছে, তারপর সাতকরি মালাকার ও জ্যোতিষপ্রসাদের কাছে। এরই মধ্যে একটা উল্লেখ যোগ্য ঘটনা ঘটলো ধীরেন দাসের জীবনে। এটাকে মাহেন্দ্রক্ষণ বলা যায়।

তাঁর পিতৃ বন্ধু ভূতনাথ দাস তাঁকে নিয়ে গেলেন গ্রামোফোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করাতে। এই গ্রামোফোন কোম্পানিতে ভূতনাথ দাসের সহকারী রূপে কাজ করার সুযোগ পেলেন বছরখানেক এই ভাবে কাজ করার পর তিনি মানে ধীরেন্দ্র নাথ দাস সুরকার ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। যখন তিনি গ্রামোফোন কোম্পানিতে ছিলেন।

১৯২৭ এর সময়ে বা কিছু আগে ধীরেন দাসের প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হলো (p 8732) এইচএমভি থেকে। নরনারায়ন নাটকে যে গান দুটি গেয়ে জনাদর পেয়েছিলেন 'মন্দিরে একা বসে' আর কোন বেনিতে ব্রজের কানু স্থান পেলো তাঁর প্রথম রেকর্ডে। সেকালে তখন ইলেক্ট্রিক্যাল রেকর্ডিং চালু হয়নি। শিল্পীকে একটা টিনের  চোঙ্গার সামনে বসে উচ্চ স্বরে গান গাইতে হত। তারপর সেই চোঙ্গার মধ্যে দিয়ে গান ঘূর্ণায়মান মোমের চাকতির ওপর পিনের সাহায্যে স্ক্র্যাপ করে দিত - সেই স্ক্রেপিং ভাইব্রাশনে গান বাধা থাকতো। মোমের চাকতির থেকে সেগুলি তামার চাকতিতে ছাপ তোলা হতো। যাকে বলে ম্যাট্রিকস। পরে সেই তামার চাকতি থেকে গালা ইবোনাইট মিশ্রিত নরম চাকতিতে সেগুলোকে ছেপে তুলতে হতো। চাকতি শক্ত হওয়ার সময়ে লেবেল লাগিয়ে রেকর্ড করে ছাড়া হতো। এইচএমভির রেকর্ডিং স্টুডিও তখন বেলেঘাটায় আর রিহার্সাল হতো চিৎপুরের গরানহাটায় বিষ্ণু ভবনে। এইচএমভি তখন ডাকসাইটে শিল্পী ছিলেন কে মল্লিক, কৃষ্ণ চন্দ্র দে, আঙুরবালা ও ইঁদুবালা। সকলেই নিয়মিত আসতেন

বিষ্ণু ভবনে। এই গ্রামোফোন কোম্পানীর সূত্রে ধীরেন দাসের আলাপ হলো সেকালের সবচেয়ে বড় উস্তাদ জমিরউদ্দিন খাঁ সাহেব, এছাড়া আঙুরবালা ও ইঁদুবালা আছেন। এদের মধ্যে ধীরেন দাস তালিম নিলেন কৃষ্ণ চন্ড দে ও জমিরউদ্দিন খাঁ সাহেবের কাছে।

এরই মধ্যে আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গেল। তরুণ নজরুল এলেন গ্রামোফোন কোম্পানীতে। জমিরউদ্দিন খাঁ সাহেব বললেন ' নজরুল তুমি এইবার কোম্পানির ভার নাও আমি আর পারছি না'। নজরুল বললেন উচ্চ হারে রোয়েলটি দিতে হবে বাকি যা বলবেন করবো'।

তখন সর্বময় কর্তা ছিলেন সঙ্গীতের ব্যাপারে জমিরউদ্দিন খাঁ সাহেব। তারপর এলেন কাজী নজরুল। নজরুল বললেন আমার সহকারী হবে ধীরেন দাস। আর প্রথম গান উনি গাইবেন। আর কবি খুশি হলে ধীরেন দাস হবেন গানের প্রধান ট্রেনার। তাই হলো কথা মতো। নজরুল মুদ্ধ হলেন ধীরেন দাসের গান ও স্মৃতি শক্তি দেখে। এবং ধীরেন দাস হয়ে গেলেন তখন থেকে গ্রামোফোন কোম্পানীর ট্রেনার। বাকি টা তো ইতিহাস।

নজরুল আসার মাস কয়েক বাদেই কে মল্লিকের বাগিচায় বুলবুলি আর ও আমারে চোখ ইশারায় এই দুইটি আলোড়ন ফেলে দিলো। নজরুলের গান গেয়ে কে মল্লিক বাজার মাত করলেন। এই ভাবে নজরুলের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর গ্রামোফোন কোম্পানি বহু গান রেকর্ড করেছেন। গান তুলিয়েছেন নজরুল এবং ধীরেন দাস। আঙুরবালা ও ইঁদুবালা দুইজনেই তাঁদের স্মৃতি কথায় বলেছেন, নজরুল এবং ধীরেন দাসের ঋণ তাঁরা কোনোদিন ভুলতে পারবে না। তখন রেকর্ড লেভেলে সুরকার ও গীতিকারের নাম থাকতো না ফলে বহু শিল্পী সুরকার ও গীতিকারের নাম হারিয়ে গেছেন জনমানসের স্মৃতি থেকে।

কিন্তু সেকালের গায়ক ও গায়িকা কেউ ধীরেন দাসকে ভোলেন নি। বরং বুকে আগলে রেখেছেন এই মহান প্রতিভাকে। ধীরেন দাস প্রায় ৫০০ ওপর গান রেকর্ড করেছেন। ভাবা যায়? তবু আজকের মানুষ এই সব কিছুই জানে না। তিনি এইচএমভি ছাড়াও মেগাফন কোম্পানির সাথে ও যুক্ত ছিলেন।

রেখা নাট্য প্রবর্তনের সাথেও ধীরেন দাসের নাম জড়িয়ে আছে। অর্থাৎ নাটক রেকর্ড করা, সাথে গান ও থাকতো। তিনি এই রেকর্ডের নাটকে প্রচুর অভিনয় করেছেন। তাঁর জন্য বিশেষ ভাবে কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করলেন বিদ্যাপতি। এই রেকর্ডে কৃষ্ণ চন্দ্র গান গাইলেন আর অভিনয় করলেন ধীরেন দাস। তিনি প্রচুর রেকর্ডে সুর করেছেন, গান গেয়েছেন এবং অভিনয়ও করেছেন পারদর্শিতার সাথে। এই ধীরেন দাস নির্বাক এবং সবাক ছবিতেও কাজ অনেক কাজ করেছেন। তিনি পুরো যুগটা দেখেছেন এই নির্বাক থেকে সবাক যুগের রূপান্তর।

তবে  আরও একটা কথা বলা দরকার। এই কমলা ঝরিয়া ও বীনাপানী দেবীও যুক্ত ছিলেন এই গ্রামোফোন কোম্পানীর সাথে। এরা সবাই ধীরেন দাসকে শ্রদ্ধা করতেন তাঁর বহুমুখী প্রতিভা আর মানবিকতার জন্য। গ্রামোফোন কোম্পানীর লায়লা মজনু রেখা নাট্যটি খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। নাটকটিতে সুর দেন কমল দাশগুপ্ত লায়লা মজনু চরিত্রে ছিলেন যথাক্রমে পাইকপাড়ার সরজুবালা ও ধীরেন দাস।

নাট্যমঞ্চে, রেকর্ড জগতে, রেডিও ও চলচিত্রে প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে ধীরেন দাস যে প্রতিভার পরিচয় রেখেছেন তা খুব শিল্পীর মধ্যে দেখা যায়। তবে এর মধ্যে আর একটা কথা বলা দরকার। এই কাজী নজরুলকে  নিয়ে এসেছিলেন এই ধীরেন দাস গ্রামোফোন কোম্পানিতে আর তাঁর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন ম্যানেজার ভগবতী ভট্টাচার্য। বহু বাদনুবাদের পর নজরুল বললেন, 'আমি একটি শর্তে এই কোম্পানীতে যোগ দেব'। সেইটা কি? তিনি মানে নজরুল ছাড়া আর কেউ সুর রচনা করতে পারবেন না। এই শর্ত নজরুল সর্ব প্রথম ভঙ্গ করেন ধীরেন দাসের ক্ষেত্রে। ধীরেন দাস  প্রথম যে নজরুল সংগীতটির সুর করেন সেটি হলো কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন। এই গানটি গেয়েছেন সেকালের আর এক বিখ্যাত গায়ক মৃনাল কান্তি ঘোষ। তবে ধীরেন দাসের সব চেয়ে জনপ্রিয় গানটি হলো

আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও

জননী এসেছে দ্বারে।

এই গানটা সুপার ডুপার হিট ছিল। ওই কলকাতায় এবং বাংলাদেশে এই গান সবাই গুনগুন করতো।

তিনি দ্বৈত সংগীত গেয়েছেন যে সব শিল্পীদের সাথে  তাদের হরিমতি, আঙুরবালা, ইঁদুবালা, আশ্চর্যময়ী, কমলা ঝরিয়া, বীনাপানী প্রভৃতির নাম করা যেতে পারে। এই আঙ্গুরবালা প্রথম দিকে থাকতেন কাশীপুরে। আর ওই খান থেকেই আসতেন পাইকপাড়ার সিমলাই পাড়ার বাড়িতে।

১৯৪৪-৪৫ সালে ধীরেন দাস তদানীন্তন পশ্চিম বাংলা সরকারের প্রচার বিভাগের সাথেও জড়িত ছিলেন। তিনি ওই বিভাগে এক বৎসর কাজ করেছিলেন। বর্তমানে পুত্রেরা উপার্জনক্ষম হবার সঙ্গে সঙ্গেই শিল্প জগৎ থেকে বিশ্রাম নিলেন। সংসারের ব্যাপারে তিনি প্রায় কিছুই দেখতেন যা দেখতেন সবই স্ত্রী বিজয়া দেবী। সংগীতজ্ঞ রাজ্যেশ্বর মিত্র বলেছেন 'ধীরেনবাবু প্রচার বিমুখ ছিলেন। কারণ উনাকে স্টেজে খুব কমই দেখা যেত অনুষ্ঠান করতে। আবার সেইটা পূরণ হয়ে যেত গানের রেকর্ডে। তিনি আরও বলেছেন আমরা যখন কলেজে পড়ছি তখন উনি খ্যাতির শীর্ষে।' তাঁর প্রথম সবাক ছবি ছিল প্রহ্লাদ আর শেষ ছবি মহা কবি গিরিশ চন্দ্র। শেষ করার আগে আমার নিজের একটা স্মৃতি মনে পড়ছে।

তখন ১৯৬০ সাল। আমি  জানলা দিয়ে দেখতাম, উনি ইজি চেয়ার এ বসে টিনের বক্সের লম্বা লম্বা সিগারেট খাচ্ছেন। তখন আমার ১১বছর বয়স মাত্র। খুবই গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তিনি।উনার সাথে কোনোদিনই কথা হয়নি আমার। উনার  স্ত্রী মানে মাসিমার সাথে আমার প্রায়ই কথা হত।উনার স্ত্রীর নাম ছিল বিজয়া দেবী। উনার সাত পুত্র ও পাঁচ কন্যা ছিল। তার মধ্যে মধ্যম পুত্র অনুপ কুমার সিনেমা জগতে এক খ্যাতির চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। এই অনুপকুমার মানে মেজদার সাথে আমার সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। এই পরিবারের সবাই সংগীতে  ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। এই অনুপ কুমারের জামাইবাবু ছিলেন পরিচালক মৃনাল সেন। গোটা পরিবার টা বাংলার সংস্কৃতির সাথে যুক্ত থাকতো।

যাই হোক তখন ১৯৬১ সাল আমি গেলাম ওই ১২সি বাড়ির কাছে। গিয়ে দেখলাম ব্যাপক ভীড়। কেন ভীড় ধীরেন দাস মারা গেছেন। উত্তম কুমার এসেছেন শেষ দেখা দেখতে। আমিও দেখলাম উত্তম কুমারকে। হটাৎ বেরিয়ে এলেন ঘরের বাইরে মধ্যম পুত্র মানে অনুপকুমার (আমাদের কাছে মেজদা)। আর চিৎকার করে বললেন আমার বাবা মারা গেছেন। আর আপনারা উত্তম কুমার দেখতে এসেছেন?

এই বলার সাথে সাথে ভীড় কমতে থাকলো কিন্তু কেউ চলে গেলেন না খালি সবাই একটু দূরে সরে গেলেন। এই স্মৃতি আজও মনে আছে। বাংলা সংগীতের ইতিহাস যদি ঠিক মতো লিখতে হয় তাহলে ধীরেন দাসকে বাদ দিয়ে লেখা যাবে না।কিন্তু হায় বাঙালি বলতে লজ্জা নেই যে আজ বাঙালি হলো বিস্মরণ প্রিয় জাতি। পরিশেষে বলি এই ধীরেন দাসের জন্য পাইকপাড়া ধন্য।

সূত্র:

জন্ম শতবর্ষে ধীরেন্দ্র নাথ দাস, বইটি প্রকাশ করেছেন ধীরেন দাস স্মৃতি রক্ষা কমিটি।

নজরুলের যে গান গুলিতে ধীরেন দাস সুর দিয়েছেন তাঁর তালিকা

১) আর লুকাবি কোথায় মা কালি

২) উতল হলো শান্ত আকাশ

৩) এস হে সজল শ্যাম

৪) বেদনা বিহুল পাগল

৫) রাত্রি শেষের যাত্রী আমি

৬) এসেছি তব দ্বারে

৭) অকূল তুফানে নাইয়া

৮) একলা ভাষাই গানের কমল

৯) বিজন গোঠে কে রাখাল বজায় বেনু

১০) কথা কও কথা কও হে দেবতা

১১) হরি নাচত নন্দ দুলাল

১২) আমারে চরণে দিও ঠাই

১৩)  বাঁশিতে সুর শুনিয়ে

১৪) জয় বাণী বিদ্যাদায়িনী এবং মধুমালা নাটকের কিছু সংখ্যক গান।

(www.theoffnews.com - Dhirendranath Das)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours