রমা চক্রবর্তী, শিক্ষিকা, আবৃত্তিকার ও ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

"নেতাজী"---লহ প্রণাম।

আজ ২৩ শে জানুয়ারী২০২১, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন।

সমগ্র দেশে মহা সমারোহে পালিত হচ্ছে তাঁর জন্মদিনটি

"নেতাজী"---এই মানুষটা না জন্মালে হয়তো কোনোদিন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য উঠতো না।

"নেতাজী"--- বাঙালীর আবেগের নাম,

"নেতাজী"---বাঙালীর সাহসের নাম,

"নেতাজী"---বাঙালীর হৃৎপিণ্ডের শব্দ,

ভারতবর্ষের প্রভাত-সূর্যের নাম "নেতাজী",

যার নাম শুনলে এখনও ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষের রোমকূপ খাড়া হয়ে ওঠে আবেগে, চেতনায়। মেরুদন্ড স্ফীত হয় সম্মাননায়।

বাঙালীর শিরায় শিরায় রক্তের স্রোতে ছোটে নেতাজীর নাম।

বাঙালীর আজন্ম ভালোবাসার নাম "নেতাজী"।

তাঁর পায়ের বুটের শব্দে আজও বাঙালীর হৃদয়ে "কদম্ কদম্ বাড়ায়ে চল্"।

তাঁর "দিল্লী চলো" আওয়াজ আজও বাঙালীর কানে কানে অনুরণন হয়।

তবুও তাঁর জীবন ইতিহাস চিরন্তন রহস্যময় হয়েই রয়ে গেল। কত "কমিশন" এলো, আবার চলেও গেল।

তবে আমি নিজেকে খুব গর্বিত মনে করি কারণ আমার দাদামশাইয়ের (প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী সুধীর কুমার চক্রবর্তী) মাধ্যমে আমি নেতাজীর স্পর্শ অনুভব করেছি। এর আগে "দ্য অফনিউজ"এর একটি এপিসোডে ("এই তিন টুকরো স্বাধীনতা আমরা চাইনি") আমার দাদামশাই এর কথা লিখেছিলাম। তিনিও একজন নেতাজী অন্তঃপ্রাণ ও নিষ্ঠাবান স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। দাদামশাই এর যাবতীয় সংগ্রহের মধ্যে একটি হলো নেতাজীর হাত থেকে পাওয়া একটি উত্তরীয় যা এখনও খুব স্বযত্নে রাখা আছে, আমি সেটি স্পর্শ করেছি এবং তাঁকে অনুভব করেছি। যা মনে করলে আমার শরীরে নেতাজীর স্নেহস্পর্শ অনুভব করি শিরায় শিরায়। 

তাই বলতে পারি নেতাজী হলেন আপামর বাঙালীর একজন জীবন্ত অনুভূতি।

ছোটো থেকেই আমরা দাদামশাই এর আদর্শকে যতটুকু নিতে পেরেছি সেইটুকুই আমাদের অন্তর আত্মার বিপ্লবের আগুন। তাই পরিবারের অনেকেই দেশের সেবায় নিয়োজিত আছে, Army, C.R.P.F, Navy তে|

কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক চাপানউতোরে সেই আগুন স্তিমিত হয়ে যাচ্ছে। চারপাশে যা ঘটছে তাতে একটাই সংশয় ---তাহলে কি নেতাজী ভুল করেছিলেন?---"তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো"র বক্তা সত্যি কি আজকের প্রেক্ষাপটে বাস্তবিকই ভুল? নাকি আমাদের নৈতিক অধঃপতনের ধারাবাহিকতা সমানে নিম্নগামী? কে আমাদের দিশা দেবে?

নেতাজীর ক্ষমতার লোভ ছিল না, তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীনতা, ব্রিটিশের থেকে মুক্তি।

তবে আমরা দেখতে পাই ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে যে ভয়ের সঞ্চার হয়েছিল সেই ভয় এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জকে। নেতাজীকে নিয়ে এখনও আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে।

ভারতবর্ষের অফিসে-  আদালতে খুব কম জায়গা আছে যেখানে নেতাজীর ছবি টাঙানো থাকে।

আর এখন তো নেতাজীর জন্মদিবস একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, ছুটির দিন বলে ছেলেমেয়েরা বেশ আমেজ করে দিনটি উপভোগ করে।

স্বামিজীর "জাগো যুব সমাজ, জাগো ভারত" কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে।

তবে এটা ছেলেমেয়েদের দিকে আঙুল তুলে কোনো লাভ নেই কারণ দোষ-ত্রুটি ওদের নয় দোষটা সিলেবাসের। এখন আর সিলেবাসে ছোটোদের পড়ানো হয় না-----"প্রভাতসূর্য নেতাজী", "ছেলেবেলায় বিলে", "বোলপুরের রবি", "বিদ্যাসাগর"।

তবে ভারতবর্ষের অফিসে-আদালতে, মুদ্রায় নেতাজীর ছবি না থাকলেও তিনি আছেন বিপ্লবের আগুনে, প্রতিরোধের বুলেটে, আছেন বেকারদের মননে।

ব্রিটিশদের ছেড়ে যাওয়া ভিক্ষার দানের স্বাধীনতার দেশে আজ যাদের আধিপত্য তারা সাদা পাঞ্জাবী পরে ২৩শে জানুয়ারীর সকালে নেতাজীর গলায় মাল্যদান করে দেশপ্রেমের বুলি আওড়ায়।

তবু আজও এলগিন রোডের তিনতলার ঘর আর বাঙালীর হৃদয় নেতাজীর অপেক্ষায় আছে, কবে আবার হয়তো শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ের ঘোড়ায় চাপা নেতাজী সত্যিই বলে উঠবেন---

"আমি সুভাষ বলছি"

"দিল্লী চলো"

"কদম্ কদম্ বাড়ায়ে চল্"

এসো নেতাজী! একটিবার ফিরে এসো! গোটা জাতি যে আজও তোমার অপেক্ষায়! সমগ্র দেশ যে আজও তোমার স্বভিমানে নতমস্তকে তোমাকে একটিবার দেখতে চায়!

(www.theoffnews.com - Netaji Subhas Chandra Bose)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours