'গুজবে কান দেবেন না', এমন পরামর্শ নতুন না হলেও বহু মানুষ গুজবে কান দেয়। চিল কান নিয়ে গেছে শুনেই উড়ন্ত চিলের পিছু পিছু বেকুবের মতো দৌড়াতে থাকে। হাত দিয়ে কান আছে কিনা দেখার প্রয়োজন বোধ করে না।
বর্তমানে গুজব শুধু কান বা চিলেই সীমাবদ্ধ নেই। কোনো স্পর্শকাতর বা উত্তেজক গুজব রটিয়ে ছড়ানো হচ্ছে হিংসা ও উন্মত্ততা। ব্যক্তি ও সমাজের শান্তি ও স্থিতি বিনষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে গুজবের দাবানল ছড়িয়ে। কখনো কখনো গুজব ছড়িয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। বাজারকে অস্থিতিশীল ও স্বাভাবিক জনজীবনকে বিপন্ন করা হয়।
গুজবের নামে যা-ই করা হোক, সবই উদ্দেশ্যমূলক। মতলববাজ গোষ্ঠী গুজবের আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে। সাধারণ, নিরীহ, বোকা মানুষ গুজবের স্রোতে ভেসে নিজের ও অপরের ক্ষতি করে। ফলে সভ্য, গণতান্ত্রিক ও আইনানুগ সমাজে গুজব সদা সর্বদাই পরিত্যাজ্য। বরং গুজব রটনা অপরাধমূলক কাজ। গুজব সৃষ্টিকরণ ও প্রচার বা গুজবে প্রভাবিত হওয়াও দোষণীয়।
তথ্য, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে সব কিছু স্বচ্ছ ও পরিষ্কার দেখা যায়। তারপরেও কেমন করে গুজবের সৃষ্টি ও প্রচার হয়? হয় এজন্য যে, আলোর সঙ্গে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনি তথ্যপ্রবাহের মধ্যেই লুক্কায়িত থাকে গুজব সৃষ্টি ও প্রচারের সুযোগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রমরমা বিস্তারকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও কুমতলবে কাজে লাগিয়ে সহজেই ও ব্যাপক আকারে গুজব সৃষ্টি ও প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে স্বার্থান্বেষীদের পক্ষে।
সাম্প্রতিক সময়ে গুজব বা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে নারকীয় অপরাধের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অনেক মানুষ গুজবে কান দিয়ে বীভৎসতায় লিপ্ত হয়েছে, যা অপরাধ ও অন্যায়। পরে যখন জানা যায়, বিষয়টি সত্য ছিল না, ছিল গুজব, তখন আর কিছুই করার থাকে না। জান, মালের অপূরণীয় ক্ষতি যা হওয়ার, তা আগেই হয়ে যায় গুজবের কারণে।
এজন্য, কোনো অবস্থাতেই গুজবে কান দেওয়া যাবে না। 'গুজবে কান দেবেন না' নামক যে সার্বজনীন পরামর্শ, তা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন করে স্মরণ ও পালন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বার বার গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়। কোনো ধরনের গুজব বা উসকানিমূলক বক্তব্যে কান না দেওয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
শুধু তাই নয়, গুজব সৃষ্টিকারী সম্পর্কে কোনো তথ্য পেলে তা অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর জন্যেও পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ গুজব সৃষ্টি ও প্রচার দণ্ডনীয় অপরাধ। গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আইনগত বিধান রয়েছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours