ইসহাক খান, মুক্তিযোদ্ধা, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট, বাংলাদেশ:

নৌকায় উঠে আমরা হৈচৈ আর আনন্দে মেতে উঠলাম। যেন বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছি। আসলেই আমরা বন্দি ছিলাম। যুদ্ধ করতে এসে বন্দি থাকার যে কষ্ট সেটা আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।

এখন আমরা মুক্ত। দেশের অভ্যন্তরে যাচ্ছি। চেনা জায়গায় আমরা হাঁটবো, চলবো, ঘুরবো। আক্রমণে প্রচুর সুবিধা পাবো আমরা। একই সঙ্গে পালানোর পথও উন্মুক্ত থাকবে। 

নৌকা ছাড়ার পর আনন্দে আমরা গলা ছেড়ে কোরাস কণ্ঠে যুদ্ধের গান গাইতে শুরু করলাম। ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে। আমরা ক’জন নবীন মাঝি হাল ধরেছি শক্ত করে—রে, তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’।                 

আমাদের নৌকার মাঝিরাও আমাদের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠলো। গলা মেলালো আমাদের সঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ওরাও বাংলাদেশের নাগরিক। পাকিস্তানি মিলিটারির নির্যাতনে তাদের অন্তরও ক্ষত বিক্ষত। দেশ থেকে পালিয়ে এই বিদেশে বিভুয়ে এসে মাঝির কাজ করে জীবন চালাচ্ছে। দাড়িওয়ালা একজন মাঝি আমাকে বলে, ‘আপনাদের দেইখা মনে অইতাছে না আপনারা যুদ্ধে যাইতাছেন। মনে অইতাছে আপনারা পিকনিকে যাইতাছেন।’ 

বৃদ্ধ মাঝির কথায় আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম। বললাম, ‘চাচা, ঠিকই কইছেন। আমরা আসলেই পিকনিকে যাচ্ছি। মনে ফুর্তি না থাকলে আমরা যুদ্ধ করতে পারবো না চাচা। যুদ্ধের ভয়াবহতা মনে হলে কঠিন ভাবনা এসে বুকে চেপে ধরে। সেই ভাবনা কাটতে আমরা সবসময় আনন্দে থাকি। মৃত্যু আমাদের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটে চাচা। যেকোন মুহূর্তে একটি গুলি এসে আমার প্রাণবায়ু কেড়ে নিতে পারে। মরতে যখন হবে তখন অযথা ভেবে লাভ কি চাচা। তাই আমরা সুযোগ পেলেই আনন্দে মাতি।’ 

আমার কথা শুনে চাচার মনটা বেদনায় ভারাক্রান্ত হলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাচা বললেন, ‘সব আল্লাহ্‌ পাকের ইচ্ছা। দেশে যুদ্ধ হবে। এটা তিনি ঠিক নির্ধারণ করছেন। এই জন্যে আপনাদের মতো সোনার ছেলে তিনি জন্ম দিয়া রাখছেন।’ 

চাচা কথায় আমি হাসলাম। বললাম, ‘চাচা, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’ 

চাচা দু’হাত উপরে তুলে আবেগে আপ্লুত কণ্ঠে বললেন, ‘শুধু আমি না, দেশের কোটি কোটি মানুষ আপনাদের জন্য সবসময় দোয়া করতাছে। আপনারাইতো আমাদের একমাত্র ভরসা। ওই জানোয়ারদের হাত থাইকা দেশের লোকদের বাঁচানোর আরতো কেউ নাই।’ এইটুকু বলেই চাচা কেঁদে ফেললেন। তার গাল বেয়ে পানির স্রোত বইতে লাগলো। দেখে আমার কান্না উসকে উঠতে লাগলো। কান্না ভীষণ সংক্রামক ব্যাধি।  অন্যের কান্না দেখে নিজের ভেতর কান্না চেপে বসে। অনেক কষ্টে কান্না চেপে আমি সবার সঙ্গে গানে মেতে উঠলাম। 

নৌকা চলছে। কোনদিকে যাচ্ছে নৌকা আমাদের সেদিকে তাল নেই। আমরা মেতে আছি বাঁধভাঙা আনন্দে। 

দুপুরের পর মাঝিরা নৌকা ভেড়ালে জায়গাটা চেনা চেনা মনে হলো। হ্যাঁ, অবশ্যই জায়গাটা পরিচিত। গ্রাম থেকে যখন পালিয়ে এসেছিলাম, এখানেই প্রথম নৌকা ভিড়িয়ে ছিল। জায়গাটার নাম মাইনকারচর। এখান থেকে হেঁটে গিয়ে ৫/৬ মাইল দূরে রংপুর জেলার রউমারি ইয়ুথ ক্যাম্পে ভর্তি হয়েছিলাম। এই মাইনকারচরের ‘মরনটিলা’ পাহাড় থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য তুরা গিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণ শেষে আবার আমরা সেই আগের জায়গায় ফিরে এসেছি। কি অদ্ভুত গোলকধাঁধা। জীবনের প্রয়োজনে যে জায়গা ছেড়ে গিয়েছিলাম, সময় আবার আমাদের সেখানেই টেনে আনলো। 

কিন্তু এখানে নৌকা ভেড়ানোর মানে কি? আমি আশরাফ ভাইকে সে কথা জিজ্ঞেস করতে আশরাফভাই নিচু কণ্ঠে দৃঢ় ভাবে বললেন, ‘আমাদের দলের বাকি আর যারা মাইনকারচর আছে তাদের নিয়ে যেতে হবে না?

কথা ঠিক। তাদের আমরা রেখে যাব কেমন করে? তাহলে তাদের কি উপায় হবে? কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে উচিৎ ছিলো তাদের এখানেই রেখে যাওয়া। কথাটা কমান্ডার আশরাফভাইয়ের মুখের উপর বলতে পারলাম না। 

মাইনকারচর থেকে নৌকা ছাড়তে রাত হয়ে গেল। নৌকা ছাড়ার আগে জমপেশ খাওয়া জুটলো আমাদের ভাগ্যে। সিরাজগঞ্জের এমপি সৈয়দ হায়দার আলী খাওয়ার আয়োজন করলেন। তিনি বাকিদের নৌকায় তুলে দিয়ে গেলেন। সঙ্গে প্রচুর ভারী ভারী অস্ত্র। ভারী অস্ত্র দেখে আমরা খুশিতে আটখানা। এখন আমরা স্বয়ং সম্পূর্ণ। যে কোন শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা এখন লড়াই করতে প্রস্তুত। 

আমূল বদলে গেল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন আমাদের টি এইচ শামীম কম্পানি। টি এইচ শামীমের নামানুসারে আমাদের কম্পানির নাম শামীম কম্পানি। তুরার পাহাড়ে ভারতীয় প্রশিক্ষকরা যাকে আমাদের কমান্ডার নিযুক্ত করে দিয়েছিল মাইনকারচর এসে আমাদের সেই কমান্ডার বদলে গেল। শামীমভাইয়ের স্থলে কমান্ডার হলেন তৌহিদ ভাই। এই সিদ্ধান্ত এম পি হায়দার আলীর। তিনি আমাদের সবার সামনে এই ঘোষণা দিয়ে তৌহিদভাইয়ের হাতে পতাকা তুলে দিলেন এবং তৌহিদভাইয়ের কমান্ড মানতে আমাদের তিনি আদেশ মিশ্রিত অনুরোধ করলেন।

আমরা যুদ্ধে গিয়েছি মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য। কে কমান্ডার হলো আর কে হলো না, এইসব নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা ছিল না। নেতৃত্ব নিয়ে তৌহিদভাইয়ের জটিলতা ছিল। শামীমভাইয়ের মধ্যে সেই জটিলতা আমরা দেখিনি। তারপরও কথা থেকে যায়। তিনি এতদিন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে সরিয়ে তার স্থলে অন্যকে কমান্ডার করলে স্বাভাবিকভাবে তার ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগার কথা। অবশ্য শামীমভাইকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না তিনি দুঃখ পেয়েছেন কিনা। আমাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছেন। হাসছেন। তার ভেতরে কি ধরণের ঝড় বইছে তা শুধু একমাত্র তিনি জানেন। 

আমি অবশ্য ভিন্ন আনন্দে মেতে ছিলাম। সুকুর মামুর সঙ্গে আমাদের বন্ধু জহুরুল ফিরে এসেছে আমাদের দলে। জহুরুল, মোস্তফা, রাজ্জাক এবং খোকন তখনও রউমারি ক্যাম্পে ছিল। কিন্তু তারা কেউ আসেনি। শুধু জহুরুল এসেছে। বাকিরা পানিঘাটা ক্যাম্পে উচ্চতর ট্রেনিং নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকেছে। 

জহুরুলকে সঙ্গে পেয়ে আমি এবং আসগর দুজনেই মহাখুশি। কত কথা জমা হয়েছিল, খুটে খুটে সব বললাম। কথা যেন শেষ হতে চায় না। 

আমাদের দলে এসে জহুরুলও খুশি। তবে অন্য বন্ধুদের ছেড়ে আসায় মনটা বিষণ্ণ ছিল। 

আমি বললাম, ‘তাড়াতাড়ি দেশের মধ্যে ঢুকতে পারছিস এটা কি কম বড় কথা। ওদের সঙ্গে থাকলে দেশের মধ্যে ঢুকতে আরও সময় লাগতো।’ 

‘তা ঠিক। কিন্তু এতদিন একসঙ্গে ছিলাম। আমি ওদের ছেড়ে একাই দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লাম ওরা নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে। আমাদের অভাবটা ওরা বেশি করে ফিল করবে।’ জহুরুল বিমর্ষ কণ্ঠে মুখ নামিয়ে বললো। 

বাকি তিন বন্ধুর বিমর্ষ মুখগুলো আমাদের দৃষ্টিতে এসে দোল খেতে লাগলো। বাড়ি থেকে আমরা একসঙ্গে বেড়িয়ে ভারতে এসে নিজেরা নিজেরা আলাদা হয়ে গেলাম। এই ভাঙ্গনের বেদনা সারা জীবন আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে। 

টানা দুদিন চলার পর আমরা সিরাজগঞ্জ মহুকুমার কাজিপুর থানার চর এলাকায় একটি গ্রামে এসে পৌঁছলাম। সে রাতের মতো সেই গ্রামেই আমরা আশ্রয় খুঁজে নিলাম। গ্রামের মানুষজন খুব আগ্রহ নিয়ে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলেন। তাদের উৎসাহ দেখে আমরা অবাক। তাদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তারা এতদিনেও মুক্তিযোদ্ধা দেখেনি। খুব আফসোস ছিল তাদের। এতদিন তারা শুধু মুক্তিবাহিনীর নাম শুনেছে কিন্তু চোখে দেখেনি। এই নিয়ে তাদের হতাশাও ছিল বেশুমার। কেউ কেউ হতাশা উসকে দিয়ে বলেছেন, ‘মুক্তিবাহিনী কোথায় পাবে? কার এমন সাহস যে শক্তিশালী পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে? সব গুজব। গুজব ছড়াইয়া মানুষের সাহস বাড়াইতে চাইতাছে। তাতে কি মানুষের সাহস বাড়ে? বাঙালির সাহস গর্তে ঢুইকা গেছে। তারা আর সোজা হয়া দাঁড়াইতে পারবে না। সে কাম পাকিস্তানিরা সাইরা দিছে।’ 

আমাদের দেখে তাদের আবেগ তাই যমুনার স্রোতের মতো পাক খেয়ে বলগ দিয়ে উঠছে। একসঙ্গে দেড়’শ জন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা দেখে তাদের যেন আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই। 

দুদিন আমাদের কাটলো আয়েশি ভাবে। এর পর যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হলো। পাকিস্তানি মিলিটারির খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য চারদিকে গুপ্তচর পাঠানো হলো। কয়েকজন কলেজ ছাত্রের কাছে জানা গেল, কয়েক গ্রাম পর থানার কাছাকাছি একটি গ্রামে একজন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আছে। ব্যাটা প্রতিদিন পাকিস্তানি মিলিটারি ডেকে এনে বাঙালিদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। যুবকদের মিলিটারির হাতে তুলে দেয়। যুবতি মেয়েছেলে পেলে তাদের রক্ষা নাই। তাদের পাকিস্তানি মিলিটারির ভোগের সামগ্রি হিসেবে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তার এত এত কুকর্মের কাহিনী শুনে আমাদের কমান্ডাররা ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। ঘরের শত্রু আগে শেষ করতে হবে। বাইরের শত্রু চেনা যায়। ঘরের শত্রু চেনা যায় না। তারাই বেশি ক্ষতিকারক। তাদের বাঁচিয়ে রেখে যুদ্ধ যাত্রা চরম বোকামি। আজ রাতেই তাকে ধরতে বাহিনী যাবে। আশরাফভাইকে দায়িত্ব দেওয়া হলো অপারেশনের। তিনি নেতৃত্ব দেবেন এই অপারেশনের। আমি অপারেশন দলে অন্তর্ভুক্ত হলাম। যাওয়ার আগে আমাদের জানানো হলো ওই ব্যাটা কুকুরকে কয়েকজন রাজাকার পাহারা দিয়ে রাখে। আমাদের কৌশল যেন তেমনি চৌকস হয়। 

দেশি শত্রুকে খতম করতে আমরা রাত দশটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের পথ দেখিয়ে দুজন কলেজ ছাত্র আগে আগে যাচ্ছে। ওদের একজনের নাম হাবিব। বাকি জনের নাম মনে নেই। 

প্রায় ৭/৮ মাইল পথ পায়ে হেঁটে আমরা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের গ্রামে এসে উপস্থিত হলাম। হাবিবরা তার বাড়ি চিনিয়ে দিয়ে দূরে সরে গেল। আমরা গভীরভাবে বাড়িটি পর্যবেক্ষণ করে তারপর বাড়িটি ঘিরে ফেললাম। 

এই সময় পাশের বাড়ির একজন গ্রামবাসী জেগে বাইরে এলে আমাদের মুখোমুখি হয়। সে বুঝতে পারেনি আমরা কারা? কি আমাদের উদ্দেশ্য? তাকে ব্যাপারটা বলার পর সে অতি উৎসাহে আমাদের সব বলতে লাগলো। তার কাছেই আমরা জানতে পারলাম কোন ঘরে চেয়ারম্যান থাকে। কোন ঘরে রাজাকাররা থাকে। আমরা সব জেনে সঙ্গে সঙ্গে রাজাকারদের ঘরের দরজায় নক করি। সবাই তখন অস্ত্র তাক করে পজিশন নিয়ে আছে। রাজাকাররা হুংকার দিয়ে দরজা খোলামাত্র কয়েকটি বেয়োনেট একসঙ্গে চার্জ হলো। কোন শব্দ করার আগে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো চারজন রাজাকার। তারপর আমরা চেয়ারম্যানের ঘরের দরজায় গিয়ে দেখলাম দরাজা খোলা। ব্যাটা পালিয়েছে। আমাদের পাহাদারদের চোখ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব না। আমাদের একজন চিৎকার করে বললো, ‘ওই যে ব্যাটা পালাচ্ছে। উত্তর দিকে যাচ্ছে। উত্তর দিকের বাহিনী সাবধান।’

ততক্ষণে বাড়ির সব লোক জেগে গেছে। চেয়ারম্যানের স্ত্রী ছেলেমেয়েরা চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিয়েছে। তাদের এই লোক দেখানো কান্নায় আমাদয়ের মন গলবে না। আমাদের মা-বোনের কান্না তার চেয়েও অনেক ভারী হয়ে আমাদের বুকে জমে পাথর হয়ে আছে।           

জীবনের মায়ায় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাচ্ছে আর আমরা সেই বেঈমানকে ধরার জন্য অস্ত্র উঁচিয়ে পেছনে-পেছনে ছুটছি। জমিতে তখন বুক সমান আমন ধান। হারামজাদা ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে পালাচ্ছে। বুক সমান ধান মাড়িয়ে আমরা সমানতালে এগুতে পারছি না। একটুপর তাকে হারিয়ে ফেললাম। আমরা টর্চ লাইটের আলো ফেলে খুঁজছি। শিকার হাত থেকে ফসকে গেল। ভীষণ আফসোস হতে লাগলো। আমরা হতাশভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছি আর টর্চ লাইটের আলোতে তাকে খুঁজছি। এইসময় আমাদের একজন যোদ্ধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ‘হারামজাদারে পাইছি।’ 

আমরা ছুটে গেলাম সেই যোদ্ধার কাছে। হারামজাদা জানোয়ার নিজের জীবন বাঁচাতে মাটিতে উবু হয়ে বসেছিল। আমাদের ওই যোদ্ধা খুঁজতে গিয়ে ওর পায়ের সঙ্গে কি যেন ধাক্কা লাগে। লাইট জ্বালিয়ে দেখে একজন মানুষ। বর্ণনা মতো চেহারার মিল পেয়ে খপ করে চুলের মুঠি ধরে অমনি অস্ত্র তাক করে বুকে। 

আমরা ছুটে গিয়ে দেখি, মাঝবয়সী গাড়ল মার্কা চেহারার একজন ব্যক্তি, মাথায় টুপি, থুতনিতে এক গোছা দাড়ি, হাত জোড় করে ভয়ে কাঁপছে। 

আমাদের দেখে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমারে মাফ কইরা দেন। আমি ভুল করছি।’ 

আমাদের একজন কষে লাথি ঝেরে বলে, ‘কত মা বোন এইভাবে হাতজোড় কইরা তোর কাছে মাফ চাইছে। তুই কি তাদের মাফ করছস?’ 

একজন চুল ধরে টেনে তুলে বললো, ‘কান ধর। কান ধইরা সারা পথ যাবি আর বলবি, হে দেশবাসি, তোমরা শোন, আমি বড় ভুল করছি। মহা অন্যায় করছি, তোমরা আমাকে জুতা মারো।’ 

ব্যাটা রাজাকার মৃত্যু ভয়ে কান ধরে তাই বলতে বলতে আমাদের সঙ্গে চললো। কিছুদূর যাওয়ার পর তাকে আমাদের থেকে আলাদা করা হলো। তারপর খালের পাড়ে নিয়ে গাদ্দারকে নিরাপদে ঘুম পাড়িয়ে রেখে  দলে যোগ দিতে আমরা আয়েশি ভঙ্গিতে রওনা হলাম। [চলবে] 

(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)

(www.theoffnews.com - Bangladesh muktijuddho)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours