প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূূর্ব বর্ধমান:

নির্বাচন এক রাজনৈতিক লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হলে কেবল মাত্র নীতি ও আদর্শের বুলি কপচিয়ে জয়ী হওয়া কঠিন, যা বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক দলগুলি এখনও মনে করে ঠিক। দলকে যেমন সুগঠিত করতে হয় সাথে সাথে কূটনীতিও প্রয়োগ করতেই হয় নির্বাচনে জয়লাভের জন্য। এই কাজটিই এদেশে দক্ষিণপন্থী দলগুলি ভালোই রপ্ত করেছে। এরা নীতি আদর্শের তোয়াক্কা করে না, শাসন ক্ষমতায় টিকে থাকাই এদের একমাত্র লক্ষ্য। নির্বাচনের আগে ভুড়িভুঁড়ি প্রতিশ্রুতি আর জনগণকে কিছু রিলিফ দিয়ে কিনে ফেলার চেষ্টা করে। এরাজ্যে তৃণমূল দল প্রথম নির্বাচনে জয়লাভের পর এই কাজটিই করে চলেছে। আর বর্তমানে বিজেপি ক্ষমতায় আসার জন্য সেই পথই ধরেছে। 

এরাজ্যে দল ভাঙানোর খেলা বিগত কয়েক দশক ধরে নির্বাচনের আগে ও পরে দেখছে রাজ্যবাসী। দল ভাঙানোর খেলায় অতীতে বাম সরকার যে পথে কোন দিনও হাঁটেনি, তৃণমূল দল সরকার গঠনের পর প্রথম থেকেই সে পথে হেঁটেছে। তবে সাধারন মানুষ আজকাল এসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তা, ভাবনা করেও না। এই দল ভাঙানো, বিধায়ক কেনাবেচা সমর্থনযোগ্য না হলেও মানুষ মেনে নিচ্ছেন তার অপছন্দের দলকে পরাস্ত করার জন্য। অথবা নিজের দলের জয় সুনিশ্চিত করার জন্য।

প্রথমেই বলেছি, এই দল ভাঙিয়ে নেতা কেনার খেলায় বামপন্থীরা একেবারেই অংশ গ্রহন করে না। এটা ওদের ভালোর দিক। বামপন্থী দল সব সময় একদম গ্রাউন্ড লেভেল থেকে কর্মী ও সমর্থক তুলে এনে দল গঠনে ও সংগঠন মজবুত করার মতে বিশ্বাসী। পাশাপাশি জনগনের মধ্যে থেকে গন আন্দোলনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী কর্মীদের চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটানোতেও বিশ্বাসী। তবে ইদানিং সেই কাজে সম্ভাবনা থাকলেও কেমন যেন একটা গা ছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে (এই রাজ্যের ক্ষেত্রে)। যদিও এই সময়ে সমগ্র দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলনের ইতিবাচক প্রভাব বাম দলের অন্দরেও দেখা যাচ্ছে। 

তবে বামদলে বিগত দুই দশক ধরেই একটি মন্দের দিক প্রকট হয়েছে। তা হলো অপছন্দের কর্মী হলে তাকে দল থেকে বহিস্কার অথবা কোণঠাসা করার প্রবণতা। এই কারনে বামদলগুলি কত কর্মীকে যে হারিয়েছে বিগত কয়েক দশকে সে সংখ্যাও খুব একটা কম নয়। যাঁরা পার্টিতে থাকলে বর্তমান পার্টির যে হাল তার চেয়ে আর খারাপ হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না এ কথা হলফ করেই বলা যায়। অনেক সুযোগ থাকা সত্বেও নতুন করে এই সময়কালে বাম দলগুলি খুব বেশি নতুন কর্মী বা মজবুত সংগঠন তৈরি করতে পারেনি, উপরন্তু অনেক কর্মীকে কাজ না করতে দিয়ে, দল থেকে বহিস্কার করে দলের ক্ষমতাকে কমিয়েছে। যদিও এর ফলে নেতাদের আসন দখল করে বসে থাকা নিশ্চিত হয়েছে। আসলে এদের আন্দোলন বিমুখতা দলে নতুন রক্তের জোগানকে বিলম্বিত করছে। 

যাহা এরাজ্যের বাম আন্দোলনের বিকাশের জন্য অমঙ্গলের। সেই কারণেই আগামী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা  নির্বাচনে দুটি দক্ষিণপন্থী দলের লড়াই দেখতে হবে রাজ্যবাসীকে। অমঙ্গলের হলেও বাস্তব যে মেরুকরণের রাজনীতিই বোধহয় আগামী কয়েক দশকের জন্য এবাংলার ভবিতব্য।

(www.theoffnews.com - West Bengal politics CPM BJP TMC Congress)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours