প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র, লেখক, কালনা, পূূর্ব বর্ধমান:

ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেলপথের ইতিহাস অতি প্রাচীন। একেবারে গঙ্গার তীর ঘেষে এই রেলপথের যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতারও অনেক কাল আগেই ১৯১৩ সালে। তৎকালীন ভারত সরকারের(ব্রিটিশ) হাত ধরেই এ পথের যাত্রা শুরু। জনসেবার জন্য নয় আসলে, ব্রিটিশ বেনিয়ারা তাঁদের নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থেই এ পথ তৈরি করতে বাধ্য হয়েছিল। এপথ উত্তরবঙ্গের সাথে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছিল দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির শেষ কয়েক দশকে। ব্যান্ডেল থেকে কাটোয়ার দূরত্ব রেলপথে ১৪৪কিমি অর্থাৎ ৮৯ মাইল। 

স্বাধীনতা উত্তরকাল থেকেই গঙ্গা তীরবর্তী এই অঞ্চলগুলি ছিল একসময়ে দুইবাংলার  শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। বল্লাল সেনের সময়ে বা তারও পরবর্তীকালে বর্ধমান রাজাদের সময়কালে এসব অঞ্চল হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান প্রভৃতি ধর্মাবলম্বী মানুষের মিলেমিশে বসবাসের সুদীর্ঘ এক ইতিহাস রচিত হয়েছিল সেকালে। যা আজও এই জনপদে বর্তমান। 

আজ আমি সেইসব ইতিহাস লিখতে বসিনি। বরং এই রেলপথ ধরে বিভিন্ন জনপদের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় শহর ও গ্রামগুলি তুলে ধরতে চাইছি পাঠকমহলে। আশা করি ভ্রমন উৎসুক পাঠকদের কাজে লাগবে। 

একসময় ব্রিটিশ আমলে এই পথ ধরে স্টিম ইঞ্জিনবাহিত ও কয়লা ইঞ্জিন বাহিত ট্রেন চলতো । কালের নিয়মে সেসব আজ ইতিহাসের পাতায়। স্বাধীনতার পর এপথে ধীরে ধীরে কয়লার ইঞ্জিনও উঠে গিয়ে ডিজেল চালিত ট্রেন ও পরবর্তী সময়ে বর্তমানে ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হয়েছে। 

১৯৯৪-৯৬ সালে প্রথম বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকের আগে এ পথে কলকাতা পৌঁছাতে একসময় যাত্রীদের মুড়ি, গুড় বেঁধে যেতে হতো। কাটোয়া থেকে হাওড়া পৌঁছাতে সময় লাগতো প্রায় ৬ ঘন্টা। সিঙ্গেল লাইন, ক্রসিং এর সময় এক একটি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতো প্রায় ১৫-২০ মিনিট। আজ সে সবও ইতিহাস। এটাই তো নিয়ম ,সময়ের সাথে সাথে উন্নয়নের চাকা অব্যাহত থাকলে অনেক কিছুই বদলে যায় কালের নিয়মে। 

বৈদ্যতিক ট্রেন এই পথে প্রথম চালু হয় ১৯৯৪  সালের মাঝামাঝি সময়ে।  একটি  লাইনেই প্রথম  বৈদ্যতিক ট্রেন চালু হয়  জিরাট পর্যন্ত। তারপর নবদ্বীপ পর্যন্ত ও পরে কাটোয়া পর্যন্ত বৈদ্যতিককরন করা হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটে না। যাত্রীদের কলকাতা পৌঁছানো বা কলকাতা থেকে ফেরা সেসময়ে যেন এক নির্মম যন্ত্রণার ছিল। ২০১৪-১৫ সালে এপথ ডবল লাইন ট্রেন পরিষেবা চালু হয়। আজ কলকাতা বা কাটোয়ার মানুষজন সকালে  ট্রেন ধরলে সব কাজ মিটিয়ে সূর্য ডোবার আগেই গন্তব্যে প্রিয়জনদের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন।

এই পথে যাঁরা এসেছেন তাঁরা জানেন এই ব্রডগেজ রেলপথে ভ্রমনস্থানগুলিকে । এরমধ্যে বাঁশবাড়িয়া- ত্রিবেণী, ডুমুরদহ,  গুপ্তিপাড়া, কালনা, ও নবদ্বীপ ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে অতি পরিচিত গন্তব্যস্থল।  ইচ্ছা করলেই ট্রেন থেকে নেমে কয়েক ঘন্টা সময় ব্যয় করেই দেখে নেওয়া যায় প্রাচীন এই জনপদগুলি  । কলকাতার অনেক মানুষই ইদানিং দু -একদিনের অফরুট ভ্রমণে আগ্রহ প্রকাশ করছেন । তাঁদের  উপকারের জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।  আসুন জেনে নিই প্রাচীন এই জনপদগুলিকে।

ব্রিটিশ আমলে ত্রিবেণী-বাঁশবেড়িয়া জনপদ ব্যবসা বাণিজ্যের বিশেষ প্রসার ঘটেছিল। ব্যান্ডেলের পরের স্টেশন বাঁশবেড়িয়া, দূরত্ব মাত্র ৭.৫কিমি। একসময় নদীমাতৃক এই জনপদে অসংখ্য জুটশিল্প কারখানা গড়ে উঠেছিল গঙ্গার দুই তীর ধরে। এই জুট মিলগুলি গড়ে ওঠার কারনে এই জনপদে হিন্দিভাষী মানুষের বসবাসও গড়ে ওঠেছিল । সেকারনে এই জনপদে  বাঙালি-অবাঙালি সংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার। সব ধর্মের মানুষকেই দেখা যায় এই জনপদে। ছোট্ট এই শহরের কার্তিক পূজা বিখ্যাত। বাঁশবাড়িয়া স্টেশনে নেমেই প্রথমে দেখে নিতে পারেন পীড় বাবার মাজার। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এই মাজারে আসেন ও উপাসনা করেন। 

তবে বাঁশবেড়িয়ায় অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান হলো প্রাচীন হংসেশ্বরী মন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির। 

রাজা নৃসিংহদেব ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এই  হংসেশ্বরী কালীমন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন এবং তার মৃত্যুর পর ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে তার বিধবা পত্নী রাণী শঙ্করী এই মন্দির নির্মাণকর্ম সম্পন্ন করেন। এই মন্দিরের উচ্চতা ৭০ ফুট।  তেরোটি মিনারে প্রস্ফুটিত পদ্মের ন্যায় নির্মিত মন্দিরের ভিতর গর্ভগৃহের অবস্থান। গোলাকার বেদীর ওপর পাথরে নির্মিত শায়িত শিব মূর্তির নাভি থেকে উদ্গত প্রস্ফুটিত পদ্মের ওপর দেবী হংসেশ্বরীর মূর্তি  । এই দেবীমূর্তি নীলবর্ণা, ত্রিনয়নী, চতুর্ভূজা, খড়্গধারিণী ও নরমুণ্ডধারিণী। এই মন্দিরের পাশেই টেরাকোটা নির্মিত অনন্ত বাসুদেব মন্দির অবস্থিত। অনন্ত বাসুদেব মন্দির ১৬৭৯ সালে রাজা রামেশ্বর দত্ত নির্মাণ করেন। দুটি মন্দিরই বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে সংরক্ষিত। মাতা হংসেশ্বরী দেবীর মন্দিরে নিত্য পূজাপাঠের ব্যবস্থা আছে। ভক্তজন প্রতিদিন মাতাকে ভোগ নিবেদন করেন । দ্বিপ্রহরে মন্দিরের গর্ভগৃহ বন্ধ থাকে ,সেই কারনে তখন মাতৃ বিগ্রহ দেখা যায় না । যদিও মূল মন্দিরে প্রবেশের কোন বাধা নাই। বেলা আড়াই ঘটিকায় পুনরায় গর্ভগৃহ খুলে দেওয়া হয়। তখন মাতৃ প্রতিমা দর্শন করা যায় এবং মায়ের কাছে পূজা নিবেদনও করা যায়। ভক্তজন মায়ের ভোগ অন্ন গ্রহণ করতে চাইলে সকাল দশটার মধ্যে মন্দিরের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রসাদ গ্রহণ করতে পারেন।

১২ শতকের শেষ চতুর্থাংশে একটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা অংশ "পাভনা-দুতাম"-এও এই অঞ্চলের পবিত্রতা সম্পর্কে উল্লিখিত আছে।

এই অঞ্চলে  জাফর খান গাজী মসজিদ ও দরগা ও ত্রিবেণীর সঙ্গম দর্শনীয়। ভিন্ন দুই ধর্মের মানুষদের কাছেই ত্রিবেণী অত্যন্ত পবিত্র স্থান।  এই ত্রিবেণী সঙ্গমে গঙ্গাস্নান করে পুণ্যলোভের আশায় বহু মানুষ আসেন  । ওড়িশার স্বাধীন হিন্দু রাজা হরিচরণ মুকুন্দদেব ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরের সঙ্গে সন্ধি করে এই অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন। তারও আগে সপ্তগ্রামে দখলে ছিল পাঠানদের। মুকুন্দদেব আকবরের সহযোগিতায় পাঠানদের উৎখাত করে সপ্তগ্রাম পর্যন্ত তাঁর শাসন কায়েম করেন। ওই সময়েই ত্রিবেণীতে একটি স্নানের ঘাট তিনি নির্মাণ করেন, যা মুকুন্দদেব ঘাট নামে পরিচিত।এই কারনে ঘাটের কাছাকাছি ত্রিবেনীর মন্দিরগুলিতে উড়িষ্যার দৃশ্যমান প্রভাব ফেলেছিল। য়ামুনা, সাধারণত বাংলা ভাষায় যমুনা হিসাবে উল্লিখিত, অতিতে নদীটি গঙ্গার (হুগলী নদী) শাখা হিসাবে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে নদীটি গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং বিলীন হয়েছে।

গঙ্গা তীরে অবস্থান ত্রিবেণী মহাশ্মশানের। পুণ্য লাভের আশায় ভিন রাজ্য থেকেও এখানে সৎকারের জন্য দেহ আনা হয়। শ্মশানের একপাশে একটি পুকুর ‘নেতা ধোপানির ঘাট’ হিসেবে প্রসিদ্ধ। কথিত আছে মনসামঙ্গলের নেতা ধোপানি এই পুকুরে দেবতাদের বস্ত্র ধুতেন। এর কিছু দূরেই ত্রিবেণী খেয়াঘাট । এই ঘাটের কাছেই সমাধিস্থ আছেন চিন্তাহারন স্বামীজী। এই সমাধি  মন্দির ছাড়াও ত্রিবেণীর কাছেই জিটি রোডের উপর স্বামীজীর প্রধান মন্দিরটি অবস্থিত। একটু সময় নিয়ে এই জায়গাটাও দেখে নেওয়া যায়। গঙ্গা তীরে মনোরম পরিবেশে এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত স্বামীজী চিন্তাহারনজি। 

এই ত্রিবেণী একসময়  অতীতে  "মুক্তাবেনী" বা যুক্তাবেনী নামেও পরিচিত ছিল । ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে জেমস রেনেলের বাংলার মানচিত্রে ত্রিবেণীকে "টেরবোনি" নামে অভিহিত করেছিলেন। 

 এখানকার জাফর খান গাজী মসজিদ হল পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের নিকটতম অতিতের বেঁচে থাকা স্মৃতিস্তম্ভগুলির একটি। পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট এমন মন্দির এখানেই আছে ।মসজিদটির একটি আরবি ক্রমবিন্যাস রয়েছে ১২৯৮ খ্রিস্টাব্দ, যদিও প্রমাণ পাওয়া যায় যে এটি সময়ের সাথে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তারিখটি আরও দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে ১২৭২ সালে মুসলিমদের বাংলার বিজয়ের প্রায় ৬০ বছর পর, নিকটবর্তী এলাকাগুলির সাথে "ত্রিবেনী" জনপদটি জাফর খান কর্তৃক দখল হয়েছিল। মসজিদটির দরজাগুলি হিন্দু বৈষ্ণব ভাস্কর্য খোদিত রয়েছে, যা থেকে অনুমান করা হয় যে মন্দিরের উপর সম্ভবত মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।

সপ্তগ্রামের শাসনকর্তা থাকাকালীন জাফর খান গাজি বর্ধমানের কালনা পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তী কালে মানুষের সুবিধার জন্য হুগলির জেলা জজ ড্যানিয়েল স্মিথের চেষ্টায় কুন্তী নদীর উপর একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মিত হয়। যা পর্যটকদের কাছে অবশ্যই দর্শনীয়। কারন এই ঝুলন্ত সেতুটি ঋষিকেষের লক্ষণ ঝুলার আদলে তৈরি। শোনা যায় সেই সময় সেতুটি তৈরি করতে অর্থ সাহায্য করেছিলেন ভাস্তারার জমিদার ছকুরাম সিংহ। ইতিহাসের পথ বেয়ে গঙ্গার জল যতই দক্ষিণপথগামী হয়েছে ততই এ অঞ্চলের ভৌগলিক, অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে মানুষের জীবনশৈলীরও। অতিপ্রাচীন এই জনপদে ইতিহাসের নিয়মেই যেমন বেশ কিছু স্থাপত্য ধ্বংস হয়েছে, তেমনি নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে।  

১৯৬২ সালে  মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় এর উদ্যোগে এ অঞ্চলে তৈরি হয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রথমে ব্যান্ডেলে তৈরি হওয়ার কথা আলোচিত হলেও পরে জলের প্রাচুর্যের কারনে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয় ত্রিবেণীতে।  সেসময় ভারতে  নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন কে গোলব্রেথ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেছিলেন।  মার্কিন সংস্থা হেস্টিংস হাউজ এটি নির্মাণ করেছিল।

একসময় এই অঞ্চলে ভারতের সর্ব বৃহৎ টায়ার কারখানাও তৈরি করেছিলেন ডানলপ কতৃপক্ষ। যদিও সে কারখানা আজ বন্ধ । সে যাই হোক এবার চলুন ঘুরে আসি ত্রিবেণীর একটি স্টেশন পর ডুমুরদহ গ্রামে।  এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন  ভক্তি আন্দোলনের বাংলার পুরোধা সাধক শ্রী শ্রী সীতারাম দাস ওঙ্কারনাথ। সারা ভারত জুড়ে সীতারাম অসংখ্য মঠ ও মন্দির গড়ে "হরে কৃষ্ণ" মহামন্ত্রের প্রচার করেছিলেন। 

দেশে যখন ধর্মের উপর অধর্মের শাসন শুরু হয়, তখন আপামর জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য লোকশিক্ষকগণের আবির্ভাব ঘটে। সেরকমই সময় ছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ। ১২৯৮ সনের (১৮৯১ খ্রীঃ) ৬ ফাল্গুন, এই দেবশিশুর আবির্ভাব হয় হুগলি জেলার ডুমুরদহ গ্রামে। পিতা প্রাণহরি চট্টোপাধ্যায় ছেলের নাম রেখেছিলেন প্রবোধচন্দ্র। মাতা মালাবতী দেবীর কোল আলো করে কৃষ্ণপঞ্চমী তিথিতে প্রবোধচন্দ্র জন্মানোর পর  সাধারণ আর পাঁচটা গ্রামের ছেলের মতই মানুষ হতে থাকেন।

ছোট বেলা থেকেই পড়াশুনায় খুব আগ্রহ ছিল প্রবোধচন্দ্রের। অজানাকে জানতে চাওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা প্রশ্নবাণ হয়ে তাঁর আশেপাশের লোকজনকে ব্যাতিব্যস্ত করে তুলত। কালক্রমে স্মৃতিভূষণ দাশরথি মুখোপাধ্যায়ের চতুষ্পাঠীতে শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় পান্ডিত্য অর্জন করলেন প্রবোধচন্দ্র। শাস্ত্রের সাগরে অবগাহন করতে করতে যখন তিনি বিশ্ব-ব্রম্ভান্ডের সৃষ্টি রহস্য খুঁজে চলেছেন, তখন লোকান্তরিত হলেন পিতা প্রাণহরি। দিশহারা প্রবোধচন্দ্র তাঁর শিক্ষাগুরু ও সাধক দাশরথি মুখোপাধ্যায়ের কাছে প্রাণের শান্তির জন্য হাজির হলেন। অবশেষে ১৩১৯ সালের (১৯১২ খ্রীঃ) ২৯ পৌষ, মকর সংক্রান্তি তিথিতে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থল ত্রিবেনীতে সাধক দাশরথি প্রবোধকে ‘রামনাম’ মন্ত্রে দীক্ষা দিলেন। শিক্ষাগুরু হলেন দীক্ষাগুরু। প্রবোধচন্দ্রের নাম হলো ‘সীতারাম’।

সর্বক্ষণ রামনাম জপে মগ্ন থাকতেন প্রবোধচন্দ্র। রামনাম জপ করতে করতে  ডুবে যেতেন ভাবসাগরে তখন প্রবোধচন্দ্রের কানে ভেসে আসত ওঙ্কারধ্বনি। 

        হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ  কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হর

        হরে রাম  হরে রাম  রাম রাম  হরে হরে

লোকশ্রুতি, ধীরে ধীরে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন সীতারাম। তবে কোনদিনই উনি সেই শক্তির অপব্যবহার করেননি।  প্রেমময় ঠাকুর বলছিলেন, ” ঘরে বসেই নাম জপ করে সংসারটাকে আনন্দধামে পরিণত করো।” শুধু ধর্মের বাণী মুখে প্রচার করেই তিনি ক্ষান্ত থাকেন নি, সুদীর্ঘ সময় ধরে লিখে গিয়েছেন ১৫০ টির বেশি গ্রন্থ । সারা দেশে তিন শতাধিক আশ্রম, মঠ, মন্দির গড়ে উঠেছে আজ সীতারামের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। 

সীতারামের আশ্রমের অনতিদূরে ডুমুরদহ গ্রামে গঙ্গা তীরে আরো একটি আশ্রম আছে। এই আশ্রম উত্তম আশ্রম নামে পরিচিত। আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী উত্তমানন্দের নাম অনুসারেই আশ্রমের নামকরণ। গঙ্গা তীরে মনমুগ্ধকর শান্ত পরিবেশে এই আশ্রমটি ঠিক যেন তপবনস্বরূপ। এই আশ্রমের বর্তমান সর্বাধিস স্বামী অভয়ানন্দজী মহারাজ। আসুন বাঁশবেড়িয়া, ডুমুরদহ, ত্রিবেণীর জনপদে। এপথ মন্দ লাগবে না। (ক্রমশঃ) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours