অপর্ণা চট্টোপাধ্যায়, লেখিকা, দুর্গাপুর:
চারা গাছ মাটি থেকে উপড়ে নিয়ে অন্য জায়গায় রোপন করলে সেই চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ঠিক তেমনি নিজের মাতৃভাষাও মাতৃদুগ্ধেরই মতন। তা যদি আমাদের থেকে বলপূর্বক কেড়ে নেওয়া হয় তা হলে আমাদেরও হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে ওঠে। আমরা ধর্মের ঐতিহ্যকে বহন করে চলি কিন্তু ভাষা? তাতো আমার ব্যথা, আনন্দ, প্রেম ,ভক্তি সব কিছুই প্রকাশ করার মাধ্যম, সেটা যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ কেড়ে নেয়, তাহলে পরিণাম কি হতে পারে তা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যা আজকের বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে নিজেদের প্রাণকে উৎস্বর্গ করে। তাদের ভয়হীন আন্দোলনের ফলেই আমার হৃদয়ের ভাষা বাংলাভাষা আজ বিশ্বের মানচিত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন বিরাজমান।
শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে ২০০০ কিলোমিটারের ব্যবধানের দুইটি ভূখন্ডকে এক করে রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছিল যেখানে সংখ্যাধিক্য ছিল বাংলা ভাষীরা অথচ বাংলা ভাষাকে হিন্দুয়ানি তকমা দিয়ে বাঙালীদের উপর বলপূর্বক ভাবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র যুবরা এটা মেনে নেয়নি। তারা রাস্তায় বেরিয়ে প্রতিবাদ করা শুরু করে এবং সাধারণ মানুষও তাদের সাথে সাথী হয়, এই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, পুলিশ গুলি চালায় ,অসংখ্য মানুষ নিহত এবং আহত হয়। নিহতের নাম যতজনের পাওয়া যায়, প্রকৃত পক্ষে তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষ সেদিন আত্মবলিদান দিয়েছিলেন এবং ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। এরপর থেকে পূর্ব বঙ্গে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস বা ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাও এই দিনটি স্মরণ করি। আমার ভাষা সে তো একান্তই আমারই, এই ভাষার বহুল প্রচার হলে তা তো আমারই গর্ব।
(www.theoffnews.com - Bengali language)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours