সুস্মিতা পাল, লেখিকা ও শিক্ষিকা, কলকাতা:

(ছবিটি এঁকেছে দুর্গাপুরের ৯ বছরের কিশোরী অস্মিতা চক্রবর্তী)

আবার এসে গেল আর একটি ২৩শে জানুয়ারী। ক্যালেন্ডারের তারিখে আজ যে ২৩শে জানুয়ারী, ২০২১ সাল। বাঙালীর মননে ও বো়ধে জেগে থাকা একটি উজ্জ্বল তারিখ। নেতাজীর মৃতদেহ দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেনি, তাই আজও তিনি যেন বড় বেশী করে বেঁচে আছেন। ৫৯ বছর আগে এলগিন রোডের তিনতলার আলো জ্বালা ঘর থেকে ইংরেজ পুলিসকে ধোঁকা দিয়ে, সবরকম সতর্কতা পার করে সুভাষচন্দ্র দেশ ছেড়েছিলেন, শুধুমাত্র স্বদেশকে স্বাধীন করবেন বলে। তারপর কত জল বয়ে গেছে, কত জন্মদিন তাকে ছাড়াই কাটিয়েছে তার পরিবার, তার স্বদেশ। কিন্তু সব উদযাপনে, সব মার্চপাস্টে, প্রতিটি স্কুলকলেজ ও পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠানে অলক্ষ্যে তিনি ছিলেন।

স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বাধীনতাকে আকন্ঠ ভালোবেসে তিনি স্বাধীনতার কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন। শুধুমাত্র রক্ত চেয়েছিলেন তিনি, অথচ ১৯৪৭'র পরে দেখি ক্ষমতা ও আসনের লোভে আকীর্ণ ভারতবর্ষকে। 'পথের দাবী'তে অপূর্বকে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসেও অকারণে তিনবার ঘুম ভাঙিয়ে জেরা করার পরেও তার প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছিল -সে তো ইউরোপিয়ান নয়। তখন ব্রিটিশরা আমাদের পায়ের তলায় রাখত আর এখন আমরা ধনী ও ক্ষমতাবানদের মাথায় তুলে রাখি। অবস্থা আর অবস্থানের খুব একটা তফাত হয়েছে কি?নেতাজী ফিরে আসেননি, কিন্তু বহু অপেক্ষার রক্তাঝরা রাতের অবসানে স্বাধীনতা এসেছে।আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে রাজনৈতিক দলাদলির ভাষণে স্থিমিত শোনায় নেতাজীর ডাক- 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।' তবুও, স্বাধীনতার উত্তরাধিকার অলক্ষ্য, নিরবয়ব।নৈরাজ্যের মধ্যেও তা লুকিয়ে অপেক্ষা করে উপযুক্ত সুযোগের, ছড়িয়ে যায় আগুনের মতো।

তাই, নেতাজীর জন্মদিনে দেশকে ভালবাসার, সাধ্যমতো কিছু করার অঙ্গীকার করো। জেনো, ২৩শে জানুয়ারী প্রতিটি স্মরণসভায় তেরঙ্গা পতাকার আড়ালে তিনি আছেন, নীরবে শুনছেন ভারতের নাগরিকদের শপথ। তোমরাও একবার চোখ বুজে কান পেতে শোনো- অলক্ষ্যে শোনা যাবে তার দৃপ্ত কন্ঠ-

আমি সুভাষ বলছি।

"কোনও একটা চিন্তনের জন্য একজন মৃত্যুবরণ করতে পারেন। কিন্তু সেই চিন্তনের মৃত্যু হয় না। সেই চিন্তন একজনের মৃত্যুর পর হাজার জনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।"

(www.theoffnews.com - Netaji Subhas Chandra Bose)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours