মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার ও লেকচারার, আহমেদাবাদ:

‘ভাও’ শব্দের অর্থ কুয়ো, --- গুজরাটের পাটানে  ১১শ শতাব্দীতে  সোলাঙ্কি রাজ প্রথম ভীমার পত্নী রানী উদয়মতির নির্দেশে এই কুয়ো তৈরী হয়। গুজরাটের একসময় রাজধানী ছিল এই পাটান শহর, পাশ দিয়ে বয়ে যেত সরস্বতী নদী। ভারতবর্ষের এই পশ্চিম প্রান্তে চিরকালই গ্রীষ্ম  ঋতুর রমরমা, তাই  প্রজাদের জলকষ্ট দূর করার উদ্দেশ্যেই অতিরিক্ত জলসঞ্চয় করতে রাণী উদয়মতীর প্রচেষ্টায় এই ভাও তৈরী হয়—নাম তাই রানী কি ভাও, চলতি ভাষায় রানকি ভাও। ১৯৪০ সাল অবধি মাটির নীচে চাপা ছিল এই অপূর্ব কারুকার্য করা সাততলা কুয়োটি, হয়ত বা সরস্বতী নদীর বন্যা অথবা ভূমিকম্পই এর জন্য দায়ী। ১৯৬০ সালে অত্যন্ত দক্ষতার  সাথে আর্কিত্তলজিকাল সার্ভে তাঁদের খননকার্য চালিয়ে উদ্ধার করেন এই বিশাল কুয়োটি। স্থানীয় লোকেরা জানালেন জলপথে এই কুয়োর নীচে দিয়ে চলে যাওয়া যেত পাশের রাজ্য উদয়পুরের কীর্তিশ্বর শিবমন্দিরে। কুয়োর প্রতিটি তলায় পাথরের গায়ে অনবদ্য সব মূর্তি খোদাই করা, কখনও মহিষাসুরমর্দিনী, কখন ও দেবাদিদেব মহাদেব নানান ভঙ্গিমায়, আবার কখনও বিষ্ণুর নানান অবতার। 

এছাড়াও ২১২টি স্তম্ভের গায়ে খোদাই করা আছেন সিদ্ধিদাতা গনেশ, লক্ষী নারায়ণ, কুবের, সূর্যদেব, অষ্টদিকপাল, ভৈরবরা। নৃত্যরতা অপ্সরা, নাগকন্যা, যক্ষিণীদের সুললিত অঙ্গভঙ্গিমা, হাতের মুদ্রা, এমনি সুন্দর যে চোখ ফেরানই দায়। ৬৪ মিটার লম্বা, ২০মিটার চওড়া আর ২৭ মিটার গভীর কুয়োটি সুবিশাল আর অনন্য সুন্দর, এর গঠনশৈলীটি ঠিক যেন ওল্টানো কোনো মন্দির যার চূড়াটি বিনম্র প্রণাম জানাচ্ছে জলকে যার অপর নামই হল জীবন। ২০১৪ সাল থেকে ইউনিস্কো এই জায়গাটিকে ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করেছে। এখান থেকে মাত্র ২০ কিমি দুরে মোধেরার সূর্য মন্দির, কোনারক বা খাজুরাহোর সূর্য মন্দিরের মত এখানেও অনুষ্ঠিত হয় সারা রাত্রিব্যাপী ডান্স ফেস্টিভ্যাল। মেহসানা স্টেশন থেকে গাড়ী বুক করে এই দুটি অপূর্ব প্রাচীন স্থাপত্য না দেখলে গুজরাট ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

(ছবি সৌজন্যে প্রতিবেদক স্বয়ং)

(www.theoffnews.com - rani ki Bhao)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours