শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

যদি প্রশ্ন করা হয় বলিউডের ইতিহাসে সব চেয়ে  বেশি সারা জাগানো মুভির নাম কি? উত্তর হবে মুঘল এ আজম। কেন এ মুভিটি সর্বকালের জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল? মুসলমানদের চোখে এ মুভি তো ভালো লাগার কথা ছিলো না। কেন না, বাদশা আকবর তো একজন ধর্মদ্রোহী ছিলেন, কারো কারো মতে নাস্তিক। আবার হিন্দুদের চোখেও মুভিটি এত পছন্দ হওয়ার কথা ছিলো না। কারন মোঘলরা তো বিদেশি শাসক। তারপরও  মোঘল এ আজম হিট, সুপার ডুপার হিট। আজ পর্যন্ত কোন হিন্দি মুভিই মোঘল এ আজমের জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারনি। কেউ কেউ মনে করেন এক দিকে ঐতিহাসিক ও অন্যদিকে বিদ্রোহী শাহাজাদার অসাধারণ প্রেম কাহিনী। তাই মুভিটি এত জনপ্রিয়। মনে হতে পারে মুভি তো একপ্রকার বিনোদন। কেবল অসাধারণ কাহিনী হলেই কি মুভি জনপ্রিয় হয়? তাহলে মোঘল এ আজমের দুবছর আগে রিলিজ হওয়া "ইহুদী" মুভিটি অতটা জনপ্রিয় হয়নি কেন? সেখানেও তো ট্র্যাজিডি কিং সেই দীলিপ কুমার! 'ইহুদী' মুভিতেও দিলিপ কুমার তো বিদ্রোহী শাহাজাদা! বন্দিও হন। রোমান আদালতে বিচারে মৃত্যু দন্ডের মুখোমুখিও হতে হতে বেঁচে যান। ঠিক মধুবালার মত মিনা কুমারীও শাজাহাদা মার্কাস রুপি দিলিপ কুমারের জীবন বাঁচাতে নিজের প্রেম ও জীবন উৎসর্গ করতে চায়। এবং এক সময় প্রেমিকার জন্য নায়ক দিলিপ কুমার রোমান শাহাজাদা মার্কাস নিজের দৃষ্টি শক্তিকে নিজের হাতে ধ্বংস করে দেন। ট্রাজেডি তো 'ইহুদি' মুভিতেও কম ছিলো না! ঐতিহাসিক মাল মসলাও কম নেই ঐ মুভিতে। বরং ঐতিহাসিক খোড়াক বেশি থাকার কথা।

আসলে এ দুটি হিন্দি মুভি 'মোঘল এ আজম' ও 'ইহুদি' নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক উন্নয়নের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। আরব মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মিশর ও জর্ডান প্রথম ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। খোমেনির 'ইসলামী বিপ্লব' করার আগেও ইরানের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক ভালো ছিলো। ঐতিহাসিক ওসামানীয় খেলাফতের  সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশ তুরস্কের সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক ও ব্যবসায়ীক সম্পর্ক বেশ মজবুত। রাশিয়ান ফেডারেশন ভেঙ্গে নতুন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বনে যাওয়া আজারবাইজানও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক আগেই। যার কৃতজ্ঞতা স্বরুপ আজারবাইজান আর্মেনীয় যুদ্ধে ইসরায়েল আজেরিদের পক্ষ নেয় 'ইহুদী' হয়েও! আবার আচানক যেন আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের হিড়িক পরে গেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না এটা ইসরায়েলের দীর্ঘ কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার ফলাফল। ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পাকিস্তানের উপর কোন কোন রাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে এমন দাবি করেছেন খোদ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। এমন কি এ সময় ইসরায়েলী টিভিতে একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক সাক্ষাৎকারও দেয় এবং ইসরায়েলের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে মতামত দেন। এমন গুজবও শোনা যাচ্ছে ইসরায়েল যদি কাশ্মীর নিয়ে কোন 'বিগ ডিল' (?) করে তবে পাকিস্তান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে! ভারতের সাথে ইসরায়েলের যে সম্পর্ক, তাতে পাকিস্তানের সে আশায় গুড়ে বালি, বলে অনুমান করা কঠিন নয়। 

২০২০ সালেই চারটি মুসলিম রাষ্ট্র, আরব আমিরাত, বাহারাইন, সুদান ও মরোক্কো  ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলো। এ বিষয়ে আরব আমিরাত তো আরো দু-চার কদম আগে।  ধারনা করা হচ্ছে ইসরায়েলীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই তুরস্ক ও পাকিস্তান সহ ১৩টি দেশের ভ্রমণ ভিসা বাতিল করে দিয়েছে। এবং ঐ সকল দেশ থেকে আরব আমিরাত কোন শ্রমিকও আনবে না। উল্লেখ্য ১৩টি দেশের মধ্যে ১২টিই মুসলিম প্রধান দেশ! 

বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।  ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের আরেক নিকতম প্রতিবেশি ভুটানের সাথেও কদিন আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলো। প্রশ্ন আসতে পারে তবে কি একদিন বাংলাদেশের সাথেও ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপিত হবে? নাকি কখনোই তা ঘটবে না! হলেও বা তা কবে? সৌদী-আরব ও পাকিস্তানের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপন করার পর? কোন সন্দেহ নেই, ইরান প্রসঙ্গে আমেরিকা ও ইসরায়েলের সাথে  'ফাইনাল ফয়সালা' হলে সৌদী আবর প্রকাশ্যে ইসরায়েলেরকে স্বীকৃতি দেব। গুজব সূত্রে ধরে নিলাম, কাশ্মীর নিয়ে 'বিগ ডিল' হলেই  ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে পাকিস্তান! কিন্তু আমরা, তথা বাংলাদেশীদের হাতে তো 'ইরান' ও 'কাশ্মীর' নামের কোন ট্রাম কার্ড নেই। আমরা তবে কোন "লাভের" বিনিময়ে ইসরায়েলকে স্বাীকৃতি দেব? ইতিহাস বলে, ইসরায়েল বাংলাদেশকে সর্ব প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিলো! কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃবৃন্দরা শংকিত ছিলেন যাতে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা, ইহুদী প্রসঙ্গ টেনে পুরো  মুক্তিযুদ্ধকেই বিতর্কিত করতে না পারে। সম্ভবত এ কারনে তারা ইসরায়েলের নতুন বাংলাদেশ স্বীকৃতি গ্রহন করেনি। আর তাই আজো হয়তো  বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা থাকে, "This passport is valid for all countries of the world except Israel."

ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা খুবই কঠিন। কারন এ দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায় পরিবার থেকেই শিক্ষা পেয়ে থাকে, ইহুদীরা শত্রু। তাদের সাথে মুসলিমদের কোন বন্ধুত্ব হতে পারে না। এমনকি এও শিখেছে ও এবং বিশ্বাস করে একদিন, বনের বৃক্ষ ডেকে ডেকে বলবে এই দেখ, আমার পেছনে ইহুদি লুকিয়ে আছে, তোমারা এদের হত্যা কর! এমন বিশ্বাস ও শিক্ষা নিয়ে যারা বড় হয় তাদের পক্ষে তো ইহুদিদের প্রতিষ্ঠিত কোন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়া অসম্ভব। আমরা বাংলাদেশে, যারা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছি, তারা সবাই জানি ইহুদিরা কাফের, খারাপ, জঘন্য ও জাহান্নামি! আমাদের কখনোই জানতে দেয়া হয় না, ইহুদিরা মেধাবি। তারা প্রযুক্তি, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান দিয়ে পৃথিবীকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। এবং মানুষের জীবন ও যোগাযোগকে সহজ করে দিয়েছে। More Catholic then pope এর জায়গায় হয়তো একদিন পড়তে হবে, Bengali Muslims are more Muslim then Arabs!

(www.theoffnews.com - Bangladesh Bengali Arabs Muslim)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours