মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:

ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আঙিনায় একটা কথা খুব প্রচলিত। বিহার ও উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা যারা দখল নিতে পারবে; দিল্লীর মসনদ নাকি তাদের হাতের মুঠোয়। তাই আপামোর রাজনৈতিক সচেতন মানুষের নজর ছিল বিহারের ভোটের গতি প্রকৃতির দিকে।

বিহারে ভোটের ফলাফল বেরিয়ে গিয়েছে। স্পষ্ট হয়েছে কে ক্ষমতায় আসতে চলেছে। চুরি বাটপারি ইত্যাদি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলতেই থাকবে। তবে কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়ে গেল এই রেজাল্ট। প্রশ্ন উঠেছে আমাদের মনে অন্ততপক্ষে যারা রাজনীতি নিয়ে চর্চা করি এবং রাজনৈতিক সচেতন মানুষ, তাদের মনে।

আজকের মানুষ কি আদৌ রাজনৈতিক সচেতন?? এটাই সবচাইতে বড় প্রশ্ন। তানাহলে গত কয়েক মাসে বিজেপি বেশ কিছু জন বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে একতরফা, তবুও এত ভোট পেল কিভাবে?

একাংশের মানুষের মনে লালুপ্রসাদের জমানার যাদবদের দৌরাত্মের স্মৃতি নাকি উসকে দিয়েছে এবারের ভোটে অতি উৎসাহী যুবক-যাদবের দল। তাই তারা বিজেপিতেই আস্থা রেখেছে।

একটি বিশেষ মুসলিম উগ্রবাদী রাজনৈতিক দল মুসলিম ভোট অনেকাংশে কেটেছে যার ফলে মহাজোটের ক্ষতি হয়েছে।

এরা আসলে কারা? যারা মুখে বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল বলে অথচ ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দেয়? উত্তরটা সহজ। এরা সেই মীরজাফরের দল যারা যুগে যুগে নিজেদের বেচে দিয়েছে, সেইসঙ্গে নিজের মাটিকে বেচেছে। ক্ষুদ্র স্বার্থটা কি?? অর্থের বিনিময়ে বিশ্বাসঘাতকতা। ওটাই ওদের নেশা ও পেশা। তবে এদের উথ্থান ও বাড়বাড়ন্তের কারণ একই যে কারণে বিজেপির এত রমরমা। মুসলিম তোষন। 

কংগ্রেস, আরজেডি, এসপি, তৃণমূল কংগ্রেস ও বামদলগুলো তাদের নিজ নিজ রাজত্বকালে মুসলিম ভোটারদের তোষন করেছে যথেচ্ছ। আজকে তারই ফল হাতেনাতে পেতে হবে। একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশের আইন, নিয়ম, নীতি   সকলের জন্য এক হওয়া উচিৎ। আর প্রাইমারী সুযোগ সুবিধা মানে খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে সকলকে যদি সমান অধিকার দেওয়া যায়; অবশ্যই খাতায় কলমে নয়, বাস্তবে তাহলে সংরক্ষণের প্রয়োজন থাকে না।

এরপরের বড় প্রশ্ন এতগুলো চ্যানেলের এগজিট পোল মুখ থুবড়ে পড়লো কেন? সাংবাদিকতা কি তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে?? সংবাদ মাধ্যমকে মানুষ কি আর ভরসা করছে না?

অনেকে জোর জবরদস্তি করে বাংলার আসন্ন ভোটে কি প্রভাব পড়বে তাই নিয়ে আলোচনা বসিয়েছে। বিহার আর বাংলার পরিস্থিতি কি এক? বাংলায় তো যাহাই টিএমসি তাহাই বিজেপি। আর বাংলার মানুষ তো রাজনীতির ওপরই আস্থা হারিয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে যে নীচুতলার কর্মীদের শুধুমাত্র জার্সি বদল ঘটেছে।

বিরক্তি লাগে সবকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের টিভিতে বাইট দিতে দেখলে। এত নকল লাগে যে অসহ্য কথাটাও কম পড়বে।

যাইহোক গুজ্জু ভায়েরা বিহারী ভাইদের  মাত দিতে সমর্থ হয়েছে। বাঙালির বুদ্ধিকে হারাতে না পারলেও একতাকে অনায়াসে পরাস্ত করা সম্ভব। তারওপর মিরজাফর তো বাংলার ঘরে ঘরে অলিতে গলিতে। কে বলতে পারে মুখ্যমন্ত্রীত্বের লোভে সেল্ফ সাবোতেজ করবে না?

বিহারে ভোটের রেসপেক্টে উপসংহারে এটা বলতেই পারি যে এটা ভারতবর্ষ। আমেরিকা তো আর নয়। চাইলেই বদল ঘটে যাবে। ভারতবাসীরা কোনদিনই কি পারবে আমেরিকাবাসীদের মতো বোল্ড হতে? উল্টে দিতে পাল্টে দিতে? বদলে দিতে? না। মনেহয়। এর জন্য মিনিমাম যেটুকু স্বদিচ্ছা ও দূরদর্শিতার প্রয়োজন, সেটা ভারতমাতার বর্তমান ১৩০ কোটি সন্তানের বেশীরভাগেরই নেই বললেই চলে।

তবে একটা আশা দূরাশা হলেও আজ করতে ইচ্ছে করছে। একসময় বিহারে ভোটের নামে আতঙ্কের চাষ হতো; সেই বিহারীবাবু বিবিরা নিজেদের বদলাতে পেরেছেন। পশ্চিমবঙ্গ কবে পারবে? আদৌ পারবে কি একটা রক্তপাতহীন, সংঘর্ষহীন নির্বাচন সংগঠিত করতে? সময়ই একমাত্র এর উত্তর দিতে পারবে বোধহয়।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours