শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

লিখি ডিলিট করি। আবার লিখি, আবার ডিলিট করি। আজকাল পড়ুয়া কমে গেছে। এমন কথা শুনেছি অনেকবার। কথাটি নিজেও বলেছি, বলিও। কিন্তু একজন ডাক্তার আমাকে বলেছেন, কবে বাংলাদেশ সহ এ উপমহাদেশে পাঠকের সংখ্যা বেশি ছিলো? এমন কথা অবশ্য কমই শুনেছি!

মানুষজন আজকাল আসলে কি পড়তেই চায় না? তা প্রশ্নবোধক বটে! তবে বিরুদ্ধ মত হলে তো লেখা ছুঁয়েও দেখে না। আর লেখা যদি স্রোতের বিপীরতে হলে তেড়ে আসে। আবার লেখার কলেবর বড় হলেও পাঠক খুব বিরক্ত হয়। তাই হয়তো মানুষ এখন টুইট করে এবং টুইট পরে! আমিও তাই এখন থেকে লেখার আয়তন বড় করবো না ভাবছি। এই টুইট শব্দটি সম্ভবত পাখির কিচিরমিচির শব্দটির একটি রূপ। আমরা বন ও বনের পাখিদের বিদায় জানিয়ে টুইটে ঢুকেছি। প্রকৃতি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছি ডিভাইসে! প্রযুক্তি প্রয়োজন তাই বলে প্রকৃতিকে তালাক দিয়ে? 

একজন শিক্ষক একটি দোকানে কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, "তুরস্কের প্রেসিডেন্ট 'এরদোগান' দারুন আইন করেছে,  তুরস্কে কেউ ধর্ষন করলে ধর্ষিতা মেয়েটিকেই ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়!" প্রথমে ভেবেছিলাম সাটায়ার করছে। বা তুরস্ক ও এরদোয়ানকে নিয়ে ঠাট্টা করছে। পরে দেখলাম না সে সত্যিই এরদোয়ান রজব তায়েপের প্রশংসাই করছে। এরকম একটি  বর্বর ও অমানবিক আইন প্রচলন করার কারনে! আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না, একজন শিক্ষক হয়ে কিভাবে এমন বর্বরতার পক্ষ নেয়! এমন শিক্ষক তার ছাত্রদের কি শেখাবে? 

অতপর ভাবলাম যেহেতু সে মাদ্রাসার শিক্ষক তাই হয়তো সাম্প্রদায়িক ও পুরুষতান্ত্রিক চেতনায় ডুবে আছে। একটু বাজিয়ে দেখার জন্য এরদোয়ানের এই অমানবিক আইনটি নিয়ে কথা বললাম, বিভিন্ন পেশাজীবীদের সাথে। অদ্ভুত বিষয় হলো, কোন রিকশা ওয়ালা, হকার, অশিক্ষিত মানুষ কেউ এই আইনটিকে সমর্থন করলো না। এমনকি এমন কয়েকজনকে চিনি যারা সাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে এরদোয়ানের অন্ধ ভক্ত! তারা পড়ালেখাও জানে না। হুজুরদের ওয়াজ, এরদোয়ানের ভক্তদের কাছ থেকে শুনে শুনে এরদোয়ান ভক্ত  বনে গেছে। তারাও ছি! ছি! বলে ধিক্কার জানালো এবং এই আইনের বিরোধীতা করলো। কেউ কেউ তো বিশ্বাসই করতে চাইছিলো না এমন আইন তুরস্কে আছে! কিন্তু বিস্ময়কর ও বেদনাদায়ক বিষয় হলো, আমি আরো কয়েকজন স্কুল কলেজের শিক্ষকও পেলাম যারা মনে করে ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়া সঠিক! এই রকম শিক্ষক হয়তো আরো আছে। এখন আপনারাই বিবেচনা করুন এ দেশে কারা মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ। ঐ অশিক্ষিত লোকগুলো নাকি আমাদের স্কুল কলেজ মাদরাসার শিক্ষক? আপনারা হয়তো ভাবছেন, কেবল আমার সামনেই এগুলো পরে! উত্তরে বলবো, এগুলো আসলেই আমার সামনে পরে। আপনিও চোখ কান খোলা রাখুন। নোট রাখুন। তাহলে আপনিও এমন বিষয়ের মুখোমুখি হবেন যা আপনি এখন অনুমানই করতে পারছেন না! এরদোয়ানের যারা ভক্ত এবং তার সকল কাজেরও অন্ধ ভক্ত। তাদের জন্য দুঃসংবাদ এই যে, পাকিস্তানের ইমরান খানের নতুন আইনে ধর্ষকদের কেমিক্যাল ব্যবহার করে নপুংসক করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দুঃসংবাদ এ জন্য বললাম, অসভ্য  বর্বর, নারী বিদ্বেষী এরদোগানের যারা অন্ধ ভক্ত, তারা যে ইমরান খানেরও ভক্ত! এই অন্ধ ভক্তদের দুই নায়কের ধর্ষকের বিচারের বিষয়ে পরস্পর বিরোধী। ভাগ্যিস নরেন্দ্র মোদী তুরস্কের ডিজিটাল খলিফা এরদোয়ান মত ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়ার আইন করেনি! তাহলে বাংলাদেশের এই নয়া খলিফার অন্ধ ভক্তরাই ফেসবুকে নরেন্দ্র মোদী, হিন্দু ও ভারতের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধারে নেমে যেত! 

আধুনিক তুরস্ক এত জঘন্য, বর্বর আইন প্রণয়ন করতে পারে তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো। অবশ্য রাষ্ট্রের পরিচালক যদি সাম্প্রদায়িক হয়, এবং সেই সাথে নারী বিদ্বেষী হয় তা হলে অনেক অমানবিক আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ সম্ভব। ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে এটা শাস্তি নয় এটা যে পুরস্কার! এ বোধ যার নেই তাকে কি করে  একটি দেশের  জনগন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে? তা ভেবে পাই না। বাংলাদেশের মত পিছিয়ে পরা দেশেও (তুরস্কের তুলনায়) ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়ার মত জঘন্য অমানবিক আইন প্রনয়ন অসম্ভব। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগন এখনো তুরস্ক ও এরদোয়ানের মত এতো অসভ্য, জঘন্য ও অমানবিক হয়নি। হবেও না। 

(www.theoffnews.com - Bangladesh rape rapist marriage Turkey Erdogan Pakistan Imran khan India Narendra Modi marry your rapist bill)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours