প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূূর্ব বর্ধমান:

পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি জনগণের নাভিশ্বাসের কারন। বছরে নিয়ম করে পেট্রল, ডিজেলজাত দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন এদেশে স্বাভাবিক নিয়মও। পেট্রল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারেরই কোষাগারে বাড়তি অর্থ ঢোকে এমনটা নয় বরং  রাজ্য সরকারগুলিও এইসব দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির সুফল ভোগ করে। 

চায়ের আড্ডায় গতকাল সন্ধ্যায় এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করছিলাম। খুব একান্ত আলোচনা হলেও চায়ের দোকানের আলোচনা বলে কথা। যথারীতি যা ঘটার ঘটল। 

আলোচনার গোপনীয়তা রইল না। 

আমাদের একান্ত চা চর্চার মধ্যেই ঢুকে গেলেন 

জনৈক ভদ্রলোক । 

ভদ্রলোক বললেন- "কি যা তা বলছেন মশাই। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হলেই আমাদের দেশে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে পেট্রোল, ডিজেল বা গ্যাসের। 

আমাদের আলোচনায় অযাচিত ওনার উপস্থিতি ঠিক পছন্দ হলো না। তবুও তাঁকে বললাম দাদা এসব আপনাকে কে খাওয়ায়? আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোল, ডিজেলের দাম স্থিতিশীল থাকলেও আমাদের দেশে পেট্রোল, ডিজেলের বহুবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। আর তা ঘটিয়েছে এদেশের সরকার। 

আমি বলেছিলাম রাজ্য সরকারও এইসব জিনিসগুলোর দাম ইচ্ছা করলেই কিছুটা কমাতে পারে। কেন্দ্র দাম বাড়ালে রাজ্য সরকার চাইলে ট্যাক্সের পরিমান কমিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 

আমার এই কথা শুনে ভদ্রলোক তো ভীষন চটে গেলেন। 

এরপর তিনি কথায় কথায় তর্ক জুড়লেন । এরই মধ্যে আমাদের আশেপাশে বেশ কয়েকজন  লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে । সকলেই  আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের যুক্তি তর্ক মন দিয়ে শুনছিলেন। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি  চলার পর ওই ভদ্রলোক উত্তেজিত হয়ে আমাদের একটি অশ্লীল শব্দ বলে বসলেন।যে কথাটি ভীষন ভাবেই আমার কানে লেগেছিল। আমি বাক শক্তি হারিয়েছিলাম তাৎক্ষণিক। আমি ওই শব্দটির তীব্র বিরোধিতা করলাম প্রকাশ্যে।

আমি ওনাকে বললাম, বাংলা ভাষায় ব-কার সংযোগে কত অশ্লীল কথাই তো আছে। সেগুলির কোন একটি আপনি বলতেই পারতেন। আমরা কেউ রাগ করতাম না। চায়ের দোকানের আড্ডায় এইসব শব্দ চলেই। আজকাল চলচ্চিত্রেও ভিলেনের মুখে ওই শব্দগুলির ব্যবহারও হচ্ছে। চিত্র পরিচালক থেকে লেখক সক্কলেই কমবেশি শব্দগুলোর প্রয়োগ করছেন নাটক, যাত্রাপালা ও চলচিত্রে।  কিন্তু আপনি সে শব্দগুলো না বলে বললেন কিনা "বুদ্ধিজীবী"।  

হাঁ, উনি আমায় "বুদ্ধিজীবী" বলেছেন। আমি এই শব্দটিকে কানে নিতে পারিনি। সারা রাত ওই শব্দটি আমার চেতনার জগৎকে বারেবারে আঘাত করেছে। আমি ঘুমাতে পারিনি। দুঃখ পেয়েছি। নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা হয়েছে। 

কেন উনি আমাকে "বুদ্ধিজীবী"- বলবেন?

আচ্ছা বলুন তো সত্যিই কি আমি "বুদ্ধিজীবী"? আমায় তো অনেকেই চেনেন। আমার ব্যবহার, আচরনে আমায় কি কোনদিন সুবিধাবাদী, অর্থলোলুপ মনে হয়েছে?

আমি কি রাজ্য বা দেশের বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি দেখেও নিয়ে সরীসৃপের মত শীত ঘুমে আচ্ছন্ন আছি?

আমি কি কাটমানি খেয়ে রাস্তায় নামি? আমি কি কোন দলের পক্ষে টাকা পয়সা নিয়ে লেখালিখি করি ? 

আমার কি বিবেক বুদ্ধি নেই? আমার কি মানবিকতা নেই? দেশের বা রাজ্যের ক্ষতি হবে জেনেও আমি কি কোন অনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি?

আমি কি সেন্ট, স্নো মেখে কোন অনৈতিক আন্দোলনে কোনদিন অংশগ্রহণ করেছি?

আমি কি রাস্তায় মাচা বেঁধে দিনের পর দিন বসে কোনদিন কোন আন্দোলনে অংশ নিয়ে রাজ্যের ক্ষতি করেছি?

বিশ্বাস করুন, গতকাল রাত ছিল আমার কাছে এক দুঃস্বপ্নের রাত। সারারাত ঘুমাতে পারিনি ওই "বুদ্ধিজীবী" শব্দটির জন্য।  

তাই আপনাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ দয়া করে কাউকেই কোনদিন "বুদ্ধিজীবী" বলবেন না। কারন এই পেশাটি কালিমালিপ্ত হয়েছে। এই বিশেষ শব্দটি মান হারিয়েছে। দেশে এত বড় কৃষক আন্দোলন হচ্ছে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে, লকডাউনে অসংখ্য কর্মী কর্মচ্যুৎ হয়েছেন আরো আরো কত সমস্যা। তবুও দেখুন এরা ঘুমাচ্ছে। 

তাই দয়া করে রেগে গিয়ে কাউকেই ওই ভদ্রলোকের মত "বুদ্ধিজীবী" বলে গালিগালাজ করবেন না। কারন এই শব্দটি মান হারিয়েছে। কাউকে বললে আসলে তাঁকে ছোট করা হয়, হেয় করাই হয়। 

কাউকে হেয় করার অধিকার কারুর নেই।

(www.theoffnews.com - intellectual)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours