দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

স্মার্টফোনের দৌলতে আজ সারা বিশ্ব পরিণত হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজে। আর এই রূপসী বাংলার ভোট বৈতরণী মরশুমে স্মার্টফোনের পালকে বিজয় প্রদীপের সলতে পাকাচ্ছে শাসক দল। এমনটাই কূটকাচালি এখন বিরোধীদের দুয়ারে। তবে গসিপে নারাজ ঘাসফুলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। তাদের একটাই বক্তব্য, পড়ুয়াদের হাতে হাতে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর ঔদার্যে। এটাই তো বাউল ভূমি সহ তামাম বাংলার উন্নয়নের রূপরেখা।

এবার আসল কথায় আসা যাক। একে অনেক দিন পরে দেখা! তার পর হাতে নতুন স্মার্ট ফোন। সবাই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে স্কুলের ইউনিফর্ম পড়ে হাজির হয়েছিল শ্রেয়া, ঊর্মি ও মৌমিতারা!  পরীক্ষায় পাশ করলে যেটা পরিবারের কাছে পাওনা ছিল, সেটা আগেই হাতের মুঠোর মধ্যে চলে এল! তাই মুঠোর মধ্যে মুঠফোন নিয়ে একটু আহ্লাদ হবে বৈকি!  অনেকেই  আবেগেই বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেললো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ! তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশের ছবি ধরা পড়লো  রামপুরহাট বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে! যেন কবির ভাষা তাদেরই মনের কথা- “হৃদয় আমার উঠছে দুলে দুলে/ অকূল জলের অট্টহাসিতে”। হাসির আড়ালেও ছিল একটা কথা, এবার তারা নব্য ভোটার!  

আর এখানেই খুব ছোট হলেও, একটা অঙ্ক কাজ করে! তথ্যভিজ্ঞ মহলের ধারণা এবার ভোটে নব্য ভোটারদের একটা অংশ কোন দিকে ঝুঁকতে পারে, তার চুলচেরা বিচার ইতিমধ্যেই আরম্ভ হয়েছে। নির্বাচনী দফতরের বিভাগীয় আধিকারিক  সব্যসাচী সরকার জানান, এবার জেলায় মোট নব্য ভোটারের সংখ্যা ৫৯,৯৫৯। প্রায় ষাট হাজার। এই সংখ্যাটি জেলায় মোট ভোটারের দুই শতাংশের সামান্য কিছুটা বেশি।

এখন সেই ভোট কার ভাঁড়ারে যাবে সেটাও রাজনৈতিক চর্চার বিষয়।  বীরভূম জেলা স্কুল পরিদর্শক লক্ষ্মীধর দাস জানান, এবার জেলায় মোট ২৯ হাজার ৩৮৪ জন দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের এই ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার করে সরকারী সাহায্য দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় দফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় মোট ভোটার ২৭ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪৪৮। যার মধ্যে পুরুষ হলো ১৪ লক্ষ ১১ হাজার ৪৪৮ এবং মহিলা হলো ১৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৩৭ জন।  তাদের মধ্যে অনেকেই আছে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থী। যারা এবারই আঠারো বছর পূর্ণ হওয়ার ফলে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে। বীরভূমের বেশিরভাগ স্কুলে রেগুলার ছাত্রছাত্রীদের এই স্মার্টফোনের টাকা দেওয়া হয়েছে। যেমন বড়শাল উচ্চবিদ্যায়ের ১৩০ জন এবং বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ২২৬ জন পড়ুয়ারা এই সুযোগ পেয়েছে। তবে সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানান, তার স্কুলে শুধুমাত্র তাদেরই দেওয়া হয়েছে যারা উচ্চমাধ্যমিকের ফিজ দাখিল করেছে।

এমনটা নয় যে, সবার হাতের নাগালের বাইরে ছিল স্মার্ট মুঠোফোন। তবে অনেকেই বাবা বা মায়ের ফোনেই কাজ চালাতে হচ্ছিল। কিন্তু অতিমারিতে স্কুল বন্ধ অন লাইন ক্লাস চালাতে খুব সমস্যা কারো কারো অবশ্যই হচ্ছিল। যাদের সামর্থ্য  ছিল না, তাদের জন্য ভাবনা থেকেই সবার জন্য ট্যাব বা মুঠো ফোনের ব্যবস্থা করতেই উদ্যোগী হন রাজ্য সরকার। আর সে কারণেই পড়ুয়াদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক একাউন্টে মুঠো ফোন কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে ঢুকেছে। মুঠোফোন কেনার পর নিজ নিজ স্কুলে তার প্রামাণ্য জমা দিয়েছে সব পড়ুয়ারা। আর তখনই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে তারা।

রামপুরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রেয়া মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি রামপুরহাট পুরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের সারদাপল্লীতে। উর্মি বর্মণের বাড়ি হাটতলা পাড়ার ৫নং ওয়ার্ডে। আর মৌমিতা লেটের বাড়ি ১৫ নং ওয়ার্ডের চালধোয়ানি পাড়া। তারা স্কুলে হাজির হয়েছে সরকার প্রদত্ত মোবাইল কেনার কাগজপত্র স্কুলে জমা দিতে। শ্রেয়া, মৌমিতা ও ঊর্মিরা জানায়, মুখ্যমুন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ মোবাইল কিনে দেওয়ার জন্য। এর ফলে অন লাইন ক্লাস করতে অনেক সুবিধা।

(www.theoffnews.com - West Bengal election smart phone new voters students)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours