ইসহাক খান, মুক্তিযোদ্ধা, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট, বাংলাদেশ: 

একটি ভয়াবহ দুসংবাদ শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আমরা চলে আসার পর দুপুরের দিকে পাকিস্তানি মিলিটারি বড়ইতলী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে অতর্কিত আক্রমণ করে। তুমুল সংঘর্ষ চলেছে দুই পক্ষের মধ্যে। কমান্ডার মোজাম্মেল ভাইয়ের বাহিনীর যোদ্ধারা যতটা ভাব দেখায় যুদ্ধে তারা ততটা পারদর্শী নয়। তাদের সাহসেরও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। তারা সবাই সবুজ রঙের ইউনিফর্ম পরে। মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা। তাদের ভাব-সাবই আলাদা। আর আমাদের দলে কোন ইউনিফর্ম নেই। বেশিরভাগেরই পরনে লুঙ্গি। কারও হাফপ্যান্ট। কদাচিৎ কারও কারও ফুলপ্যান্ট। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে আমাদের ছেলেরা মাটি কামড়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। বড়ইতলী যুদ্ধেও তাই ঘটেছে। পাকিস্তানি বিশাল বাহিনী এবং তাদের ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাঝপথে মোজাম্মেল বাহিনীর যোদ্ধারা পিছু হটে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। আশরাফ ভাইয়ের বাহিনীর আমার সতীর্থ যোদ্ধারা শেষপর্যন্ত লড়াই করেছে। কিন্তু পাকিস্তানি বিশাল বাহিনীর কাছে টিকতে পারেনি। পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। যুদ্ধে আমাদের একজন যোদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছে। পরে পাকিস্তানি মিলিটারি গ্রামে ধ্বংসলীলা চালিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে গ্রামবাসীর বাড়িঘর। খবরটা শুনে মুষড়ে পড়লাম আমরা। আসগর বললো, ‘আমাদের ওখানে শেল্টার নেওয়াটাই ঠিক হয়নি। আমি তখনই না করেছিলাম। কিন্তু আমার কথা কেউ শুনলো না।’    

বিষণ্ণ মুখে আমরা নতুন কমান্ডার তৌহিদভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। আসগর এবং আমাকে দেখে তৌহিদভাই খুশি হলেন। আগে থেকেই আমাদের দুজনকে তিনি পছন্দ করতেন। তার সঙ্গে মলয়ের পরিচয় হলো। ওর মুক্তিযুদ্ধে যোগদান সম্পর্কে যা যা ঘটেছে সবই বলা হলো। শুধু বলা হলো না ও এখন মলয় নয় শফিক। 

খেয়াল করলাম কমান্ডার হওয়ার পর তার আচরণে বেশ খানিকটা পরিবর্তন এসেছে। আগে থেকেই তিনি কম কথা বলতেন। এখন যেন সেই বলায় আরও মাপ-যোগ তৈরি হয়েছে। তাকে আমরা বড়ইতলী মিলিটারির আক্রমণ এবং রতনকান্দি হাটে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ‘পূর্ববাংলা কম্যুনিস্ট পার্টির’ লোকদের জোরপূর্বক চাঁদা তোলার কাহিনী বললাম। শুনে তার ফর্সা চেহারা রক্তবর্ণ ধারণ করলো। আমরা জানতাম পূর্ববাংলা কম্যুনিস্ট পার্টি এবং নক্সালদের তিনি সহ্য করতে পারেন না। সেটা স্বাধীনতার পর আরও তীব্র আকার ধারণ করেছিল। স্বাধীনতার পর সিরাজগঞ্জে তৌহিদ ছিলেন মূর্তিমান আতংক। এক কথায় ভয়ঙ্কর ত্রাস। আমরা কিছুতেই আগের তৌহিদকে স্বাধীনতার পরের তৌহিদের সঙ্গে মেলাতে পারতাম না। তার সঙ্গে স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক কথাও হতো না আমাদের। ভয়ে আমরা তার থেকে দূরে-দূরে থাকতাম। সিরাজগঞ্জ আওয়ামী লীগ পরিচালিত হতো তার নির্দেশে। 

১৯৭৪ সালে সিরাজগঞ্জের পূর্ববাংলা কম্যুনিস্ট পার্টির নেতা ‘মনিরুজ্জামান তারা’ ঢাকায় গ্রেফতার হয়। জেলখানা থেকে তাকে সিরাজগঞ্জ আনা হয় এবং তাকে হত্যা করা হয়। কথিত আছে সেই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সমস্ত কলকাঠি নেড়েছে তৌহিদ। সেই হত্যার প্রতিশোধ নিতে মনিরুজ্জামান তারার সহকর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা করতে থাকে। তিন তিনবার তাকে আক্রমণ করা হয়। তিনবারই সে অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায়। পরে একদিন প্রকাশ্য দিবালোকে কলেজ রোডে তৌহিদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মনিরুজ্জামান তারা হত্যার প্রতিশোধ নেয় তারার সহকর্মীরা। 

ইসমাইলের চাঁদাবাজি এবং ডাকাতি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দলের কয়েকজনকে তৌহিদভাই তাৎক্ষণিক নির্দেশ দিলেন।  

শেলটারে ফিরে আসার পর মলয় আমাকে বললো, ‘তোর কি মনে আছে আমরা কিন্তু শীতের শুরুতে ওই রতনকান্দি হাটে চাদরের চারকোণা ধরে দোকানিদের কাছে সাহায্য চেয়েছি। সেদিন কিন্তু তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাদের সাহায্য করেছিল। টাকা পয়সা ছাড়াও কয়েকটি লুঙ্গি এবং গায়ের চাদরও দিয়েছিল।’ নিজের গায়ের চাদর দেখিয়ে মলয় বললো, ‘এটা কিন্তু রতনকান্দি হাটে জনগণের দেওয়া ভালবাসার সেই উপহার।’ 

বললাম, ‘আমরা যে একটা হাটে চাদর ধরে সাহায্য তুলেছিলাম সে কথা মনে আছে। কিন্তু সেই হাটটা যে রতনকান্দি সেটা আমি ভুলে গেছি।’ 

মলয় বললো, ‘দুটো ঘটনার চারিত্রিক পার্থক্য খেয়াল করেছিস। যখন আমরা তাদের কাছে সাহায্য চেয়েছি তারা আগ বাড়িয়ে আমাদের সাহায্য করেছে। আর ওরা যখন জোর করে চাঁদা নিচ্ছে তখন তাদের প্রতিক্রিয়া দেখেছিস, খুবই হতাশাজনক। আমরাও যদি তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি মিলিটারিদের মতো আচরণ করি তাহলে ওদের আর আমাদের পার্থক্য রইলো কোথায়?’ 

‘দেখ মলয়, গ্রামের সাধারণ কৃষকরা যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের আশ্রয় না দিত, আমাদের খেতে না দিত, আমরা কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধ করতে পারতাম না। তাদের সঙ্গে যারা অমানবিক আচরণ করে তাদেরও আমার রাজাকারদের মতো হত্যা করতে ইচ্ছে করে।’  

‘শতভাগ ঠিক বলেছিস।’ বললো মলয়। 

আমি মলয়কে ভারত থেকে সিরাজগঞ্জে আসার পর একরাতের গল্প বললাম। গল্পটি বলতে গিয়ে আমি শিহরিত হয়ে পড়ি। চোখে পানি চলে আসে। 

‘বুঝলি মলয়, গভীর রাতে আমরা একটি গ্রামে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছি। 

গ্রামে ঢুকতে একটি ভাঙাচোরা বাড়ি। বাড়িটির পাশে মাটির বদনা হাতে একজন কৃষক যাচ্ছিলেন পাটক্ষেতে প্রাকৃতিক কর্ম সাড়তে। আমাদের দেখে মাঝারি বয়সের লোকটি ভয়ে কাঁপতে থাকে। কমান্ডার আশরাফভাই তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কে আপনি?’ 

লোকটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘আমি স্যার জমির কামলা। ক্ষেতে কাম করি।’ 

লোকটির কাঁপুনি দেখে মনে হচ্ছিল তার পায়খানার বেগ আর নেই। সম্ভবত পেটের উপরের দিকে উঠে গেছে। আশরাফভাই অভয় দিয়ে বললেন, ‘ভয় নেই। আমরা রাজাকার কিংবা মিলিটারি কোনটাই না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা।’ তখন কৃষকটির চেহারায় খুশির যে আভা ফুটে উঠলো তা সারাজীবন আমার মনে থাকবে। আশরাফভাই তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই গাঁয়ে কোন রাজাকার আছে?’ 

কৃষকটি প্রবল বেগে মাথা নেড়ে বললো, ‘জি না স্যার।’ 

‘যাক। তাহলেতো খুব ভাল হলো। শোনেন, আমরা আজ রাতে এই গাঁয়ে থাকবো। কোন কোন বাড়িতে থাকলে আমাদের সুবিধে হবে সেই ধরনের বাড়িতে আমাদের নিয়ে যাবেন। আপনি শুধু বাড়িটা দেখিয়ে দেবেন। যা বলার আমরা বলবো। আপনাকে কিছু বলতে হবে না। আপনি ফাঁকে থাকবেন। এখন চলেন আমাদের সঙ্গে।’ 

মোটামুটি সবারই নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা হলো। বাকি থাকলো কমান্ডারসহ আমরা কয়েকজন। 

এবার কৃষক লোকটি বললো, ‘চলেন। আমার এক চাচাতো ভাই আছে। বেশ অবস্থাপন্ন। সেও নৌকা মার্কার লোক।’ 

আমাদের একজন মজা করে বললো, ‘ভাইজান, আপনি কোন মার্কার লোক?’ লোকটি গর্বের সঙ্গে বললো, ‘এ গাঁয়ে সবাই নৌকা মার্কার লোক।’

‘অবাক কাণ্ড! সবাই নৌকা মার্কার লোক? কিন্তু আপনাকে দেখেতো রাজাকারের লোক বলে মনে হচ্ছে।’ 

আমাদের একজনের মজা করে বলা কথায় তিনি জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘ও কথা কইয়েন না ভাইজান। রাজাকার হওয়ার আগে আল্লায় য্যান মরণ দেয়।’ 

লোকটির জোরালো প্রতিবাদে আর কোন কথা হলো না। মোটামুটি রাজনৈতিক সচেতন বলে মনে হলো লোকটিকে। 

কমান্ডার বললেন, ‘চলেন, আপনার বাড়ি যাব।’ লোকটি ভীষণ অবাক,  ‘বলেন কি! আমার বাড়ি যাবেন! আচ্ছা চলেন।’  

আর কোন কথা না বলে লোকটি আগে আগে চললো আমরা তার পিছে পিছে তার বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়ালাম। বাড়িতে ছোনের ছাউনির একটি মাত্র ঘর। পাটসোলার বেড়া। তাও আবার মাঝে মাঝে ভেঙে পড়েছে। বাইরের উঠোনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। কমান্ডার বললেন, ‘আপনার ঘরে যারা ঘুমিয়ে আছে তাদের ডেকে তোলেন। তাদের বলেন, আজকের রাতটা তারা অন্য কোথাও কষ্ট করে কাটিয়ে দিক। এই ঘরে আজ রাতে আমরা থাকবো।’

‘কি বলছেন স্যার!’ লোকটি যেন আকাশ থেকে পড়লো। আশরাফভাই কড়া ভাষায় বললেন, ‘হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। যা বলছি তাই করুন।’ লোকটি তবু বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এবার ধমকে উঠলেন আশরাফভাই। ‘যান, দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’ 

লোকটির বিন্ময়ের ঘোর কাটছে না। সে চলে যাবার পর আমাদের একজন সেই ঘরে গিয়ে ফিরে এসে বললো, ‘এখানে থাকা সম্ভব না আশরাফভাই। থাকার কোন ব্যবস্থা নেই।’  

‘তারপরও এখানেই থাকতে হবে।’ আশরাফভাই তারপর জোর দিয়ে বললেন, ‘তোমরা কি সবাই যুদ্ধের কলা কৌশল সব গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছ? একমাত্র ওই লোকটা জানে আমাদের ছেলেরা কে কোন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। ও যদি মিলিটারিদের খবর দিয়ে নিয়ে আসে, তখন? ওই লোকটা আমাদের সঙ্গে গাদ্দারি করবে না তার গ্যারান্টি কি? শোন, ওকে চোখে চোখে রাখতে হবে। একজন রাত জেগে তাকে পাহারা দেবে। বাকিরা ঘুমাবে।’

ঘরে ঢুকে আমরা হতবাক। আসবাব বলতে একটি চৌকি। সেখানে ময়লাযুক্ত একটি কাঁথা। তেল চিটচিটে কয়েকটি বালিশ। এখানে কে কিভাবে ঘুমাবে সেটাই যখন সবাই ভাবছিল তখন আশরাফভাই ব্যাগ থেকে একটি লুঙ্গি বের করে মেঝেতে বিছিয়ে মাথার নিচে ব্যাগ দিয়ে শুয়ে পড়লেন। তার আগে তিনি লোকটিকে ডেকে বললেন, ‘আমাদের অর্ডার ছাড়া আপনি কোথাও যাবেন না। সকালে আমাদের কাছে থেকে টাকা নিয়ে বাজার করে আনবেন। সঙ্গে আমাদের একজন লোক আপনার সঙ্গে যাবে। মনে থাকবে?'

কমান্ডার মেঝেতে শুয়ে পড়েছে বাকিরা কি আর অন্য কিছু ভাবতে পারে? তারাও যার যার ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে  মেঝেতে লুঙ্গি বিছিয়ে শুয়ে পড়ে। আমাদের একজন পাশের বাড়ি থেকে খড়ের পালা থেকে এক পাঁজা খড় [আঞ্চলিক ভাষায় আমরা বলি ‘খ্যাড়’] নিয়ে এলে আমরা খুশিতে সেই খ্যাড় ছড়িয়ে তারউপর লুঙ্গি বিছিয়ে শুয়ে পড়ি। আশরাফভাইকেও একই ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো। খ্যাড়ের উপর শুয়ে আশরাফভাই সন্তোষ প্রকাশ করলেন। ‘বাহ। এখনতো বেশ ওম লাগছে।’ কে একজন বললো, ‘খ্যাড় না হলে মেঝের ঠাণ্ডায় জইমা যাইতেন।’

ঘুম ভাঙ্গলো দুপুরের দিকে। ক্ষুধায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। রাতেও খাওয়া হয়নি। কখন বাজার করবে কখন রান্না হবে তারপর খাওয়া। ক্ষুধার কথা কাউকে বলতেও পারছি না আবার সহ্য করতেও পারছি না। 

এইসময় কৃষক লোকটি এসে বললো, ‘আপনারা হাতমুখ ধুইয়া লন। আমি খাওয়া আনতাছি।’ বলেই লোকটি চলে গেল। আমরা ঘরের এক কোণে বদনার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলাম। গোল হয়ে বসে পড়লাম আমরা। আশরাফভাই গুম মেরে বসে আছেন। আমরা অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি। 

লোকটি প্রথমে পানির জগ এনে রাখলো। দরজার কাছাকাছি এসে লোকটির স্ত্রী [সম্ভবত] এটা সেটা এগিয়ে দিতে থাকে। আয়োজন দেখে আমাদের চোখ কপালে উঠে গেছে। পানির জগ দেখেই আমাদের চোখ চড়ক গাছ। দামী ঝকঝকে কাঁচের জগ। প্লেটের অবস্থাও জমকালো।  চিকন চালের ভাত। নানান পদের বাহারি তরকারি। মাছ আছে। মুরগির মাংস আছে। ডাল। ভাঁজি। দেখে জিভায় পানি এসে গেল। কিন্তু আশরাফভাইয়ের গোমড়া মুখ আমাদের মনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিতে থাকে। হঠাৎ তিনি রাগমুখে বলে উঠলেন, ‘এসব আপনি কোথায় পেলেন?’ 

লোকটি থতমত খেয়ে বললো, ‘আমার ভাইয়ের বাড়ি থেকে ধার কইরা আনছি।’

‘আপনাকে না বলেছিলাম, আমাদের পারমিশন ছাড়া আপনি কোথাও যাবেন না। কেন গেছেন আমাদের হুকুম ছাড়া?’ 

লোকটি ভয়ার্ত মুখে বললো, ‘আমি যাই নাই। আমার পরিবার গিয়া চায়া আনছে।’

‘ধার শোধ দিবেন কিভাবে?’ 

‘কামলা খাইটা শোধ দিমু।’

‘আপনাকে যে বলেছিলাম আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজার করবেন। সে কথা আপনার মনে ছিল না?’ লোকটি জবাব না দিয়ে মাথা নামিয়ে থাকে। আশরাফভাই ধমকে ওঠেন, ‘নিয়ে যান আপনার ধারের জিনিস। ধার করা জিনিস আমরা খাব না।’ 

আমাদের অবাক করে দিয়ে লোকটি হঠাৎ কান্না গলায় বলে উঠলো, ‘আপনারা যারা জীবন বাজি রাইখা দেশের জন্য যুদ্ধ করতাছেন তাদের যদি একবেলা খাইবার দিবার না পারি তাইলে এ জীবন থাইকা লাভ কি? দেশটাতো আমারও। আপনাদের একবেলা খাওয়ানোর সুযোগ পামু না। এই পোড়া কপাল দিয়া আল্লাহ্‌ ক্যান আমারে দুনিয়ায় পাঠাইল?’ 

বলেই লোকটি শব্দ করে কাঁদতে লাগলো। তার কান্না এবং আবেগঘন কথায় আমাদের চোখেও পানি চলে এলো। দেখলাম আশরাফভাইয়ের চোখও ভেজা। কান্না গলায় তিনি সবাইকে খাওয়া শুরু করতে বললেন। আমরা কাঁদছি আর খাচ্ছি। কোত্থেকে কান্না উঠে আসছে বুঝতে পারছি না। চোখে বর্ষার ধারা বয়ে যাচ্ছে। লোকটির মুখে তখন অনাবিল হাসি। যেন এতো সুখ তার জীবনে কখনও আসেনি। [চলবে] 

(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)

(www.theoffnews.com - Bangladesh muktijuddho)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours