শেখর রায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:

রাজ্য বাম ও কংগ্রেসের ডাকা ধর্মঘটের আংশিক সফলতা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় প্রাপ্তি প্রায় শূন্য। ধর্মঘটের অধিকার সংবিধান সঙ্গত এবং ধর্মঘটিদের সাত দফা দাবী সমুহ ন্যায়সঙ্গত।  কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এটা কি ধর্মঘটের যথার্থ সময় ছিল কিনা। রাজ্য শাসক দল শক্তিহীন বামপন্থীদের পাত্তা দেয়নি যদিও উপচারিক বিরোধিতা করেছিল। বিজেপি রাস্তায় নেমে কোন বিরোধিতা করেনি যদিও তারাও ধর্মঘটিদের সমালোচনা করতে পিছপা হয়নি। মানুষ প্রশ্ন তুলছে যে কেন্দ্রের মোদী সরকার বিরোধী বন্ধ আসলে রাজ্য শাসকের বিরুদ্ধে জনক্ষোভকে লঘু করে দেয়ার প্রচেষ্টা মাত্র। মানে দেশের মানুষকে কার্যত বলার চেষ্টা করা যে তৃণমূল সরকার নয়, আসল শত্রু হোল মোদী সরকার। সে কারনের এই বাম ধর্মঘট নিয়ে রাজ্যের মানুষের তেমন কোন উৎসাহ ছিলনা বা রাজ্য সরকারেরও কোন সমস্যা ছিল না। বরং ওদের প্রচ্ছন্ন সমর্থনই ছিল।    

বাম ও কংগ্রেস এই দুপক্ষই পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক শক্তির বিচারে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক। ২০১১তে তৃণমূল নির্বাচনে জিতে দুই রাজনৈতিক শক্তির রাজনৈতিক সংগঠনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সে সময় তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্ট পার্টি ও অন্য তিন দল ভোটে ধরাশায়ী হয়ে যায়। খাল কেটে কুমীর ডেকে এনেছিল কংগ্রেস, তারাই সংগঠনগতভাবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  এই সব হেরো দলের নেতা কর্মীরা দলে দলে সব দিদিমার্কা দলে গিয়ে নাম লেখায়।  সিপিআইএম দলের হাজার হাজার বেলজ্জ কমরেডরা যারা দল ক্ষমতায় থাকাকালিন হম্বিতাম্বি করে নানাবিধ বেআইনি সুবিধা ভোগ করে থাকত ও জনগণকে নিগ্রহ করত, তারা সুযোগ বুঝে ক্ষমতা ভোগের লোভে রাজ্য শাসক দলে গিয়ে নাম লেখায়। সেই হিসাবে এই ক্ষমতাসীন তৃণমূল দলটি প্রাক্তন কংগ্রেসি ও মার্ক্সবাদী কম্যুনিস্ট দলের নেতা কর্মী দাগীদের একটি দল বিশেষ। পুরাতন তৃনমূলিরা এখন প্রায় বাতিলের দলে। তাই তাদেরও দল ভাঙছে।   

ষাটের দশকের শেষে সিপিআইএম দল ভাগ হয়ে নকশালপন্থী দল গঠিত হোল, তখন তাদের নকশাল ‘বিপ্লবী’ কমরেডরা জনগণকে সাবধান করতেন এই বলে যে জনগণ অচিরেই বুঝবেন যে এই ভোটপন্থী ‘কম্যুনিস্ট’ দল কোন কম্যুনিস্ট দলই নয়। এরা ভোটে হেরে গেলে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে যাবে। কারন এই দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে কোন কম্যুনিস্ট আদর্শই নেই। সব কটা রাষ্ট্র ক্ষমতার দালাল, বিপ্লবী কম্যুনিস্টদের চরম শত্রু। এই সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধাচারন না করে ভারতে কোন দিন নয়া গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হবে না। তাদের কথা প্রমান হতে এ রাজ্যে ৩৪ বছর লেগে গেল। তারপরে ক্ষুব্ধ জনগণের নিগেটিভ ভোটে জয়ী হোল আরেক চরম প্রতিক্রিয়াশীল দল নাম যার তৃণমূল কংগ্রেস। যার বিষফল এখন ভুক্তভোগী জনগণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। তাই মোদীর হাত ধরে এবার বিজেপিকে ভোটে জয় করিয়ে দেখার প্রস্তুতি চলছে। 

জেলায় জেলায় বহু সিপিআইএম কর্মীরা বিগত নির্বাচনগুলিতে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে নেয়, কারন তাদের আপত্তির জায়গা ছিল কংগ্রেসের সাথে এক অনৈতিক জোট। যে পরিবার ভিত্তিক দলটি দেশে অর্ধশতক ধরে শাসন করার নাম করে শোষণ ও সীমাহীন দুর্নীতি করে এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে বামপন্থী নেতা কর্মীরা এক জোট হয়ে বরাবর ভোটে বিরোধিতা করে এসেছে, এখন তাদের সাথে সব ভুলে শুধু ভোটে জিতে ক্ষমতা পাবার জন্য এই আদর্শবিহীন  অনৈতিক জোটের সমর্থনে কাজ করা যায় না। এমন বামপন্থী ধ্যান ধারনার মানুষ আজো রাজ্যে কিছু কম নেই। যারা বলছেন শাসক তৃণমূল দলের কোন নীতি আদর্শ নেই। তারা দেখতে পান না যে এই ক্ষয়িষ্ণু বাম জোটেরও কোন নীতি আদর্শ নেই। এক সুবিধাবাদি রাজনৈতিক জোটেরও তাই কোন ভবিষ্যৎ পশ্চিমবঙ্গে নেই।    

এই রাজনৈতিক শুন্যতায় রাজ্যের জনগন রাজ্য ক্ষমতায় অদেখা বিজেপিকে একবার পরখ করে দেখতে চাইছে যদি তাদের প্রতিশ্রুতি মত ‘সোনার বাংলা’ তারা গড়ে দেয়। সোনার কি লোহার বাংলা হবে সেটা নিয়ে জনগণ মোটেই ভাবিত নয়। দরিদ্র মানুষ বড় কষ্টে আছে। কর্মহীন কয়েক কোটি মানুষ বড় দুঃখে আছে। বাজারে চাল গম আলু তেলের দাম ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। অপসংস্কৃতির বন্যা বইছে হতভাগ্য রাজ্যে।  রাজনৈতিক হিংসা, মত প্রকাশের অধিকারে বাঁধা, গ্রেপ্তার ও সামাজিক ও প্রসাশনিক ন্যায়বিচারে বঞ্চিত জনগণ। তার উপর মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের নাম এক মারন ব্যাধি করোনা ভাইরাস। প্রায় বিনা চিকিৎসায় হাজার হাজার মানুষ মরে যাচ্ছে। লাশ বেমালুম গায়েব হয়ে যাচ্ছে। আপনজনকে শেষ দেখাটুকু দেখতে পাচ্ছেনা। বাঙালির ক্ষোভ সীমাহিন। কে বা কারা করবে এর প্রতিকার জানিনা।  কারন ৭২ বছর কেটে গেল কেউ কথা রাখেনি।

(www.theoffnews.com - cpim strike congress trinamul congress) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours