সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনি যে একাধারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। আবার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো। আপনার উদ্দেশ্য আমার কয়েকটি প্রশ্ন রইলো। জানি আপনি এসব প্রশ্ন নিয়ে ভাবিত নন। তাই আমিই না হয় উত্তরটাও দেবার চেষ্টা করবো। বিষয়টা বলে রাখি। ইস্যু সৌজন্যে শুভেন্দু অধিকারী। বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে চর্চিত নাম। এমনকি এই তরুন নেতার প্রাসঙ্গিক চর্চা আপনার অস্তিত্বকেও এই মূহুর্তে ছাড়িয়ে রাজ্যবাসীর মনে কৌতুহলী প্যাকেজ হিসেবে উঠে এসেছে।
আপনার দলের কথায় এই আলু বিক্রেতা শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে আপনি আগামী ৭ ডিসেম্বর প্রকাশ্য সমাবেশে স্বয়ং অংশ নেবেন। এতে কি বার্তা দিতে চাইছেন? আর ৭ তারিখটাই বা নির্ধারণ করলেন কেন?
আসলে শুভেন্দু ছাড়া এই সভা তাঁরই খাশতালুকে করে পাবলিক নার্ভ আপনি বুঝতে ও বোঝাতে চাইছেন তাই তো? ক্ষমতার লটবহর পুঁজি করে সভার আয়তন দেখে সত্যি কি পাবলিক নার্ভ বুঝতে পারা যায়? সেটা যদি বোঝার সূচক হয় তবে বাংলায় সদ্য ঘটে যাওয়া ধর্মঘটের সফলতা অবশ্যই দাবি করবে সিপিএম কংগ্রেস জোট ২০২১ এর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসছেই! অন্যদিকে এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে ঠিক আছে রাজ্য সফরে ৮ ও ৯ তারিখ আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। ঠিক এই সফরের একদিন আগে এই সভা করার উদ্যোগ কেন তৃণমূলের? শুভেন্দু বিনা এই সভা আয়োজন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্য কি বার্তা দিতে চাইছেন?সদ্য প্রাক্তন রাজ্য পরিবহণ মন্ত্রীর বাবা শিশির অধিকারী কিন্তু আসল কারণটা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে খোলসা করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীকে বিজেপির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কি বলেছিলেন তা একবার মনে করিয়ে দিই। শুভেন্দুকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে গাছের তলায় বড় হয়েছিস। এত মন্ত্রীত্ব পেয়েছি। চারখানা চেয়ারে আছিস। কত পেট্রোল পাম্প করেছিস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিতে আলু বিক্রি করতিস রে। আলু বিক্রি করতিস।"  আসলে প্রবীণ পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ শিশির অধিকারী যা বলতে আসল কথাটা উহ্য রাখলেন তা হল, এই বক্তব্যের কন্ঠস্বরটা শ্রীরামপুরের টিএমসি সাংসদের ঠিকই। কিন্তু শব্দ প্রয়োগের ব্রেন চাইল্ড সন্দেহাতীত ভাবেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তা একপ্রকার নিশ্চিত তথ্যাভিজ্ঞ মহল। তাই ঘুরপথে শিশির অধিকারী কি বলতে চেয়েছেন তা সহজেই অনুমেয়। অনেকেই মনে করছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও আর উৎসাহী নন শুভেন্দু ইস্যুতে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সভা প্রকারান্তরে হয়ে উঠতে চলেছে 'শুভেন্দু বিসর্জন পর্ব'। যদি না পরিস্থিতির চাকা আচমকা উল্টো দিকে ঘুরে যায়।

আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর চান যে সবাই তাঁর সিদ্ধান্ত জো হুজুর বলে স্তাবকের মতো মেনে নেবেন এককথায়। কিন্তু এই রাশ যে ক্রমেই ঢিলা হতে শুরু করেছে তা তিনি বুঝেও বুঝতে চাইছেন না। অন্তত শুভেন্দু অধিকারী যে মাথা নিচু করে সব মেনে নেননি এটা কিন্তু জলের মতো পরিস্কার। শুভেন্দুর না মেনে নেওয়ার পিছনে কারণও কিন্তু সঙ্গত। তিনি দক্ষ ও সফল সংগঠক। সেখানে তিনি অবনমন মুখ বুজে মানবেনই বা কেন? আর তৃণমূল তো পুরোনো রেকর্ড বাজিয়েই চলেছে। দলনেত্রীর নির্দেশ সবাইকে মানতে হবে। কিন্তু দল যদি গণতান্ত্রিক হয় তবে একক কন্ঠের বদলে সমবেত মতের প্রাধান্য পাবে না কেন? তৃণমূল দল তো নিশ্চয়ই পরিবার কেন্দ্রিক নয়। আর এখানেই নীরব বিদ্রোহ শুভেন্দু অধিকারীর। যদিও তিনি এখনও পর্যন্ত দলের বিরুদ্ধে একটি শব্দ সরাসরি উল্লেখ করেননি। এমনকি দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের আহ্বানে রফা-বৈঠকেও যোগ দিয়েছেন আলোচনার রাস্তা বন্ধ না করে। আসলে তিনি চেয়েছিলেন সম্মানজনক অবস্থান সহকারে দলে মর্যাদার প্রত্যাবর্তন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে একচুল নড়তে নারাজ। দল চালাবেন মিলেটারি আদলে কিন্তু অন্যের সম্মানের প্রশ্নে নমনীয় হতে তিনি যে অসহনশীল তা অতীতে বাংলার মানুষ বারেবারে দেখেছে। তাই তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ববি হাকিম কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরোক্ষে মাইক্রোফোন বানিয়ে যা নয় তাই শুভেন্দুকে আক্রমণ শানিয়েছেন স্বকীয় মর্জিতে। অন্যদিকে লোকচক্ষুর সামনে তিনি আলোচনায় আগ্রহী প্রতিষ্ঠা করতে সৌগত রায়কে ব্যবহার করছেন। আসলে শিশির অধিকারী চরম সত্যিটা খোলসা করে দিয়েছেন দলনেত্রীর এহেন দ্বিচারি আচরণের মধ্যেই। নাতো এত তাড়াহুরো কেন থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭ তারিখের সভা নিয়ে। শুভেন্দুকে দলে রাখার তাগিদ যদি তিনি অন্তঃকরণে অনুভব করতেন তবে অন্তত শুভেন্দুর খাসতালুকে সভা করার সিদ্ধান্ত এখনই নিতেন না। কেউ কেউ তো আগ বাড়িয়ে বলতে শুরু করেছেন শুভেন্দু স্বমহিমায় দলে থাকলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। তাই শুভেন্দুর অন্তর্জলি যাত্রা এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
শুভেন্দু অধিকারীও কিন্তু চতুর ও দক্ষ রাজনীতিবিদ। তিনিও শক্ত মাটিতে পা রেখে রাজনীতি করে এসেছেন। তাই সফলতার বিনিময়ে দলের প্রকাশ্য বিরোধিতা না করেও একতরফা অবনমন হজম করার যে মানুষ তিনি নন তা ইতিমধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন দলকে। ফলে যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নাম না করে আশালীন আক্রমণ করেছেন আর সেই সাংসদকেই হেলিকপ্টারে সফরসঙ্গী করে মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া ভ্রমণ করছেন তা শুভেন্দুর পক্ষে মেনে নেওয়াটা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই তিনিও পাল্টা চপেটাঘাত করে সফরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করলেন এইচআরবিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নমনীয়তা তো দূরের কথা বরং রাজনৈতিক অসৌজন্যতা দেখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই পদে সেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই স্থলাভিসিক্ত করেন। কিন্তু এর নাম তাম্রলিপ্ত সরকারের ভূমিপুত্র শুভেন্দু। এই অপমানের যোগ্য জবাবের বলটা ফের পাঠিয়ে দিলেন রাজ্য প্রশাসন কর্ত্রীর কোর্টে। পরিবহণ সেচ ও জলসম্পদ উন্নয়নের মতো মন্ত্রীত্বে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে। সঙ্গে অ্যাটাচড রাজ্যপাল। এরকম স্ট্রেট বাউন্সার ডেলিভারি শুভেন্দুর থেকে এত চটজলদি আসতে পারে তা অতি বড় রাজনৈতিক বিশ্লেষকও অনুমান করতে পারেননি।
তাই মুখ্যমন্ত্রীর অতি উদ্যোগের কারণে শুভেন্দু-বিনা এই সভা যদি তাড়াহুরো করে সত্যি আয়োজন করা হয় তবে যে আবার কোনও রাজনৈতিক রকেট লঞ্চারের প্রত্যাঘাত কালিঘাটের অ্যাসবেস্টরে ছাদে আছড়ে পড়বে না কাঁথির লঞ্চার প্যাড থেকে, তা কে বলতে পারে? রাজনীতির ময়দানে একটা কথা খুব প্রচলিত। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর শত্রু হল পরম বন্ধু। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাও কিন্তু প্রদীপের সলতে পাকাতে তাই বাংলায় আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার পরে পরেই। এই আশঙ্কা যদি সত্যি হয় তবে বলতেই হবে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁকুড়ার উদ্দেশ্য কপ্টার উড়ান হল একটি মাইলস্টোন। যে মাইলফলকে জ্বলজ্বল করে লেখা থাকবে ঘাসফুল উজারের এক দাম্ভিক উপাখ্যান। যেটির শিলান্যাস ইতিমধ্যেই অজান্তে করে ফেললেন অনমনীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
(www.theoffnews.com - suvendu adhikari mamata Banerjee trinamul congress) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours