চন্দ্রিমা দত্ত (সাঁজবাতি), লেখিকা ও শিক্ষিকা, শ্রীরামপুর, হুগলি:
চারপাশটা দেখে (তারমধ্যে আমিও বর্তমান) আজ সফলতা ও সার্থকতা নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছে হল। তবে জ্ঞানের ভান্ডার কম, লেখাটিতে কোনো সারবস্তু আপনারা পাবেন কিনা, এমন কথা দিতে পারছিনা।
সফলতা ও সার্থকতা মাঝে মাঝে দুই যমজ ভাই, দুই বন্ধু কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই শত্রু। "সফলতা" একটি সার্বজনীন শব্দ। যে কেউ যে কোনও কাজেই সফল হতে পারেন, তা তিনি কেরানী, শিল্পী, ব্যবসায়ী বা পকেটমার হোন না কেন! কাজের সফলতার সঙ্গে দক্ষতা,অভিজ্ঞতা, এবং বিশেষ করে পারিপার্শ্বিক সুযোগ সুবিধা অর্থাৎ ভাগ্যের এক গভীর যোগাযোগ রয়েছে। কেন না, একজন মানুষ তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, সাধনা দ্বারা যেমন সফল হতে পারেন, তেমনি হঠাৎ কোনও সুযোগ বা কারোর দয়া দাক্ষিণ্য ও করুণার দানে রাতারাতি সফল হয়ে যেতে পারেন। আমি "সফলতা" শব্দটির বিরুদ্ধাচরণ না করেই বলছি -এতে অহংকার বা গর্ব করার মতন কিছুই নেই। উচ্চমিনারে বসে নীচের মাটিটিকে তুচ্ছ জ্ঞান করার মতনও কিছু নেই। কারণ - সফলতা হলো মানুষের কামনা বাসনার বাস্তব রূপ যার সাথে নীতি আদর্শের বেশিরভাগ সময়েই কোনও সংযোগ থাকে না। তার ওপরে রয়েছে "নগদনারায়ণ", যার লোভ কিনা এই পৃথিবীতে জয় করা একটি রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজ!
উত্তম মানুষ যারা, তারা এই দুঃসাহসিক কাজটি করে ফেলেন। তাঁরা কোনদিনও সফলতার পেছনে না ছুটে নিজের কাজের সার্থকতা খোঁজেন। তা না হলে কোনও সরকারি চাকুরে বা ডাক্তার বা মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার ছাত্র, নিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে তার অনিশ্চিত প্যাশনটিকে (গান, বাজনা, আঁকা, লেখালেখি) পাগলের মতন অবলম্বন করে বাঁচতে চাইতেন না। সেখানেই তাঁদের সার্থকতা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনারা হন সরল, সৎ ও মাটির মানুষ। কিছু প্রশ্নবোধক মানুষের কাছে তারা অবশ্যই পাগল। মানেটা অনেকটা এরকম - "আমি অধম হইলে তুমিই বা অধম না হইবে কেন?"
এই যে এতো কথা বলছি, তার সাথে "আঙুর ফল টক" বাক্যটির কোনও সম্বন্ধ নেই। সফলতার সাথে আমার শত্রুতাও নেই।
মোদ্দা কথা - সার্থকতা হলো একটি অনিন্দিত অপরূপ সফলতা।
ঠিক যেমন সব ভালবাসাই প্রেম, কিন্তু সব প্রেম ভালবাসা নয়! তেমনি সব সার্থকতাই সফলতা কিন্তু সব সফলতা সার্থকতা নয়।
একটি ফুল যখন গাছের ডালে বসে বর্ণে আকৃষ্ট করে, সেটি তার সফলতা। আর যখন সে বাতাসে অপূর্ব গন্ধ ছড়ায় সেটি তার সার্থকতা।
আমার দাদু আমাকে ছোটবেলায় একটা শ্লোক দিনরাত কানের কাছে শোনাতেন। এই ফুলের প্রসঙ্গে সেটি মনে পড়ল। যদিও এই লেখাটির সাথে শ্লোকটির সামান্যই সম্পর্ক তবু দাদুর কথা মনে রেখে সেটা বলেই এই লেখা শেষ করছি।
"রূপযৌবন সম্পন্না, বিশাল কুল সম্ভবাঃ
বিদ্যাহীনা না শোভন্তে
নির্গন্ধে এব কিংশুকাঃ"
প্রথম লাইনটি অবশ্যই অর্জন না ভাগ্যের কথা বলছে,
আর দ্বিতীয় লাইনটির সাথে ভাগ্যের সম্পর্ক নেই।
(www.theoffnews.com - achieve success)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours