মৌসুমী প্রামাণিক, লেখিকা, কলকাতা:

গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী তথা সিপিএম নেতাদের বক্তব্য শুনে ও সোসাল মিডিয়ার কিছু সমর্থক তথা পার্টিকর্মীদের লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে যে অত্যন্ত কনট্রাডিকটারি এই মুহূর্তে ওনাদের অবস্থান। ওনারা বলছেন তৃণমূল ও বিজেপি দুটো দলই ক্ষমতালোভী তাই ভোটে জিততে চাইছে। দুটো দলই ডাকাত। বাংলা সংস্কৃতির উপর আঘাত আনবে। বুঝলাম। মানছিও।  কিন্তু ওনারা তবে কিসের আশায় নির্বাচন লড়ছেন? জেতার জন্যই তো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে লড়াই করে। তা আপনারা কি ক্ষমতায় আসতে চাইছেন না? গনতন্ত্রে টিকে থাকতে গেলে নাকি নির্বাচনে লড়তে হবে! তার মানে কমিউনিস্টদের আজকে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ভাবতে হচ্ছে? কিন্তু কেন? কারণ ক্ষমতার লোভ ওনাদেরও বশীভূত করেছে।

হয় ওনারা না ঘরকা না ঘাটকা হয়ে রয়ে গিয়েছেন। নয়তো দু'নৌকায় পা দিয়ে চলছেন। এভাবে চলতে থাকলে ওনারা তো আরো ডুববেন; অস্তিত্ব বলে কিছু থাকবেই না! 

ওনারা কি এখনও মানুষকে বোকা ভাবছেন? যেযেমন খুশী যখন খুশী ব্রেনওয়াশ চলতে পারে!  যে নীচুতলার কর্মীদের সিপিএমের হয়ে তোলাবাজি করতে দেখেছি তারাই এখন তৃণমূলের হয়ে করছে। বিজেপি এলে বিজেপির হয়ে করবে। তবে পরিবর্তনটা কোথায় ও কিসের? একদিকে বিজেপিকে প্রধান শত্রু বলছেন অন্যদিকে বিরোধিতা করতে গিয়ে তৃণমূলকে বেশী গাল পাড়ছেন। এটা কি দ্বিচারিতা নয়? অবস্থানটা পরীষ্কার করতে হবে তো! আচ্ছা মানুষ ওনাদের ভোট দেবে কেন বলুনতো? কি পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন ওনারা গত ক'বছরে? সমস্ত ব্যাংকগুলোতে বামপন্থী ইউনিয়ন। অথচ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক লুট হয়ে গেল। আটকাতে পেরেছেন? অন্ততপক্ষে একখানা জবরদস্ত লড়াই দিতে পেরেছেন? না! রেলসহ একটার পর একটা পিএসইউর বেসরকারিকরণ হচ্ছে কিছু করতে পারছেন? না! একটা বহুমুখী সফল জন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি ওনারা। অথচ বিপ্লব, আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই মানুষের পাশে থাকার কথা ওনাদের। বিহারে কটা সিট পেয়ে আবার অলীক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন; বাংলা দখলের।

মিমকে অযথা ভয় পাচ্ছেন নাকি মিম তৃণমূলের মুসলিম ভোট কাটবে ভেবে আনন্দিত হচ্ছেন ঠিক বুঝতে পারছি না। ওনারা মুসলিমদের ভোট পাবেন না কেন? তাছাড়া এইভাবে ওনারাও তো সেই ভোটারদের ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করছেন। তাহলে ওনারা অন্য দুই দলের থেকে কিসে আলাদা?

ওনারা এতটাই কনফিউজড যে কাকে শত্রু ভাবছেন আর কার বিরুদ্ধে লড়ছেন সেটাই এখনও স্থির করে উঠতে পারেন নি। কাদের পাশে থাকবেন আর থাকবেন না তাই বুঝে উঠতে অসমর্থ হচ্ছেন।

যে গরীবের কথা ওনারা বলতেন, গরীবের হয়ে লড়াই করতেন তারা কি আদৌ গরীব আছেন আর? আদ্যিকালের শ্রেণী বিভাজন করে আর ক্ষমতায় ফেরা যাবে না কমরেড! গরীবরাই এখন সবচাইতে চালাক। ঝুট ঝামেলা করে কাজ নেই। যে ক্ষমতা দখল করবে তার ছাতার তলায় সটান চলে আসি বাবা! নইলে ভাতা, প্রভাতা, উপভাতা তো জুটিবে না!

 আর বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির কথা বলছেন? ওনারা কবে আবার বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন? ক্ষমতায় আসার জন্য গননাট্য, গনসঙ্গীতকে অবলম্বন করেছিলেন।আবার ক্ষমতায় থাকাকালীন আমরা ওরা বিভাজন করেছেন।

যে মোদী আর মমতাকে ফ্যাসিস্ট বলেন ওনারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফ্যাসিস্টগিরি করেন নি? নিজেদেরকে এতটুকু বদলাতে পেরেছেন??? অনেক অনেক ভাবতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে যা ওনারা করছেন বলে আদৌ মনে হচ্ছে না।

এইভাবে সিপিএম কোনদিনই ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না বরং উত্তরোত্তর শেষ হয়ে যাবে। সমস্ত ধরনের মানুষের পাশে থেকে নতুন করে ভাবতে শিখতে হবে; পরিশুদ্ধ করতে হবে নিজেদের।  প্রয়োজন অনুসারে ফ্লেক্সিবল হতে হবে।  নইলে...শেষের সেদিন আর বেশী দূর নয়। গেরুয়া ধারীরা তো আবার লালেদের সহ্য করতে পারে না। তৃণমূল দলটা শেষ হলে ওনাদের চাইতে বেশী খুশী আর কেউ হবে না, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তবে বিজেপিকে পরোক্ষভাবে আহ্বান করে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন না তো?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours