তানজিন তিপিয়া, লেখক ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ:

জল্পনা কল্পনার অন্ত নেই ভ্যাকসিন আসছে, তৈরি হয়ে গেছে, তৈরি হবে। তৈরি হলেও কাজ হবে কি? না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ভ্যাকসিন জিনিসটা আসলে কি?

প্রথম থেকেই জানা যাক, ভ্যাকসিনকে নির্বাচনী পরীক্ষার মতোই ভাবুন যেমন আমরা বোর্ড পরীক্ষার আগে যে পরীক্ষাটা দেই ঠিক তেমনি। অর্থাৎ যাচাই করা কি কি ভালো হচ্ছে আর কোনটি মন্দের দিকে যাচ্ছে।

আমাদের দেহে যখন কোন “প্যাথোজেন” আর্থৎ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি ক্ষুদ্রানু প্রবেশ করে তখন আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিস্পন্দ করে অর্থাৎ সেই প্যাথোজেনকে ঠেকানোর চেষ্টা করে। এমতাবস্থায় দেখা দেয় নানাবিদ উপসর্গ যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি। এটি হয় আমাদের রক্তের সাদা অংশের কারণে যাকে আপনি আপনার ব্যক্তিগত সৈন্যবাহিনী বলে আখ্যা দিতে পারেন। এটি প্যাথোজেনকে দেহ থেকে বার করতে লেগে পরে। এরই মাধ্যমে জানা যায় যে, আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া কাজ করছে। 

মূলত ৩টে প্রক্রিয়ায় লক্ষ্য রাখা হয় 

প্রথমত, সনাক্ত করা যে, এই এই ধরনের বা আকারের ভাইরাস আমাদের দেহ চলে এসেছে। 

দ্বিতীয়ত, আমাদের দেহ থেকে বার করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এন্টিবডি সরবরাহের মাধ্যমে, যা আমাদের রক্তের সাদা কোষ শ্বেতকণিকা করে থাকে। তখনই উপসর্গ দেখা দেয়, মানে লড়াই চলছে। 

তৃতীয়ত, কাজটি হল মনে রাখা যে আচ্ছা এই এই প্যাথোজেন এসেছিল এমন এমন ঘটেছিলো পরবর্তীতে আবার এলে আমাদের এ  এ কাজগুলো করতে হবে। 

এখন ভ্যাকসিন করে টা কি আমাদের দেহকে তৈরি করে নির্বাচনী পরীক্ষার মতো। প্যাথোজেন এভাবে আসবে, এভাবে তার আকৃতি হবে আর এভাবেই লড়ে বার করতে হবে। অর্থাৎ যদি প্যাথোজেন প্রবেশ করে, যাতে আমাদের দেহ তৈরি থাকে তাকে প্রতিরোধ করতে। এতে করে খুব কার্যকরীভাবে এবং খুব কম সময়ে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্ষম হয় এদের ধ্বংস করতে।

বাস্তবে ভ্যাকসিনে প্যাথোজেন নিজেই উপস্থিত থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে। বিষয়টি অবাক করার মতো, তবে একদম সত্য। ঐ যে একটি প্রবাদ আছে না? “লোহাকে লোহাই কাটে” বিষয়টি অনেকটা এমনি। ভ্যাকসিন হল সেই ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ারই অংশ।

সাধারণত ৩ ভাবে তৈরি করা হয়।   

১- ভাইরাসটিকে কম শক্তিশালী করে। (Live Attenuated Vaccine)

ভাইরাসটিকে জীবন্ত রেখে টীকা তৈরি করা হয় এবং এটি খুবই কার্যকর কিন্তু তৈরি করতে বেশ লম্বা সময় দরকার। যেমন- স্মল পক্স, চিকেন পক্সে এই ধরনের টীকা দেয়া হয়। 

২- ভাইরাসটি কে মেরে। (Inactivated Vaccine) 

কম ঝুঁকি পূর্ণ নিরাপদ কিন্তু বেশি সময় ধরে কার্যকর নয়। অর্থাৎ বছরের পর বছর চালিয়ে যেতে হয়। যেমন- ফ্লু, পোলিও, রেবিসের ক্ষেত্রে এমনি টীকা তৈরি করা হয় যেখানে প্যাথোজেন উপস্থিত থাকে মৃত অবস্থায়। 

৩- ভাইরাসটিকে একাধিক অংশে ভাগ করে। (Subunit Vaccine)

অনেকগুলো অংশে বিভক্ত করে। এটি নিরাপদ কিন্তু একাধিক বার টীকাটি নিতে হয় যেমন- হেপাটাইটিস বি।  

সব তো ভালোই বুঝলাম কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো তৈরি হতে লাগবে কতো সময়? 

উত্তরটি হলো- ন্যূনত্বম সময় লাগে ১০ বছর। এদের মধ্যে অন্যতম হল মামস যার টীকা তৈরিতে সময় লেগেছে  ৪ বছর, এইচ, আই, ভি এইডস যার প্রায় ৪০ বছর পার হয়েও কার্যকর প্রতিষেধক আজো অবিস্কার সম্ভব হয়নি। এমনও কিছু রোগ আছে যেগুলো কোন প্রতিষেধক ছাড়াই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কারণ এতে লম্বা রিসার্চের প্রয়োজন হয় তাতেও ভাগ রয়েছে। প্রথম ধাপে টীকা প্রয়োগ করা হয় প্রাণীর দেহে, পরবর্তী ধাপে দেখা হয় কিছু সংখ্যক লোকেদের দেহে প্রবেশ করিয়ে। তারপর অনেকগুলো মানুষের দেহে পরীক্ষা চালিয়ে। এভাবেই গবেষণা পর্যবেক্ষণ করতে কেটে যায় দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর। কিন্তু সার্স কোভ-২ এর ক্ষেত্রে এই কাজ বেশ দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে।  

তো সমাধানটা কি আর তাহলে? সমাধান তো এই চলমান সময় আমাদের বেশ ভালোভাবেই শিখিয়ে দিয়েছি। সেটি হলো- স্বাস্থ্য সচেতনতা অবলম্বন করা। নিজের প্রতি যত্ন নেয়া, পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ খাবার খাওয়া। সব চেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো দুশ্চিন্তা একদম না করা। আর পারলে আলসে না করে শারীরিক ব্যায়াম চর্চা করা। যেমন- আধ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি, ১০০ বার দড়ি লাফ, এক জায়গায় দাড়িয়ে ১০মিঃ হাত পা নেড়ে দৌড়,  একটি সিঁড়ি ১০ বার উঠানামা। আর অবশ্যই অন্তত ২-৪ লিটার পানি পান করা। একদম সহজ, সরল সোজা উপায়।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours