মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:

ভাঙাগড়া জীবনের নিয়ম। রাজনৈতিক দল তো সেই জীবনের বাইরে নয়। তবে হঠাৎ করে হলে চমক লাগে। সন্দেহ জাগে মমতা ব্যানার্জীর মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদের লীডারশিপ দক্ষতার ওপর।

টিভিতে দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জীর একটা বাইট দেখলাম। হতাশ সময়ে কর্মীদের সাহস জোগাতে বলছেন, যারা প্রথম থেকে দলে ছিল, তারা দলেই ছিল, জোয়ারের সময়ে যারা এসেছিল, তারা ভাটার টানে সরে যাচ্ছে!(বক্তব্যের জিস্ট)

দলে এত বড় একটা ভাঙন, তাঁর মতো দক্ষ নেত্রী এতদিন জানতে বা বুঝতে পারেননি এটা বিশ্বাস করতে হবে? নাকি ইচ্ছে করে দলটাকে বলি চড়তে দিলেন? নাকি কোন গট-আপ ম্যাচ চলছে? 

সেই আঠানব্বই সাল থেকে যে সকল কর্মীরা রক্তজল করে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, সেই সকল একনিষ্ঠ কর্মীদের কি হবে? রাজনীতিতে বুঝি আবেগের দাম নেই। তাই যারা শুধু ভালোবেসে দলটা করেছে, তারা আজ দলছুট। নেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে যারা দল করেছে তাদের এইভাবে হতাশ করার, তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে বিফল করার অধিকার কি কোন নেতা, নেত্রীর আছে? তাও যদি জানতাম যে অন্য দল গঠন করছে! বিজেপির মতো একটা জনশত্রু দলে যোগ দিয়ে শুধু নিজের ভালোটাই করলেন নাকি এতে সত্যি বাংলার ভালো হবে তা সময়ই বলবে। আমরা শুধু স্পেকুলেশান করতে পারি মাত্র।

রাজনীতি সচেতন পশ্চিমবঙ্গবাসী বামপন্থী ও ডানপন্থী দলে বিভক্ত। ডানপন্থী সমর্থকরা চিরটাকাল হতাশ হয়েছেন দলের অনৈক্য দেখে। আজ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সমগ্র ভারতবর্ষেই কংগ্রেস সহ অলমোস্ট সবকটি ডানপন্থী দল আর্থিক ক্ষমতা ও চোখ রাঙানির ভয়ে মাথানত করে ফেলেছে। ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আর একটি স্বেচ্ছাচারী দল ক্ষমতার দৌলতে যা ইচ্ছে তাই করে চলেছে; বলা ভালো ব্রোকারশিপের নতুন ব্যবসা খুলেছে; ভারতবর্ষ ও ভারতের মানুষকে বিক্রি করে দেবার ব্যবসা ফেঁদেছে। এই সময়টা নিঃসন্দেহে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে অতি দুঃসময়!

আমার কট্টর সিপিএম সমর্থক বন্ধুদের পোস্ট দেখছি; তারা আনন্দে উৎফুল্ল হচ্ছেন। তারা ভারতবর্ষ নিয়ে কতখানি চিন্তিত আমি জানি না; তার চাইতে বেশী আনন্দিত তৃণমূল কংগ্রেসের ভাঙন দেখে। হয়তো তারা দিন গুনছেন; ভাবছেন তৃণমূল নেতা ভর্তি এই বিজেপি কদিনই বা রাজ্য চালাবে? তারপর তো তারাই আবার আসবেন। সমর্থকদের মুখে এমন স্বপ্নের কথা বহুবার শুনেছি। 

কিন্তু বাস্তবটা কি সত্যিই তাই? যতোটুকু চিনেছি এই মোদী-শাহ জুটি পরিচালিত বিজেপিকে, এরা শত্রুর শেষ রাখেন না। তাছাড়া বামপন্থীরা নিজেরা তৈরী আছেন তো? লড়াইয়ের জন্য? একটা কৃষক আন্দোলন এটা প্রমাণ করে না যে তাদের দলে যথেষ্ট যোগ্য নেতা রয়েছেন। কতো শতাংশ জনগন তাদের দিকে রয়েছেন? নাকি সেই সংখ্যালঘু ভোটের আশায় তারা এখনও স্বপ্ন দেখছেন? কতজন তৃণমূল ও বিজেপি নেতাকে তারা দলে টানতে সমর্থ হবেন? সেই আর্থিক সঙ্গতি আছে তো? এখন তো ভারতীয় রাজনীতিতে এমন ট্রেণ্ডই চলছে! জার্সি বদল! তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের নামী-দামী সিপিএম নেতারা শুধু মানুষের ভালোর জন্য সংগঠন করেন, সেটা আজকের দিনে অলীক কল্পনা। তারাও আজ আদর্শচ্যূত। গণতন্ত্রের আবডালে ক্ষমতার লোভ তাদের কি নেই? তা না হলে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতেন না। একা একা নিজেরাই নিজেদের টেনে তোলার চেষ্টা করতেন। পরিশেষে, একটা কথাই বলতে পারি, যে সুদিন একবার চলে যায়, সে আর ফেরৎ আসে না। আর রাজনীতি যখন কেবলমাত্র একটি পেশা হয়েই রয়ে যায়, তখন সাধারণ ভোটারের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

পূর্ণিমা অমাবস্যায় জোয়ার আসে; জোয়ারের ধাক্কায় নদীর বাঁধ ভাঙে।  তখন আবার নদীকে নতুন করে বাঁধতে হয়। কংগ্রেস থেকে ভেঙে আসা তৃণমূল কংগ্রেস দলকে আদৌ বেঁধে বেঁধে রাখা সম্ভব কিনা; আবার নতুন করে গড়া সম্ভব কিনা তা একমাত্র নেত্রী জানেন আর জানেন বিধাতা।

(www.theoffnews.com - West Bengal politics CPM BJP TMC Congress)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours