রিঙ্কি সামন্ত, লেখিকা, কলকাতা:

"অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো

সেই তো তোমার আলো...'

অন্তরাত্মায় প্রজ্জ্বলিত আলোর সামনে বিশ্বের সমস্ত আলো মলিন। সেই আলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে আনন্দে মেতে উঠুক জীবন। সকলের সুস্থতা কামনা করে জানাই শুভ দীপাবলি।

দেবী কালিকার মূর্তি মনে করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মহাদেবের বুকের ওপরে দাঁড়ানো চতুর্ভূজা,বিবসনা, এলোকেশী,মুন্ডমালিনী, ত্রিনয়নি,

জিভ সম্মুখে অগ্রস্থ অবস্থায়

কালো বা শ্যামবর্ণের নারীমূর্তি।

মা কালী পুরোপুরি বঙ্গজ দেবী।  শাক্তধর্মের এমন জনপ্রিয়তা বঙ্গদেশ ছাড়া কোথাও মিলবে না। "শাক্ত বিশ্বাস মতে, শাক্তদেবী কালিকা বা কালী দশম বিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা। বিশ্বসৃষ্টির আদিকরণ তিনি। আবার অন্যমতে, ইনিই আদ্যাশক্তি মহাময়ী। তন্ত্র ও পুরাণে কালিকার নানা রূপভেদ। সেই অনুসারে দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালী, শ্মশানকালী ও শ্রীকালী।"

কালী শ্যামা হয়ে উঠেছিলেন রামপ্রসাদের হাত ধরে, রামকৃষ্ণের প্রায় একশো বছর আগে। বাংলায় কালী পুজোর প্রবর্তক বলা হয় নবদ্বীপের তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে। রামপ্রসাদ কৃষ্ণানন্দের শিষ্য ছিলেন। তাঁর গানের সুরে প্রচন্ডরূপী কালীকে গড়লেন ঘরের মায়ের মতো। 

"এ বার সাকার রূপে দেখা দাও মা, মূর্তি গড়ে তোমার অর্চনা করি"।

পাড়ায় পাড়ায় কালী মন্দির, ঘরে ঘরে রামকৃষ্ণ ও মা সারদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরের কালী মূর্তি দেখে মনে হয় কালী যেন স্বামী সহ পাড়ার চিরবাসিন্দা মেয়ে। যাঁকে পাড়ার মাতব্বরেরা তাঁর সংসারের স্বামী, ছেলে-পুলের কথা জিজ্ঞেস করা ছেড়ে দিয়েছেন তীক্ষ্ণ জিভের ভয়ে। মা এতটাই আপন যে সন্তান এতটুকু দ্বিধা করে না বলতে, ' তুই নাকি মা দয়াময়ী, শুনেছি ঐ লোকের মুখে...' অথবা 'বসন পরো মা'। স্বামী বিবেকানন্দের কবিতায় মা এলেন 'কালী, দ্য মাদার' হিসাবে।

কালীকে নিয়ে গান বেঁধেছেন রামপ্রসাদ সেন থেকে মুন্সী বেলায়েৎ হোসেন। ধর্মবিশ্বাস, জাতপাত কখনওই শ্যামাসঙ্গীত রচনা বা পরিবেশনের বাধা হয়ে উঠতে পারেনি।

দুর্গা এবং কালী পুজোর মধ্যে ব্যবধান প্রায় তিনহপ্তার। শরতের মেঘ বিদায় নিয়েছে, সন্ধে নামলেই হালকা হিমেল ভাব। আকাশ জোড়া নিকষ কালো অন্ধকার। এই পরিবেশে ঘোর নাস্তিকেরও  ভক্তি আসে শ্যামাসঙ্গীতের সুরে।

করোনা আক্রমণ এর আগে বাজির ধোঁয়া, আওয়াজ আর রংমশালের তীব্র আলোয় পুজোর আলাদা রূপ হতো। কিন্তু এখন অতিমারি পরিস্থিতি চলছে। সংক্রমণের শিকার অনেকেই। কোমর্বিডিটি, শ্বাসের সমস্যা

রয়েছে বহুজনের। আক্রান্তরা বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে বা  হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এই পরিস্থিতিতে এঁদের জন্য বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়া ভয়ংকর হতে পারে। তাই এ বছর বাজি ফাটানো বন্ধ হোক।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই ষড়রিপু অর্থ্যৎ কাম, ক্রোধ ,লোভ, মোহ, মায়া এবং মাত্‍সর্যর বাস ।আর এই ষড়রিপু করে তোলে বিপথগামী। তাই  কালী পূজার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভেতরে থাকা এই ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। নিজের মনের মধ্যে থাকা সকল অন্ধকার দূর করে সমাজের অন্ধকার দূর করতে সচেষ্ট হতে পারি। আরাধনার মধ্যে দিয়ে শুভ শক্তি প্রবাহিত হোক ভ্যাকসিনের মধ্যে দিয়ে। অশুভ ভাইরাসটি পরাজিত হয়ে পুনরায় সমাজ সুস্থ হয়ে উঠুক।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours