মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:
“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর…”
প্রায় একশো বছর আগে বলা একটা কথা, আজও মনে রেখেছে বাঙালী। তবুও মন্দির, মসজিদ, গীর্জায় ভিড় তো কমে না। গঙ্গাসাগর বা কুম্ভ মেলার পবিত্রতা নিয়ে সংস্কারে আবদ্ধ হতে বাধে না। একটা সময় ছিল যখন রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন পথপ্রদর্শক। তাঁদের কর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত হতো যুবসমাজ। আজও হচ্ছে বটে, তবে শুধু পকেট ভারী করতে। তাই মন্দির, মসজিদ ও গীর্জা কেন্দ্রিক রাজনীতির এত রমরমা।
যাইহোক, বাংলা অনেক মহামানবকে জন্ম দিয়েছে। বাঙালী তাঁদের মনে রাখুক আর নাই রাখুক, রাজনৈতিক দল ও নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদের হিড়িক লেগে যায় মনীষীদের জন্মদিন পালনে। আজও তার অন্যথা হয়নি।
রাজ্যের দুই যুযুধান পক্ষ তো মাইক বাজিয়ে, শোভাযাত্রা করে প্রমাণ করতে ব্যস্ত বিবেকানন্দ আমি শুধুই তোমার।
কিন্তু সত্যিই কি আপনারা স্বামীজীর আদর্শে বিশ্বাস করেন? তাহলে তো মানুষের জন্য কাজ করতেন; জনসেবা করতেন। তা না করে আপনারা মানুষের অর্থ লুঠ করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন; নিজেদের সাতপুরুষের বিলাসিতাকে সিকিওরড করছেন। কেউ ব্যাঙ্কের টাকা লুঠ করছেন তো কেউ তোলাবাজি, গুণ্ডামি করে তিতিবিরক্ত করে দিচ্ছেন জনগনকে। কি অধিকার আছে আপনাদের বিবেকানন্দর জন্মদিবস পালন করার?
নিজেদেরকে হিন্দু জাতির শুভাকাঙ্ক্ষী প্রমান করার বৃথা চেষ্টা করছেন। কারণ স্বামীজী জন্মগত ভাবে হিন্দু হলেও তিনি মানবধর্মে দীক্ষিত ছিলেন। ত্যাগ ও সেবার দ্বারা মানব কল্যানে ব্রতী হয়েছিলেন।
তা মন্ত্রীমশাইরা ষড়যন্ত্রীমশাইরা আপনারা সাধারণ মানুষের জন্য কোন ভালো কাজটা করছেন শুনি? করোনার টীকা আসলোই না অথচ ক্রেডিট নিতে শুরু করেছেন। আপনারা যা যা করেন ও করছেন শুধুমাত্র ভোটবাক্সে ফায়দা লোটার জন্য। আপনাদের কোন অধিকার নেই স্বামীজীকে শ্রদ্ধা জানানোর।
আরেকটি রাজনৈতিক দল যারা একসময় স্বামীজী ও রামকৃষ্ণদেবকে নিয়ে খিল্লী উড়িয়ে পোস্ট দিতেন। আজ দেখছি তাদের বাঙালিয়ানায় পেয়েছে। তারাও স্বামীজীর বাণী প্রচার করে পোস্ট দিচ্ছেন। ভালো কথা। এতদিনে আপনাদের বোধোদয় হয়েছে। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আশা করি এসব ভোট রাজনীতির দিকে তাকিয়ে করছেন না। আপনাদের এই শুভবোধকে স্বাগত জানাচ্ছি কমরেড।
আমি চিরটাকাল আমার বেশ কিছু বামপন্থীবন্ধু যারা প্রকৃত শিক্ষিত ও জ্ঞানী, তাদের শ্রদ্ধা করে এসেছি। আজও আপনাদের মঙ্গল কামনা করছি।
বাংলায় মনীষীর অভাব নেই; তাঁদের আদর্শকে বুকে নিয়ে চলুন একটা মানুষের দল গড়ি যেখানে ডানপন্থী ও বামপন্থী ভেদাভেদের কোন মূল্য থাকবে না। দুধের সরের মতো ভালোটুকুকে গ্রহণ করে আমরা এগিয়ে যাবো নতুন পশ্চিমবঙ্গ, নতুন ভারত গড়ার লক্ষ্যে। হতে তো পারি আমরা, অন্তত পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তো বলতে তো পারি, “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে…”
(www.theoffnews.com - West Bengal politics Swami Vivekananda political programmes)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours