ইরানী বিশ্বাস, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও পরিচালক, বাংলাদেশ:

POLICE:  P - Polite, O - Obedient, L - Loyel, I - Intelligent, C - Courageous, E - Efficiency. Police শব্দটি পর্তুগিজ শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে। যখন এটি Noun হিসাবে ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয়, শৃঙ্খলা, শান্তি ও আইন রক্ষা করার ব্যবস্থা। Police বলতে বুঝায় এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে দুর্নীতি দমন ও প্রতিহত করা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা। শব্দটি যখন Verb হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তখন তার অর্থ দাঁড়ায় কোন স্থানে শৃঙ্খলা বাজায় রাখা।

একটি পুলিশ বাহিনী হল রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, আইন প্রণয়ন, সম্পত্তি রক্ষা এবং নাগরিক অসামান্য সীমা। তাদের ক্ষমতা বল বৈধতা ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত, শব্দটি রাষ্ট্রের পুলিশ পরিষেবার সাথে সর্বাধিক সম্পর্কযুক্ত যা একটি নির্দিষ্ট আইনি বা আঞ্চলিক দায়িত্বের মধ্যে সেই রাষ্ট্রের পুলিশ শক্তি ব্যবহার করার জন্য অনুমোদিত।

পুলিশ শব্দটি অধিকাংশ মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ। সাধারণ মানুষ আর পুলিশের মধ্যে পার্থক্য কি? শুধুই কি পোশাক আর ক্ষমতা নাকি মানসিকতা। 

ঠিক কবে থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের নানাবিধ অভিযোগ শুরু হয়েছিল তা জানা নেই। তবে দৈনন্দিন জীবনে পুলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারন মানুষ পুলিশের সাহায্য ছাড়া এক পা’ও চলতে পারে না। তারপরও এই পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অযথা হুমকি দেওয়া, মানুষ পেটানো, শারিরীক নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় হয়রানি, থানা হাজতে অযথা আটকিয়ে রাখা, অসৌজন্যমূলক আচরন করা, যত্রতত্র ক্ষমতার  অপব্যবহার এ রকম অজস্র অভিযোগে অভিযুক্ত। অন্য দিকে, এই পুলিশের প্রতি সাধারন মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নৌকাডুবি, সড়ক দুর্ঘটনা, সন্ত্রাস ও ডাকাতদের কবল থেকে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া, রাজনৈতিক হিংসা এবং দলাদলির সহিংস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বত্রই পুলিশের ভুমিকা রয়েছে প্রশংসনীয়। 

‘দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের পালন’ এই মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে দেশ ও জনগনের কল্যাণ কামনায় পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিতে হয়। নিরলস প্রচেষ্টা আর কঠিন কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে একজন সাধারন মানুষ হয়ে ওঠে একজন পুলিশ। ইউনিফর্ম গায়ে জড়ানোর সাথে সাথে ব্যক্তি সমাজের চোখে অন্য পরিচয়ে পরিচিতি পায়। পোশাকের আড়ালে ব্যক্তি মানুষটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় চেনা জানা সমাজের ভীড়ে। সাধারন মানুষ সর্বক্ষন পুলিশের ভুল ধরতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যেন মানুষের চিরকালের প্রতিদ্বন্দী এই পুলিশ। প্রায়ই দেখা যায় কোন ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের কোন ঝামেলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ ন্যায় বা অন্যায় সব সময় পুলিশের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। যেন পুলিশ মানেই অন্যায়ের প্রতিচ্ছবি। তাই কোন অবস্থাতেই পুলিশের পক্ষ নেওয়া যাবে না। 

গত মার্চ থেকে দেশে করোনা শুরু হয়েছে। করোনার ক্রান্তিলগ্নে সবাই যখন মরণ ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিজের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। ঠিক তখন বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা ঘর ছেড়ে প্রিয়জন ছেড়ে বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মানুষের জন্য করা সকল নিয়ম ভেঙ্গে মানুষের পাশেই দাড়িয়েছে। করোনার ভয়ে নিজ সন্তানকে রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে পিতা-মাতা। তখন মানবতার দূত হিসাবে সেই ফেলে যাওয়া সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছে পুলিশ সদস্য। গৃহবন্দী পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগী পৌঁছে দিতে এগিয়ে এসেছে পুলিশ সদস্য। রাতের আঁধারে সাহায্য নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ছুটে গিয়েছে পুলিশ সদস্য। সন্তান সম্ভবা নারীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবার কেউ যখন ছিল না। তখন পুলিশ ভ্যানে হাসপাতালে পৌছে দেয় পুলিশ সদস্য। রক্তের দাগ লেগে যায় পবিত্র পোশাকে তবু ছুটে চলা মানবিকতার টানে। করোনার ভয়ে যখন লাশ পড়ে থাকে হাসপাতাল মর্গে। তখন একমাত্র পুলিশ সদস্যরা ছিল দাফনের কাজে নিয়োজিত। যে কোন সময় করোনার কাছে পরাজিত হবে জেনেও নিজের দায়িত্বেও কাছে ছিলেন অবিচল। অনেক পুলিশ সদস্য করোনায় আত্মদান করেছেন। তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা জানাই।

প্রিয় দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে উৎসবের আগের রাত থেকে জেগে থাকে পুলিশ বাহিনী। আপনি যখন প্রিয়জনকে নিয়ে সন্তানের হাত ধরে উৎসব পালন করি, তখন এক পিতা আপনাকেই পাহারা দেয়। হয়তো আপনার সন্তানের বয়সী কোন সন্তান অপেক্ষায় থাকে তার পিতার কাধে চড়ে উৎসবে যাবে। হয়তো প্রিয়তমা স্ত্রী অপেক্ষায় ছিল উৎসবের খুশিতে ভাসবে দুজন। একবারও কি ভেবেছেন এই পুলিশ সদস্যরা যদি নিজের প্রিয়জনের ইচ্ছাপূরণ করত, তাহলে আমরা এত নিরাপদে উৎসব পালন করতে পারতাম না। এই পুলিশ সদস্যরা হাসিমুখে প্রিয়জনের খুুশি উপেক্ষা করতে পারে, দেশ ও দেশের মানুষের কথা ভেবে।

জীবনের বেশিরভাগ ইচ্ছাগুলি পূরণ না হওয়া পরিবারের নাম পুলিশ পরিবার। এই পরিবারগুলির সকল সদস্যদের আশা-আকাঙ্খার বিনিময়ে আপনি আমি এত আনন্দ করতে পারি। দিন শেষে এই পুলিশও কিন্তু মানুষ। তারাও কোন পরিবারের সন্তান, পিতা, স্বামী, ভাই আত্মীয়স্বজন। আপনার আমার  হাসি মুখ দেখে নিজের জীবনের না পাওয়াগুলি ভুলে থেকে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়া মানুষটির নামই পুলিশ। প্রতিবছর ঈদ-পুজায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে সাধারন মানুষ। নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে অতন্দ্র পাহারায় থাকেন পুলিশ সদস্যরা। এমন অনেক পুলিশ সদস্য আছেন যারা কোন দিনই পরিবারের উৎসবে উপস্থিত থাকতে পারেন না। এমন অনেক পুলিশ সদস্যদের মা আছেন, যারা সন্তানের মুখে ঈদের সেমাই তুলে দিতে পারেন না বলে সেমাই খাওয়া হয় না। একটু ভেবে দেখুন এই মা ঈদের সেমাই খায়নি বলেই তো আপনি আমি নিরাপদে বাড়ি ফিরে পরিজনের সঙ্গে উৎসব পালন করতে পারি। 

একজন পুলিশ সবচেয়ে বেশি মানসিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। পরিবারের আনন্দে বা বিপদে বেশির ভাগ সময় পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হতে পারে না। মানুষ হিসাবে এ বিষয়টি অবশ্যই মনের উপর প্রভাব ফেলে। তাছাড়া নিজের স্বার্থে যখন পুলিশকে ব্যবহার করতে না পারে তখন পুলিশকে দুই কথা শুনিয়ে দেয়। সবচেয়ে বেশি মানসিক ভাবে বিপর্যয় ঘটে ট্রাফিক পুলিশদের। কারন উল্টো রাস্তায় যেতে চাইলে পুলিশকে কথা শোনাবে। তিনজন মোটরসাইকেলে উঠবে, পুলিশ ধরলে তাকে কথা শোনাবে। হেলমেট ছাড়া বাইক চালাবে বললে কথা শোনাবে। এছাড়াও রাস্তায় শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ সবই সহ্য করতে হয় এই ট্রাফিক পুলিশকে। একজন মানুষ হিসাবে কতটা নির্যাতন একবার নিজের অনুভূতি দিয়ে চিন্তা করে দেখুন। 

কিছুদিন আগে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে মারা গেছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম। তিনি পারিবারিক অশান্তির কারনে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। বর্তমানে পুলিশে কর্মরত আছেন ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭২৪ জন সদস্য। এর মধ্যে কর্মরত মহিলা পুলিশের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩৯১ জন। দেশজুড়ে যখন নারী নির্যাতন ও ধর্ষনের ঘটনা ঠেকাতে পুলিশের ভুমিকা অপরিসিম। তখন প্রশ্ন উঠতেই পারে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত এসব নারী পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে কতটা নিরাপদ রয়েছে। শারীরিক ভাবে হয়তো নির্যাতনের ঘটনা না ঘটতে পারে। তবে মানসিক ভাবে সুস্থ আছেন তো? সব দিক বিবেচনা করে আমার মনে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। এতে হয়তো পুলিশের প্রতি আনা অভিযোগের সংখ্যা কমতে পারে। একজন মানুষের শারীরিক সুস্থতার মতো মানসিক সুস্থতাও জরুরী। বিশেষ করে পুলিশদের জন্য। কারণ পুলিশকে সমাজের ভাল মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষদের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয়। এতে পুলিশদের মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই নেতিবাচক প্রভাব কাটাতে নিয়মিত মানসিক পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যক।

(www.theoffnews.com - Bangladesh police)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours