মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:
আবার একটা ধর্ষিতার চিতা জ্বলছে। আবার কিছুজন প্রতিবাদের নামে মোমবাতি বিক্রেতার আয় বাড়াবে। আর কিছু বিকৃত মনের মানুষ বাইরে প্রতিবাদী মুখোশ পরে, রাতের অন্ধকারে মেয়েটির কোন কোন অঙ্গ কিভাবে ছুঁয়েছিল তাই নিয়ে বিছানা গরম করবে। কেউ খাপ পঞ্চায়েত বসাবে এই বলে যে 'নির্ঘাত মেয়েটারই দোষ।' এই তো আমাদের সমাজ। আমরা দেবীপুজো করি আবার মেয়েদের মুখোরোচক মাংস ছাড়া ভাবতেই পারি না। সবচেয়ে সফট টার্গেট মেয়েরা।
মণিপুর, পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি, আসিফা, প্রিয়াঙ্কা রেড্ডি, নির্ভয়া হয়ে মনীষা বাল্মীকি। প্রতিবাদী বরুন বিশ্বাসের খুনের মামলা লোকে ভুলেই গেছে।
এছাড়াও কত শত মেয়ে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি সহ গোটা ভারতবর্ষের প্রতিটি কোণে ধর্ষিত হচ্ছে নিত্যদিন। আমরা কিন্তু প্রতিবাদ করছি বিভাজনের রাজনীতি দিয়ে। তোমার পার্টির শাসনকালে ঘটেছে! চল এই ইস্যুতে প্রতিবাদে ভাসিয়ে দিই। অথচ আমার পার্টির একই কাজের বেলায় আমরা চুপ থাকি।
এই রাজনীতি যতদিন চলবে ততদিন বিচারের বাণী বোবা ও অন্ধ বিচারব্যবস্থা থাকবে। একটা মেয়ে ধর্ষিত হলে আমরা ধর্ষকদের হিন্দু মুসলিম, উচ্চবর্ণ, দলিত ইত্যাদি বানিয়ে ফেলি। তাই হয়ত বার বার এই দেশে এমন ঘটনা ঘটেই চলে।
একটা মেয়ে রেপ হয়েছে সেটাই প্রতিবাদের প্রধান কারন হওয়া উচিত। রাজনৈতিক ফায়দা তোলার প্রতিবাদ যতদিন থাকবে ততদিন আমরা মেয়েরা এ দেশে নিরাপদ নয়। আসুন দলমত নির্বিশেষে সব ধর্ষণের ক্ষেত্রেই রুখে দাঁড়াই। মনে রাখবেন আজ যদি আপনি চুপ থাকেন কে বলতে পারে পরবর্তী টার্গেট আপনার মেয়েটি হবে না?
যদি নিরপেক্ষ ভাবে ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে না পারেন তাহলে অন্ধকার ঘরে লুকিয়ে থাকুন। প্রতিবাদের মিথ্যা নাটক করবেন না প্লিজ।
ধর্ষকদের শাস্তি চেয়ে নিরপেক্ষ ভাবে হোক প্রতিবাদ। সমস্ত নারী পুরুষ একজোট হয়ে যদি প্রতিবাদে সামিল হয় তাহলেই হয়ত এই ঘৃন্য বাস্তব পাল্টাবে। জেগে উঠুক সব নারীদের মধ্যে সেই উগ্ৰচন্ডা মা মহাকালী। বিনাশ হোক ধর্ষকদের।
আর হ্যাঁ মিছিলটা ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে করুন। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে নয়। না হলে দেশের প্রতিটা কোনায় ধর্ষিতা মেয়ের চিতা জ্বলবে। চিতা জ্বলুক ঘৃন্য অপরাধীদের। এটাই দেবীপক্ষে আমাদের শপথ হোক।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours