শাহনাজ পলি, সাংবাদিক, বাংলাদেশ:

বাংলাদেশ উন্নতির গতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে এ বছর পূর্ণ করল ৫০ বছর। এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যাবে না। 

কয়েক দশকে শিল্প, বাণিজ্যে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। ৫০ বছর আগে এই মাসেই গণহত্যা, দারিদ্র্য আর অনাহারের মধ্যে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ। হেনরি কিসিঞ্জার তখন দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এ দিনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরও। নানা রঙে নানা ঢঙে এবার তাই উদযাপনেও যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক। এ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে, যা শুধু স্থানীয় পর্যায়েই নয়, বিশ্বপরিসরেও ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছে।

১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা হয়েছিল একটি ভূখণ্ড, যার নাম বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বর্নীল সাজে সেজেছে রাজধানী ঢাকা। সরকারি অফিস ও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়েও সেই ছোঁয়া লেগেছে। আলোকসজ্জায় রঙিন রাজধানী যেন পরিণত হয়েছে একখণ্ড লাল সবুজ পতাকায়। রাজধানীর হাইকোর্ট, সচিবালয়, ফাইভ স্টার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সোনার গাঁ, জাতীয় সংসদ ভবনসহ অনেক ভবনে ঝুলছে লাল সবুজের চোখ জুড়ানো আলোকসজ্জা। 

শহরজুড়ে সন্ধ্যা থেকেই সেই আলোতে ঝলমলিয়ে ওঠে পুরো নগরী। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হরেক ছবি। রাজধানীর বিজয় সরণির দুই পাশে নানা ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।

কয়েকদিন ধরেই রাতের এ আলোক উজ্জ্বল দৃশ্য দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন নগরবাসী। উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। 

সেজেছে বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দলটি ‘জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রতিকৃতি দিয়ে সাজিয়েছে নয়া পল্টনের কার্যালয়। ভবনের সামনে বসানো হয়েছে বড়পর্দার টেলিভিশন।

রাজধানী ছাড়াও অন্য জেলা উপজেলায়ও লাল সবুজের রঙের ছটা লেগেছে।

মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দিচ্ছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হবে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনায় প্রার্থনা। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে।

'মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে। শুক্রবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে তা শেষ হচ্ছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।

অনেক প্রাপ্তি নিয়েও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবার উদযাপিত হচ্ছে অন্যরকম ভাবে। তবে এ সময়টা একটু ভিন্ন, চলছে বৈশ্বিক মহামারি। বাংলাদেশসহ চারদিকে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবা। এর মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ অনুষ্ঠান। 

বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠানে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, ২২ মার্চ অনুষ্ঠানে নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী, ২৪ মার্চ অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং উপস্থিত ছিলেন। আজ ২৬ মার্চ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত রয়েছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ এমন একটি দিন যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই দিনে ঘুমন্ত অবস্থায় বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। গতকাল ২৫ মার্চ ছিল জাতীয় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই রাতে পাক-হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে চালায় বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি তারবার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় প্রচার করা হয় তার স্বাধীনতার ঘোষণা।

শত বাধা অতিক্রম করে নয় মাস যুদ্ধ করে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ফিরে তাকায়নি, দেশটি সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার অফুরন্ত প্রাণশক্তি এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, প্রবাসী কর্মীরা। খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমে-ঘামে গড়ে উঠছে অর্থনীতির ভিত। স্বাধীন বাংলাদেশ।

(www.theoffnews.com - 50th independence day Bangladesh)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours