মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের বিরোধ চিরকালের। পাশ্চাত্যের আধুনিকতা যেমন প্রাচ্যে বেমানান, তেমনই পাশ্চাত্যের বিভিন্ন সেলিব্রেশন আমাদের ভারতীয় জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খায় না। ভারতীয় সমাজে পরিবার থেকে শুরু করে পাড়াপড়শীও কেমন যেন একে অপরের সাথে জড়িয়ে বাঁচে। কলতলার কোন্দল, বারো ঘর এক উঠোন মায়ার বন্ধনে বাঁধা পড়ে পাড়ার উচ্চবিত্ত হলঘরে। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি একটা পাড়া মানে এক বৃহৎ পরিবার। সেখানে বিপদে আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে এটাই অলিখিত নিয়ম। তার জন্য আলাদা করে কোন ধন্যবাদ জানানোর দিনের প্রয়োজন হত না। আবার দাদু, দিদা, ঠাকুমারা তাদের শাসন আর ভালোবাসার বেড়াজালে ঘিরে রাখত আমাদের ছোটবেলা। আমাদের কাছে তাই প্রতিদিন গ্ৰ্যান্ড পেরেন্টস ডে ছিল। এভাবেই ভালোবাসার দিন বলে নির্দিষ্ট কোন দিনে ভারতীয়রা বিশ্বাসী নয়। ঘর গৃহস্থালীর প্রতিটি কোনায়, ঝগড়া আদরে, মান অভিমানে, আকাশবাণীর অনুষ্ঠানের স্মৃতিচারণে, বাতের মলমে, ময়দানের বাদাম বা ফুচকায় , বিরহকাতরতায়, পাশে থাকার নীরব অঙ্গীকারেই মূর্ত হয়ে ওঠে ভালোবাসার প্রতিদিন। এ ভালোবাসা বয়স মানে না। ফেব্রুয়ারি মাস এলে পাশ্চাত্যে রোজ ডে থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে পর্যন্ত ভালোবাসার উদযাপন চলে। উদযাপন না বলে ভালোবাসার বিজ্ঞাপন বলা চলে। যা আজকাল আমাদের দেশেও তার নির্লজ্জ অণুকরণ করার চেষ্টা চলছে। অথচ এই ফেব্রুয়ারি মাসেই বাঙলায় বিদ্যাদেবীর আরাধনাকে ঘিরে সেই কোন কাল থেকে প্রেমের নীরব বিপ্লব ঘটে চলেছে তা একমাত্র বাঙালিই জানে। 

মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে বিদ্যা, জ্ঞান, শিল্পকলা ও সঙ্গীতের দেবী মা সরস্বতীর পুজো হয়। সেদিনটি আপামর বাঙালির কাছে বড় আনন্দের। বাড়ির, পাড়ার অথবা বিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোকে ঘিরে আমাদের প্রত্যেকেরই নানা স্মৃতি রয়েছে। ভোর বেলায় কাঁপতে কাঁপতে স্নান করে অঞ্জলি দেওয়া। তারপর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি বা জামায় মেয়েরা হলুদ বা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে মন্ডপে, বিদ্যালয়ে আনন্দে মেতে উঠত। শাড়ি পরিহিতা সহপাঠিনীর অনভস্ত‍্য চলন, কাজল চোখের মায়া অজান্তেই ঘোর লাগাত কিশোর মনে। খিচুড়ি ভোগ খাওয়ার ছলে চার চোখের মিলন হয়ে তৈরি হত এক অদৃশ্য ভালোলাগা। সেই ট্রেন্ড কিন্তু এখনও চলছে। এখন তো ভ্যালেন্টাইনস ডে পার করেও বসন্ত পঞ্চমীর দিন এই প্রজন্ম নিজেদের একইভাবে সাজিয়ে মেতে ওঠে ভালোবাসার খুনসুটিতে। বিদ্যাদেবীর আরাধনার ফাঁকেই তৈরি হয় ভালোলাগা। মন দেওয়া নেওয়ার পালা চলে। আবার কারো প্রেম পূর্নতা না পেয়ে বন্ধুত্বের আয়নায় নিজেকে দেখে। 

এই ভাবেই মাঘের হিমেল হাওয়ায় বসন্তের রঙ নিয়ে বারে বারে ফিরে আসে বসন্ত পঞ্চমী। আমাদের সরস্বতী পুজো।

(www.theoffnews.com - Saraswati pujo)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours