দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
বলাকা’য় রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “বন্দরে বন্ধনকাল এবারের মতো হল শেষ”। তাই যেন হল শেষ। না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন অনাথ নাথ দাস। কালানুক্রমিক রবীন্দ্র রচনাবলীর প্রকাশনার কাজ ১৯৩৯ সালেও হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে অনাথনাথ দাস এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি পাঠ, গ্রন্থনা, প্রকাশনার কাজে সিদ্ধ হস্ত ছিলেন বিশ্বভারতীর পাঠভবনের শিক্ষক অনাথ নাথ দাস। যাঁর এই কাজের সাথে পুলিন বিহারী সেনের কাজের কৌলিন্যতার সাথে মিল থাকায় কবি শঙ্খ ঘোষ মজা করে বলেছিলেন, “পৌলিন্য”। শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর বাড়িতে মঙ্গলবার বেলা পৌনে দশটা নাগাদ পরলোক গমন করেন। রেখে গেলেন ছেলে সুতীর্থ দাস, এক কন্যা সহ স্ত্রীকে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আশির সামান্য কিছু বেশি। শান্তি নিকেতনে থাকলেও, তাঁর আদিবাড়ি ছিল বীরভূমের লাভপুরের কাছে।
রবীন্দ্রপাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজে তাঁর হাত পাকে বিশ্বভারতীর অন্যতম শিক্ষক পুলিন বিহারী সেনের কাছে। এব্যাপারে তাঁর দক্ষতায় ছিল কৌলিন্যতার ছাপ। এপ্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, “চলে গেলেন অনাথনাথ দাস। পুলিনবিহারী সেনের প্রত্যক্ষ সাহচর্যে অনাথদা শিখেছিলেন রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা ও প্রকাশনার কাজ। পুলিনবিহারীর রবীন্দ্র- সম্পাদনার সেই অভিজাত ধারা, যাকে শঙ্খ ঘোষ বলেছিলেন 'পৌলীন্য'; তারও কার্যত অবসান হল অনাথদার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। আমার শিক্ষকতুল্য, পাঠভবনে একদা আমার অগ্রজ সহকর্মী অনাথদার উদ্দেশে বিনম্র প্রণাম”। “কবিতা সমগ্র ১-৫” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সম্পাদক অনাথ নাথ দাস। এরকম বহু কাজ রেখে গেলেন তিনি। উল্লেখযোগ্য হিসেবে, অনাথনাথ দাসের সম্পাদনায় আনন্দ পাবলিশার্সের পাঁচ খণ্ডের আসাধারণ “কবিতা সমগ্র ১-৫” নির্মাণে পাঠকের সামনে হাজির করে প্রায় সব কবিতাকেই। গণেশ পাইনের আঁকা ছবি, সুন্দর গ্রন্থাধার, এবং সর্ব্বপরি “বনফুল” থেকে “শেষ লেখা” রবীন্দ্রনাথের ৫৭টি কাব্যগ্রন্থ সঙ্কলিত ছিল তাঁর অন্যতম অনবদ্য কাজ।
(www.theoffnews.com - Viswabharati death Anath Nath Das)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours